।। সাইড হিরো ।।
~ সৌরভ
দাসশর্মা ~
আমি রৌনক, এই গল্পের, ইয়ে, মানে
সাইড হিরো। তবে শুধু এই গল্পটাই নয়, আমার লাইফেও আমি সাইড হিরো। আমার জন্মের আগে অবধি
সবার ধারণা ছিলো, নিজের লাইফ স্টোরির হিরো
সে নিজেই, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে? বেপাড়ার
ক্রিকেট ম্যাচ থেকে পাড়ার ফাংশান, স্কুলের স্পোর্টস থেকে কোচিং-এ ইংলিশ টেস্ট, সব বিষয়েই আমি, ওয়ান এ্যান্ড ওনলি সাইড হিরো।
ছোটোবেলা থেকেই আমি, যাকে বলে সর্বঘটে কাঁঠালি কলা। হেন কোনো কাজ নেই যেখানে
আমি অ্যাক্টিভ্লি পার্টিসিপেট করি না। সেবার আমারই এক অতি ঘনিষ্ট কলেজের বন্ধুর পাড়ার একটা কালচারাল ইভেন্টে আগ বাড়িয়ে
ফোঁকড়দালালি করছি, আর চেঁচিয়ে ফাটিয়ে দিচ্ছি,
এমনকি আশেপাশের ইলেক্ট্রিক তার এবং গাছের ডালে বসা কাকগুলোও আমার সাপোর্টে
গলাবাজি করছে, এমন ব্রহ্ম মুহুর্তে ইমনের সাথে আমার প্রথম শুভদৃষ্টি
হলো। কালো ফ্রেমের চশমা, সাদা সালোয়ার, আর গোলাপী ওড়নায় চেনা জানা কোনো হিরোইনের
সাথে মিল খুঁজে পেলাম না, কিন্তু প্রথম দর্শনেই ক্লিন বোল্ড। পাড়ার স্টেজ, সাইকেল রিক্সার হর্ন,
জনগনের চেঁচামিচি, এই সব চোখের সামনে থেকে মুছে
গেলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখি, আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা এমন একটা জায়গায়, যেখানে
ঝাড়বাতি থেকে শুরু করে দোলনা সবই সাদা রঙের। চতুর্দিকে সাদা রঙের
বিশাল বিশাল পর্দা ঝুলছে। ঠিক দুর্গাপুজোর মতো। আর জায়গায় জায়গায় উদ্বাস্তুর মতো কিছু লাল রঙের হার্ট শ্যেপড্ বেলুন মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আছে। মাইনাস এইট এক্স স্পীডে
সুদুর এক কোণ থেকে হাসি হাসি মুখ করে দুলকি চালে আমার নায়িকা এগিয়ে আসছে, হাল্কা হাল্কা মিউজিকও কানে আসতে শুরু করেছে। আমিও স্লো মোশনে হাতটা ধরে একটা রোম্যান্টিক গান সদ্য শুরু করতে যাব, হঠাৎ চটকা ভেঙে গেলো কড়া গলার আওয়াজে-
এসব কি হচ্ছেটা কি?
মুহুর্তের জন্য ছিটকে গেলাম, পরক্ষনেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গলাটা একটু খাঁকরে নিয়ে উত্তর দিলাম
প্রতিযোগীদের এখানে ঢোকা নিষেধ। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে
ইমন আমাকে রীতিমত পাত্তা না দিয়ে অন্য আরেক জন স্থানীয় কর্ম্মকর্তার সাথে আড়ালে গিয়ে
কিসব ফিসফিসিয়ে কথা সেরে নিলো। আর আমিও এই ফাঁকে ভীষণ জরুরি কাজটা
সেরে নিলাম। মানে নাম ধাম ইত্যাদি। ইমন রায় নাকি ঘ্যামা
নাচে। কানে শোনার পর, সন্ধ্যে
বেলায় রীতিমতো দর্শকাসনে বসে চক্ষু স্বার্থকের পালাটাও সেরে নিলাম। ক্লাসিকাল গানের সাথে ডিসকো, ভাবা যায়!
