Wednesday 21 November 2012

Prasongik: RTI 2 by Dr. Abhijit Guha

তথ্য জানার অধিকার ()
ডঃ অভিজিত গুহ

তথ্য জানার অধিকার কিছু চমকপ্রদ ঘটনাঃ
এই আইনটি সম্বন্ধে সাধারন জনগণ তথা শিক্ষিত নাগরিকদের মধ্যে ধারনা আশানুরূপ নয়। অনেকে মনে করেন, এই আইনটির সাহায্য নিয়ে আদৌ কোনও লাভ হবে কি? বা তথ্য জেনে আমার লাভ কি? ইত্যাদি। কিন্তু এই ধারনাগুলি ঠিক নয়। তথ্য জানার অধিকার আইন নাগরিকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তবে আপনার আবেদনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আধিকারিক কে বা কারা, কাজ কতদূর এগোল, কত টাকা খরচ হল, ঠিক সময়ে কাজ টা শেষ না হলে তার কারন তথ্য জানতে এই আইন সাহায্য করতে পারে এই উপরিউক্ত তথ্যগুলি যখনই কোনও জনগণ জানতে চাইবেন এবং সেই তথ্য জানানো যদি বাধ্যতামূলক হয় তবে তখনই সংশ্লিষ্ট আধিকারিক কর্মীরা সচেতন হয়ে উঠবেন। যদি ওদের কাজের মধ্যে কোনও দুর্নীতি লুকিয়ে থাকে তবে ওরা নড়েচড়ে বসবেন।

আসলে তথ্য জানার দরখাস্ত গুলি হল নাগরিকের তরফ থেকে উচ্চতম আধিকারিকদের প্রতি কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ ছুঁড়ে দেওয়া। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি চমকপ্রদ ঘটনা উদাহরণস্বরূপ দেওয়া হল

বিহারের মধুবনী জেলায় ৭০ বছর বয়সী এক রিকশাচালক দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতেন। তিনি নিজের বাড়ি তৈরি করার জন্যইন্দিরা আবাস যোজনাপ্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী সরকারী অর্থ সাহায্য চেয়ে দরখাস্ত করেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত তার ওই দরখাস্ত অনুমোদন করা সত্ত্বেও বছর পরেও তিনি সরকারী নির্দিষ্ট দপ্তর থেকে কোনও উত্তর পান নি উল্টে এই সরকারী অর্থ সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সরকারী আধিকারিক ওই রিকশাচালকের কাছে হাজার টাকা উৎকোচ চেয়ে বসে। তখন ওই রিকশাচালক নির্দিষ্ট তথ্য আধিকারিকের কাছে ইন্দিরা আবাস যোজনা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু তথ্য চেয়ে একটি দরখাস্ত করেন। দরখাস্তটি জমা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই রিকশাচালক ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ১৫ হাজার টাকা সরকারী অনুদান পেয়ে যান।

আসামের দারং জেলার এক নাগরিক জানতে পারেন যে রাজ্য সরকার দরিদ্র পরিবারগুলিকে বিনা পয়সায় রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার দিচ্ছেন। পরে একটি ছেলে এসে আবার খবর দেয় উক্ত সিলিন্ডার পেতে গেলে ৫০০ টাকা দিতে হবে। কিন্তু ওই দরিদ্র ব্যাক্তির কাছে টাকা ছিল না। কিছুদিন বাদে উনি জানতে পারেন ওনার গ্রামের কিছু লোক বিনা পয়সায় গ্যাস সিলিন্ডার পেয়েছে।ইতিমধ্যে আমাদের ব্যক্তি তথ্য জানার অধিকার আইন সম্বন্ধে জানতে পারেন। এই আইন অনুযায়ী উনি একটি আবেদনপত্র জমা দেন এই আবেদনপত্রের মাধ্যমে কারা বিনাপয়সায় নির্দিষ্ট দপ্তর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার পেয়েছেন তাদের নাম ঠিকানা জানতে চান। উনি উত্তরপত্রের মাধ্যমে তথ্যগুলো পেয়ে উচ্চতর আধিকারিকের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সাথে সাথে উক্ত ব্যক্তিসহ বাকিসকলে বিনাপয়সায় গ্যাস সিলিন্ডার পেয়ে যান। সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিপরায়ণ আধিকারিকটি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন অন্যদিকে অভিযোগকারী ওই এলাকার ঘরে ঘরে আলোচিত একটি চরিত্র হয়ে ওঠেন।

ভারত সরকারের প্রকাশিত বই Right to Information Act 2005:A Primer(2007) তে আরও এমন তথ্যগুলো পাওয়া যায়।

তথ্য জানার অধিকার আইনের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটতে পারে। সমস্যা হল বেশির ভাগ মানুষ এমনকি শিক্ষিতরাও সম্পর্কে খুব কমই জানেন। এসব করে কি হবে? কার কাছে জানতে চাইব? না জানালে কি করব? এসব অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যপার! এমন হতাশ করা প্রশ্নের ভিড়ে আমরা হারিয়ে যাই। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় কয়েক দশক পেরিয়ে এমন একটা গণতান্ত্রিক আইন আমরা পেয়েছি। আর এটা পাওয়া গেছে বহু ব্যক্তির স্বার্থত্যাগ, নিরলস সংগ্রামের নির্বাচিত সরকারগুলির উপর চাপ সৃষ্টির ফলস্বরূপ হিসেবে। তাই এই সকল নাগরিকেরা স্বাধীনতা উত্তর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী। সাধারন মানুষের মঙ্গলের জন্য, দুর্নীতি কমাবার জন্য, সৎ স্বচ্ছ প্রশাসন চালানোর স্বার্থে এই আন্দোলন করেছেন। এখন এদের কথা পাঠ্যবইতে অন্তর্গত না হলেও ভবিষ্যতে হয়ত হবে। আর এমন একটা আইন আমরা ব্যবহার না করে যদি পাড়ায় বা চায়ের আড্ডায় দুর্নীতিপরায়ণ আধিকারিক, রাজনৈতিক দল বা নেতৃবর্গের মুণ্ডপাত করি তবে লাভটা কার হবে? তাই যত বেশি বেশি করে এই আইন ব্যবহার করে আবেদনপত্র জমা দেব ততই রাজনৈতিক নেতৃবর্গ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নড়ে চড়ে বসবেন, দুর্নীতিপরায়ণ ক্ষমতালোভী আধিকারিকরা তত কম ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবে। সামগ্রিক সাধারন নাগরিকদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ অর্থবহ হয়ে উঠবে।

অনেক ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনা ...
দিল্লি একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই রাজ্যে উক্ত আইন ২০০১ থেকে ছিল। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২০০২ সালে এই আইন ব্যবহার করে পূর্ব দিল্লির দুটি কলোনির কাজকর্মের খবর জানতে চেয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বেশ কিছুদিন ধরে ৬৮ টি পূর্তকাজের অনুসন্ধান করছিল। ওদের কাছে যে কাগজকলমে দেখানো তথ্য আসছিল সেগুলো এলাকার মানুষের দেওয়া খবরের সঙ্গে অনেক অমিল গরমিলের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। খতায় কলমে ২৯ টি জল তোলার পাম্প ২৫ টি রাস্তার ড্রেনের গ্রেটিং লাগানোর জন্য টাকা মেটানো হয়েছে দেখালেও এলাকার মানুষ দেওয়া তথ্যে দেখা যায় ১৪ টি পাম্প টি গ্রেটিং এর কাজ হয়েছে। এই কাজের জন্য বরাদ্দ . কোটি টাকার মধ্যে ৭০ লক্ষ টাকার কোনও হিসেব নেই। পরবর্তী কালে দিল্লি হাইকোর্ট পুলিশ কে এই বিষয়ে তদন্তের দায়ভার দেয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি পুরকমিশনার প্রশাসনিক সংস্কার সচিবের কাছে উক্ত অপরাধের জন্য শাস্তি দাবি করেন। এর ফলস্বরূপ এলাকার পুরপিতা দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারকে প্রতিটি কাজের হিসেব নকশার কপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তদারকি করার আদেশ দেন। এলাকার মানুষকে কাজকর্মের ভুলভ্রান্তি সনাক্ত করার অধিকার দেন এবং ভুলভ্রান্তি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থ প্রদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এই বিষয়ে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে নিম্নলিখিত ওয়েবসাইটেঃ-





Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine.

No comments:

Post a Comment