Wednesday, 21 November 2012

Bondhutto by Debtanu Das


বন্ধুত্তের সংজ্ঞা
দেবতানু দাস

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কটির নাম বন্ধুত্ব’- এরিস্টটলের এই চির সত্য বাক্যটির কথা মনে করিয়ে দিতেই যেন প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে বন্ধু দিবস।

বন্ধু’ শব্দটা হয়তো ছোট। কিন্তু এর গভীরতা বা ব্যাপ্তি কতটা, তা তখনই বোঝা যায় যখন জীবনে খুঁজে পাওয়া যায় সত্যিকারের একজন বন্ধু। কিন্তু এই ফেসবুক, স্কাইপে, ম্যাসেঞ্জার আর গুগল প্লাসের ভার্চুয়াল যুগে ভুরি ভুরি বন্ধুর ভিড়ে সেই সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়াটা একটুখানি দুষ্কর। তবে কাজটা সহজ হতে পারে, যদি আমরা জানতে পারি, বন্ধু আর বন্ধুত্বটা আসলে কী।

বন্ধুত্বকে ব্যাখ্যা করে শেলব্যার্গ বলছেন, “বন্ধু তাকেই বলা যেতে পারে যে বন্ধুর সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবে৷ সে সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা থাকবে বটে, কিন্তু সে ভালোবাসা হবে বিশেষ, যৌক্তিক, বিশেষ মাত্রার৷ একজন বন্ধুর ওপর আরেকজন নির্ভর করতে পারবে, বিশ্বাস করতে পারবে৷”

অনেকে বলে থাকেন, “এই বন্ধু দিবস কি শুধুই এক দিনের জন্য বন্ধুকে স্মরণ করা, কাছে পাওয়া? এর মাঝেই কি বন্ধুত্ব সীমাবদ্ধ?”

এর উত্তরে বলা যায়, বন্ধু দিবস হচ্ছে বন্ধুকে বিশেষভাবে স্মরণ করার জন্য। এই বিশেষ সম্পর্ককে সম্মান প্রদর্শনের জন্য। বন্ধুর সঙ্গে দিনটি উপভোগ করার জন্য।

বন্ধুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ হার্ভার্ট বলেন, “একজন বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না।” তার মানে, এই আয়নাতে প্রতিমুহূর্তে সে নিজেকে দেখবে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মন্তব্য, বন্ধুত্বটা হওয়া চাই হাত আর চোখের সম্পর্কের মতো। হাতে ব্যথা লাগলে চোখে জল। আর চোখে যদি জল ঝরে, তবে হাত এগিয়ে যায় তা মুছে দিতে।

তাই এই বন্ধু দিবসে প্রত্যাশা এই যে, নিজের কাছের বন্ধুটির চোখে নিজেকে আবার নতুন করে সৃষ্টি করি। বন্ধুর জন্যই থাকুক এই দিনটি। চলুন, এই একটি দিন পুরানো সেই বন্ধুটিকে গিয়ে বলি, “তোকে অনেক মিস করছি রে। শুভ বন্ধু দিবস।” এরপর দেখুন, বন্ধুর চোখে ছল ছল চোখে ভেসে উঠবে শুধু আপনার স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবিটি, যেখানে দেখা যাবে নিঃশর্ত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আস্থা আর অগাধ বিশ্বাস।

বন্ধু তো সবাই, সুহৃদ কোথায়?

আপনার বন্ধুর সংখ্যা ঠিক কত? ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যাবে, সেখানে নিদেনপক্ষে দু’শো মুখের সারি৷ এরা সবাই বন্ধু৷ কিন্তু সত্যিই কি বন্ধু? জার্মান মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, তিনের বেশি বন্ধুসংখ্যা হওয়া অসম্ভব৷ তাহলে ব্যাপারটা আসলে কী?

ব্যাপারটা হলো আসলে গুরুচরণ৷ এই ফেসবুকের জগতে মানুষ বড্ড বেশি বন্ধুবৎসল হয়ে উঠেছে৷ কুমিল্লার গণ্ডগ্রাম হোক বা নিউইয়র্ক৷ মিসিসিপির চাষি বা মেদিনীপুরের জোতদার, সবাই এখন এই নেট জগতে ফেসবুকে হাজির৷ চকচকে ঝকঝকে ফেসবুক প্রোফাইলে সবাই বেশ হাসিমুখে কেবল বন্ধু খুঁজে চলেছে৷ এ যেন এক হাওয়ায় ভাসা জগৎ৷ সেখানে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, পুত্র কন্যা, কেউই নেই৷ সবাই বন্ধু৷ সবাই সুহৃদ৷

কিন্তু এই যে পিতা-পুত্র থেকে ভাই-বোন, সব রক্ত সম্পর্ক মুছে, সব ধরনের আত্মীয়তা ভুলে গিয়ে সবাই বন্ধু, এটা কি সত্যিই সম্ভব? জার্মান মনস্তত্ববিদ মিশায়েল শেলব্যার্গের মতে, এটা অসম্ভব ব্যাপার৷ কারণ, সচরাচর মানুষের প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা তিনের বেশি হয় না৷

তবে তার আগে জানতে হবে, বন্ধুত্ব কাকে বলে

বন্ধুত্ব বিষয়টাকে শেলব্যার্গ ব্যাখ্যা করে বলছেন, বন্ধু তাকেই বলা যেতে পারে, যে বন্ধুর সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবে৷ সে সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা থাকবে বটে, কিন্তু সে ভালোবাসা হবে বিশেষ যৌক্তিক, বিশেষ মাত্রার। বন্ধুর ওপরে আরেকজন নির্ভর করতে পারবে, বিশেষ প্রয়োজন বিশ্বস্ততারও৷ এইসব শর্তাবলি কি ফেসবুকের বন্ধুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? এ প্রশ্নটা কিন্তু এখন খুবই দামি৷

এর জবাবে আরেক জার্মান মনস্তত্ববিদ ক্রিস্টা রোট জাখেনহাইমের ব্যাখ্যা আবার আরেকরকম৷ জার্মান মনস্তত্ত্ব সংগঠনের প্রধান ক্রিস্টা বলছেন, বন্ধু মানে সেই বিশেষ মানুষটি, যার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক আছে এবং থাকছে৷ যে ঘনিষ্ঠতার সবকিছু একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবে৷ যাকে যেকোনো সময়, যেকোন সমস্যা বা আনন্দের ভাগীদার করা যাবে৷ তবেই তাকে বলা যেতে পারে বন্ধু৷

কিন্তু এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, যখন হাতে-কানে মোবাইল, চোখে ফেসবুক, মনে নানান আবেগের চলাফেরা, সেই ভার্চুয়ালিটিতে বাস্তব বন্ধুকে পাওয়া তো যায়ই না, বরং রাজ্যের প্রত্যাশা তৈরি হতে থাকে মানুষের মধ্যে৷ সেই প্রত্যাশায় জল ঢেলে দেয় অবশেষে সেই ভার্চুয়ালিটিই৷ অর্থাৎ বন্ধুর কর্তব্য কেউ পালন করে না, কিন্তু বন্ধু বলে নিজেকে জাহির করে যায় সারাক্ষণ৷

আধুনিকতার এ এক ঘোর সমস্যা৷ বন্ধু তো সবাই, সুহৃদ কোথায়?





Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine.

No comments:

Post a Comment