এই ঘটনার পরের দিন থেকে, প্রায়ই আমি ইমনদের পাড়ায়
ঘোরাফেরা শুরু করে দিলাম, এবং কোচিং ক্লাস থেকে কলেজ অবধি ওকে
ধাওয়া করে ফেললাম। আমার এক প্রচণ্ড অন্তরঙ্গ বন্ধু সুজয় এবং তার এক বিশেষ
বান্ধবী কেয়া আমায় সাহায্য করার জন্য বেশ উদগ্রীব দেখে চোখ টোখ বন্ধ করে প্রথমটায় বেশ
কয়েকবার আপ্লুত বোধ করছিলাম, তবে অচিরেই বুঝলাম
আমায় সাহায্য করার চেয়ে ফ্রী অফ কস্ট প্রেম করাতেই ওদের বেশী উৎসাহ। ওদের সাথে আনার উদ্দেশ্য ছিলো আমার মনোবল বৃদ্ধি করা, যাতে বিপদে আপদে কাজে লাগে। কিন্তু আসলে যেটা বৃদ্ধি
পেতো, সেটা ছিলো ওদের বোকা বোকা ন্যাকামি ভরা সংলাপের
স্থায়িত্ব। কখনো ওদের কথা মতো ইমনের কলেজ ছুটির প্রায় ঘন্টা খানেক
আগে পৌঁছে গিয়ে শেষমেশ সামনের পার্কে বসে বোকার মতো মুখ করে চেয়ে চেয়ে ওদের প্রেম করা
দেখতাম, আর তারপর ওদের একলা ফেলে রেখে নিজেই ইমনের পিছনে
ধাওয়া করতাম। অথবা কখনো, আমি
ঠায় দাঁড়িয়ে কোচিং ক্লাসের বাইরে মশার কামড় খেয়ে গুনগুন করে ‘তোমার দেখা নাই’ আওড়াচ্ছি, এদিকে
তারা ঘণ্টা খানেকের জন্য হাওয়া, দশ মিনিট আসছি বলে। নেহাৎ কেয়া ইমনের কি যেন তুতো বন্ধু হয়, তাই
এই সব ছোটোখাটো মিস্হ্যাপকে বিশেষ পাত্তা দিতাম না। আর তাছাড়া, ইমনের যাবতীয় নিউজ আমি কেয়ার মারফৎই
পেতাম।
তো এরকম কিছুদিন চলার পর অবশেষে ইমনকে
পটিয়ে ফেললাম। কিন্তু মাস ছ’য়েকের
বেশী সেই প্রেম টিকলো না, আমারই পরোপকারীতার দোষে। প্রায়শই বন্ধুবান্ধবদের এ ট্যু জ়েড সমস্যার সমাধানের জন্য এদিক ওদিক ছোটাছুটি
করতাম, আর ফাঁকি যেতো ইমনের দিকটা। সেইসব অভাব অভিযোগ নিয়ে প্রায়ই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে তুফান মেল ছুটত, আর আমি কোনো অবাধ্য জীব না পোষা মানুষ, সেই
সব সহ্য করি কি করে? দিলাম ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে। সামনাসামনি ইমনকে কিছু বলার দুঃসাহস আমার কোনোদিনও ছিলো না। টুক করে একটা এসএমএস ঠুকে দিলাম। অল্প কথায় কাজ হয়ে গেলে বেকার ঝামেলা
বাড়িয়ে লাভ কি? আর ইমনটাও তেমনই, কোনো প্রশ্নই করল না। যেটা আমি ভীষণ ভাবে এক্সপেক্ট করেছিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই একটা রিপ্লাই এলো
অ্যাজ় ইউ উইশ!! হ্যাপী
ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে।
সত্যি বলতে এতো সহজে পার পাবো ভাবিনি। তবু ঘাড় থেকে রণাঙ্গীনীকে ঝেড়ে ফেলতে পেরে বেশ ভালই লাগছিলো। ব্যাস, আর কি? ইমনকে
মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আবার আমার সাইড হিরো লাইফ শুরু। আমার জীবনটা যেন ছিল বন্ধুদের রিয়েল লাইফ হিরো হয়ে ওঠার পিছনে একটা ঠ্যাকনা। ইমনের সাথে ঝগড়া করার সময়ই একমাত্র মনে হতো আমি শাহরুখ খান।
ইমন এপিসোডের প্রায় বছর ঘুরতে চলেছে, আমার অবস্থার কোনো পরিবর্তনই হয়নি। সাইড হিরোগিরি এখনও দিব্যি চলছে। এখন যিনি আমার শ্মরণাপন্ন, তিনি হলেন আমার বেস্ট ফ্রেণ্ড অর্ক। অর্ক আর আমি নার্সারি থেকে হায়ার সেকেন্ডারি অবধি একসাথে পড়াশোনা করেছি। আমারই পাড়ার ছেলে। এর আগে বহু ফ্রাস্টেটেড পাবলিকের লাভস্টোরি নিজের
হাতে হ্যাপিলি দি এ্যন্ড করে দিয়েছি। এখন হাত দিয়েছি অর্কর কেসে। অর্ক যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছে তার নাম রাজরূপা। নেটে আলাপ, বার দু’য়েক দেখাও করেছে। সে অবশ্য বেশ পুরনো ঘটনা, লেটেস্ট নিউজ় হলো,
অর্ক রাজরূপার প্রেমে পরেছে।
বেশ তো ঝাপ করে বলে টাপ করে তুলে নে!
