Wednesday 21 November 2012

Anyo Pujo2 by Poushali Paul


অন্য পূজো ()
পৌষালী পাল

ছোট্ট মেয়েটা উঠেছে নতুন ক্লাস এ
ক্লাস রুম এ বসা ভালো মেয়েদের পাশে
আজও আকাশেতে নীল তারাটা হাসে
গতবারের অন্য পূজোর পর।

তোমাদের মনে আছে সেই ছোট্ট মেয়েটাকে?
যে কিনা তার বাবার কাছে, অন্য পূজোর ধর্না দিয়েছিলো?
তোমাদের ঈশ্বর কেড়ে নিয়েছিল তার আশ্বাস।
মেয়েটা ছোট তাই বুঝতে পারেনি—
আকাশেতে যারা কাজ কাজ নিয়ে চলে যায়,
তারা আর ফেরেনা।
বাবা তো কখনও অত দেরি করেনা!
ঠাকুরের প্রাসাদে বুঝি বা অনেক কাজ
তাদের ছোট্ট ঘরটার মত
খসে খসে পড়ছে হয়ত চুন, বালি...
তার বাবা সেখানে পাকা দেওয়াল তুলছে।

ফিরবে ফিরবে।
মা কি কখনও মিথ্যে বলতে পারে?
ছোট্ট মেয়েটা চুপটি করে শোনে,
ঠাকুরের ইমারত বানানোর গল্প।
আর ঠাকুর বাবাকে তোর না আসতে দিলে,
আমিই যাব ফিরিয়ে আনতে”—মা বলেছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে মেয়েটা,
ভাগ্যিস মা কোমর বেঁধেছে!

এবার খুব গরম পড়েছে
ওর মা তাও কাজ নিয়েছে
আরও টে বাড়িতে।
শুধু রবিবার মা দুপুর টা থাকে।
সেদিন দুজনে একসাথে ভাত খায়।

এবার গরমের ছুটিটা দিদিমনি
আরও চোদ্দ দিন বাড়িয়ে দিয়েছে।
বলেছে “ সোনা, বাড়িতে বসে পড়াশোনা করবি”।
সেবার রেজাল্ট বেরোবার সময়
মা কে ডেকে কীসব বলেছিল।
ছোট্ট মেয়েটা শুধু তিনটে শব্দ বুঝেছে,
বুঝলেন, ওর হবে”
কে জানে কি হবে?

আচ্ছা, ওর যেমন ছুটি পড়েছে,
মায়ের কেন পড়েনা?
মা ওঠে খুব সকালে।
উনুনে আঁচ দিয়ে ভাত চড়ায়।
বিপিএল কার্ড এ তোলা কেরোসিন এ
চড়ায় ডাল।
আর দুই ঢোঁক জল খেয়েই কাজে চলে যায়।

মেয়েটা সারাদিন একা থাকে।
বই পড়ে, ছবি আঁকে।
আগে ও দেওয়াল এ রঙ পেন্সিল বোলাত।
ওপর তলার জেঠিমা এসে
বারণ করে গেছে।
মা তারপর কোথা থেকে কিছু নয়
দুম করে ওর পিঠে
বসিয়ে দিয়েছে ঘা কতক।
কান্না সামলে ও নিজেই বুঝতে শিখেছে।
এখন আর দেওয়াল এ আঁচড় কাটে না।

ওদের ঘরে একটা কালো ফ্যান আছে।
টুল এর উপর রাখা।
আজকাল সেটা মাঝে মাঝেই
শব্দ করতে করতে বন্ধ হয়ে যায়।
পরশু রাতে গরমে ঘুম ভেঙে গেছিল।
মা পাশে নেই কেন?
চেঁচিয়ে উঠেছিল তারপর, মা কোথায়?
অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে ছুঁয়ে ফেলল তারপর।
এই তো মা, অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
আজকাল মা খুব গভীর ঘুম এ থাকে।
একবার ডাকলে শুনতে পায় না।

গতবারের অন্য পূজোর পর,
মা তার প্রায়ই কাঁদে একা একা।
বাবার গল্প বলে আর কাঁদে।
ও কিছুতেই বোঝাতে পারে না।
বাবা তো ফিরবেই।
মা আনতে গেলে কি, ঠাকুর বাবাকে আটকে রাখতে পারবে?

ওর মা এখন বড্ড কালো হয়ে গেছে।
কালো আর রোগাও।
মিতু মাসিকেও সেদিন বলতে শুনল,
মণি, এত কাজ নিস না।
শরীরের দিকে নজর দে।
মেয়েটাকে তো দেখবি নাকি??”
মা মুখ টিপে হাসে। শুধু হাসে।
মার হাসিটাও কি দিন দিন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে?
তাও ভালো,
মা তার হাসতে ভোলে নি...




Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine.

1 comment: