Wednesday 21 November 2012

Suswastho: Dengue by Juin Dutta Ghosh

ডেঙ্গু
জুঁই দত্ত ঘোষ


ডেঙ্গু একটি সংক্রামক রোগ এবং মশা- এই সংক্রামণের একমাত্র কারণ। ধুম দিয়ে জ্বর আসা, সঙ্গে সর্বাঙ্গে ব্যাথা আর প্রচণ্ড মাথাব্যাথা এই রোগের প্রধান লক্ষণ। এই সাধারন রোগটি প্রায়শই মহামারীর আকার ধারন করে। বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তর ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে এই রোগ (হাড্ডি-তোর -বুখার) তার মারন ক্ষমতার নিদর্শন দিয়েছে। এই রোগের প্রকোপ বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের উপর বেশি হয়। ইউরোপ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। প্রায় কোটি লোক প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় থেকে ৩০ শতাংশ রোগির মৃত্যু ঘটে থাকে।

কারন:
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যার প্রধান বাহক মশা। এই রোগের ভাইরাস প্রধানত প্রকারের হয়। এডিস নামক একপ্রকারের মশা এর বাহক।

সংক্রমণ:
যেকোনো বয়সের লোকের- এই রোগ হতে পারে। ম্যালেরিয়ার মতই এই রোগের সংক্রমন। এডিস মশারা দিনের বেলাতেও কামড়াতে পারে।
বর্ষাকালে বা ঠিক তার পরে এই রোগের সংক্রমন বেড়ে যায়। কোন এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে যখন এই মশারা কামড়ায় তখন ডেঙ্গুর ভাইরাস মশার শরীরে প্রবেশ করে। কিছুদিন এই ভাইরাস মশার শরীরে থাকে এবং নিজের কিছু বিবর্তন ঘটায়। এরপর মশা যখন কোন সুস্থ মানুষকে আক্রমন করে তখন ভাইরাস তার শরীরে অনুপ্রবেশ করে। মশার কামড় থেকে ডেঙ্গুর বাহ্যিক প্রকাশের মাঝে সাধারানত - দিন সময়ের তফাৎ থাকে। এই সময়টাকে ইনকিউবিসন পিরিয়ড বলা হয়। এই সময়টা থেকে ১০ দিনের মধ্যে হতে পারে

লক্ষণ:
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ তার প্রকারের উপর নির্ভর করে। ডেঙ্গু রোগ প্রকারের হয়ে থাকে () ক্লাসিক্যাল বা সাধারন ডেঙ্গু, () হেমোর্যাজিক ডেঙ্গু জ্বর (DHF) এবং ()ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS) একটা জিনিস আমাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে যে সাধারন ডেঙ্গু আমাদের কাহিল করে দেয় ঠিকই কিন্তু তা ভয়ঙ্কর নয়, অপরদিকে বাকি দুই ডেঙ্গুর প্রকারের তাৎক্ষনিক চিকিৎসা শুরু না করালে এর পরিনাম ভয়াবহ হতেও পারে। এর জন্য কোন চিকিৎসা শুরুর আগের ডেঙ্গুর প্রকার নির্ধারন করা খুব জরুরি।

ক্লাসিক্যাল বা সাধারন ডেঙ্গুর লক্ষণ:
হঠাৎ করে ধুম জ্বর আসা এবং সঙ্গে
প্রচণ্ড ঠাণ্ডার অনুভুতি।
প্রচণ্ড মাথাব্যথা সঙ্গে মাস-পেশিতে আর জোড়ের ব্যাথা।
আইবলের পিছনে ব্যাথা, বিশেষ করে যখন চোখের উপরে হাত চাপা দেওয়া
হয় বা আইবল যখন ঘোরানো হয়।
দুর্বলতা, ক্ষুধা কমে যাওয়া আর সঙ্গে বমি বমি ভাব।
মুখ বিস্বাদ হয়ে যাওয়া। পেটে এবং গলায় ব্যাথা।
গোলাপি লাল ্যাশ চামড়ায় আসা।
(সাধারানত - দিন ভোগার পর রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ অনুভব করতে থাকেন)

হেমোর্যাজিক ডেঙ্গু জ্বর (DHF) লক্ষণ:
উপরের সমস্ত লক্ষনের সঙ্গে নিচের যে কোন একটি বা সব লক্ষণ দেখা যায় তাহলে তাকে হেমোর্যাজিক ডেঙ্গু জ্বর বলা হয়।
নাক বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত।
বমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত।
চামড়ার উপর রক্ত জমে গাঢ় নীলচেকালো ছোট বা বড় প্যাচেস তৈরি হওয়া।

ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS) লক্ষণঃ
উপরের দুটি রোগের লক্ষণের সঙ্গে যদি নিচের লক্ষণ গুলো জুড়ে যায় তাহলে তাকে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বলে এতে রোগীশক্‌’ বা ঘোরের মধ্যে থাকে
রোগী সর্বদা অস্থির হয়ে পড়বে এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর থাকা সত্তেও তার চামড়ায় শীতলতা অনুভুত হবে।
রোগী জ্ঞান হারাতে পারে।
রোগীর পাল্ রেট খুব দুর্বল এবং বেড়ে যাবে।
রক্তচাপও কমে যাবে।

চিকিৎসাঃ
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে সত্ত্বর যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাধারানত এই রোগে রক্তের এলিজা(ELISA) টেস্ট করিয়ে নিতে বলা হয় এছাড়া রক্তের হিমোগ্লোবিন (HB), প্লেটলেট (Platelet), টোটাল কাউন্ট (TC) এবং কেমিস্ট্রি হাইড্রেসন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য।

রোগীর শরীরে জলের মাত্রা বজায় রাখা খুব দরকার, কমপক্ষে - লিটার প্রতিদিন। ফলের রস, গ্লুকোজের জল, সূপ ইত্যাদিও পানীয় হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপের ট্যাবলেট নেওয়া যেতে পারে। কখনোই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ নেবেন না।
ফোলিক অ্যাসিড এবং মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট দৈনিক ওষুধ।
যদি প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায় তাহলে রোগীর শরীরে প্লেটলেট বাইরে থেকে দেওয়া উচিৎ, নতুবা রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যাবে।
যথেষ্ট বিশ্রাম রোগীর দরকার।
যে সমস্ত খাবার বেশি এনার্জি দেয় তার অগ্রাধিকার থাকা দরকার। পেঁপে একটা আবশ্যিক খাবার ডেঙ্গু রোগীদের।
যেকোনো ওষুধ এবং তার মাপ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহন করবেন না

সাবধানতা:
ডেঙ্গুর বাহক মশা। তাই খুব সাধারন ভাবে মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণই এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। ঘরের আশেপাশে জল জমতে দেবেন না। নালা নর্দমা যদি খোলা হয় তাহলে নিয়মিত মশা মারার ওষুধ ছড়ান। আশেপাশে ডেঙ্গুর প্রকোপের খবর পেলে নিজের ঘরে মশা মারার ওষুধের স্প্রে করিয়ে নিন। নিজেকে মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যতটা সম্ভব উপায় করুন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সর্বদা মশারীর ভিতরে রাখার চেষ্টা করুন।





Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine.

No comments:

Post a Comment