উত্তরে অর্ক যেটা বললো তাতে ওকে নির্দ্বিধায়
শরমন যোশী বলে ডাকা যেতে পারে এবং তাতে নামকরণের স্বার্থকতা নিয়ে কোনো অভিযোগ তোলার
বিন্দুমাত্র অবকাশ ওর নেই।
নাহ্, আমার দ্বারা হবে
না!
একি সেই অর্ক? যে কিনা ক্লাস ইলেভেন থেকে সেকেন্ড ইয়ার অবধি ছ-ছটা প্রেম করে ফেলেছে? সেই অর্ক আজ একটা মেয়েকে আই লাভ
ইউ বলতে গিয়ে ঘেটে যাচ্ছে? অগত্যা এই শর্মাকে মাঠে নামতেই হবে। পরশুদিন সিটি সেন্টারে দেখা করছে ওরা। আমায় ম্যাটারটা সল্ভ করে দিতে হবে।
এম.জি, মানে মহাত্মা গান্ধীর হ্যাপ্পী বার্থডে। দুপুরবেলা ভরপেট খেয়ে
সবে শুয়েছি একটা ভাতঘুম দেবো বলে, এমন সময় ফোন।
বস্, প্ল্যান একটু চেঞ্জ হয়েছে। ওটা সিটি সেন্টারের বদলে কফি হাউস
হচ্ছে। আর টাইমিংটা হলো বিকেল চারটে। খবরটা পেয়ে মাথাটা জাস্ট
ইলেক্ট্রিক চুল্লির মতো গরম হয়ে গেলো। ওই সময় এর চেয়ে ভালো বিশেষন কিছু
খুঁজে পেলাম না। কিন্তু সাইড হিরোদের কথা মতো তো আর স্ক্রিপ্ট চলে
না। কাজেই আরাম হারাম হ্যায়-এর মতো
মহৎ বাণী মনে মনে উচ্চারণ করতে করতে বিছানা থেকে টেনে হিঁচড়ে দেহটাকে নামিয়ে নিয়ে তৈরী
হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
এই ঘটনার মাস দু’য়েক পরের কথা। রাজরূপা আমার বেশ ভাল বন্ধু হয়ে
গেছে। মেয়েটা খুবই সিম্পল। ট্যাঁশামি একদমই নেই। ভীষণ ফ্র্যাঙ্ক, তবে একটু ভীতু টাইপের। মাঝে একবার আমায় হাড্ডি হয়ে ওদের সাথে নিক্কোপার্ক যেতে হয়েছিলো। অবশ্য ইতিমধ্যে বহুবার হাড্ডি হতে হয়েছে অর্কর জন্য, কিন্তু নিক্কোপার্কে গিয়ে সেবার বুঝেছিলাম আতঙ্কগ্রস্থ হলে একটা
মেয়ে ঠিক কতদুর যেতে পারে। আমি আর অর্ক প্রায় জোর করেই ওকে
সাইক্লোনে চাপিয়েছিলাম। একটু উঠতে না উঠতেই বাবাগো মাগো চেঁচামিচি করতে করতে
অর্কর কোলে বমি করে দিলো। টানা হ্যাঁচড়ায় অর্কর শার্টের একটা বোতাম অবধি ছিঁড়ে
ফেললো। আমি অর্ককে যতোদূর চিনি, এরকম
একটা মেয়ের জন্য ফিদা মানে, কেস সাঙ্ঘাতিক। একেবারে সিরিয়াস কমিটেড কেস না হলে, এতদিন
ধরে এভাবে ঝুলে থাকতো না। যাই হোক, আমার সাথে রূপার বন্ধুত্ব বেশ গাঢ় হয়ে উঠছিল, আর এই ঘনিষ্টতা দেখে অর্কর যে কি পরিমাণে জ্বলছিলো সেটা আমি বেশ ভাল বুঝতে
পারছিলাম, আর তাই ইচ্ছে করে খোঁচাটাও একটু বেশীই দিচ্ছিলাম। রূপাও অর্কর থেকেই আমার সাথেই বেশী কথা বলতো। আমিও তার ফায়দা তুলে
প্রায়ই মাঝরাতে ফোন করে বেশ অনেক্ষণ ধরে বার্তালাপ চালাতাম। আর সেসব কথা যেচে অর্ককে
বলতাম কিঞ্চিত রঙ চড়িয়ে। ইমনের সময় আমি যেমন সুজয় আর কেয়ার প্রেমালাপের দিকে
করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতাম, লক্ষ্য করে দেখেছি,
অর্কর চাহনিতে তার সাথে বিন্দুমাত্র তফাৎ নেই। ভয়ঙ্কর ফ্রাস্ট্রু খাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। উলটে মাঝেসাঝেই আমায় ধরছে, পরবর্তি প্ল্যান
কি হতে পারে সেই নিয়ে। আমিও ইচ্ছে করে সময় নিচ্ছি, মাঝে মাঝেই গুছিয়ে জ্ঞানও দিচ্ছি। আর সে বেচারা বেশিরভাগ
সময়ই শুকনো মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বেশ কিছুদিন এভাবে যাবার পর একদিন মোক্ষম
সময়ে বুঝলাম লোহা গরম আছে, এবার আমার স্পেশ্যাল
ডায়লগ গুলো এলোমেলো ভাবে নায়িকার কান অবধি ছড়িয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ ইনডাইরেক্টলি রূপাকে বুঝিয়ে দিতে হবে অর্ক ওকে কত্তো ভালবাসে। অথচ অর্ক ভালবাসে এই জাতীয় কোনো শব্দ উচ্চারণ করাও চলবে না। তারসাথে লেজুড় হিসেবে বিশেষ বিশেষ বিশেষণ ব্যাবহার করে কন্যাকে ‘বিগলিত করূণা জাহ্নবী যমুনা’ করে হিরোর হাতে
হ্যান্ডওভার করতে হবে। বাক্যবাণের প্রয়োগ আমার বেশ ভালই
জানা ছিলো। মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের পর এ বিষয়ে আমার সমতুল্য কেউ
যে আর জন্মায়নি সে ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে এই জাতীয় বেশ কটা কেস হ্যান্ডেল
করার পর। সব কেসে সাফল্য না এলেও আমি খুব একটা ফেল করিনি। তবে এবারের কেসটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কথাগুলো রূপা কতোটা বুঝেছে আমার
বেশ সন্দেহ আছে। কারণ দিন সাতেক হয়ে গেলো, হিরো, হিরোইন কারোরই কোনো সংবাদ নেই। এদিকে স্ক্রিপ্টরাইটার হবার দরুন আমারও মনে পপকর্ণ ফুটছে। অস্থির হয়ে থাকতে না
পেরে সোজা অর্কর বাড়ি গিয়ে ধরলাম ওকে। একটু ফাঁক পেতেই স্বীকার করল ব্যপারটা
সাবান থেকে একটু স্পঞ্জ স্পঞ্জ টাইপ হয়েছে, অর্থাৎ
ওষুধ ধরেছে। আরও দুদিন বাদে অর্ক ফোন করে বললো- গুরু, পুরো মাখন!
বুঝলাম আবার একটা হ্যাপিলি দি এ্যন্ড
হয়ে গেছে। লাভ গুরু হিসাবে এরকম সাড়ে চুয়াত্তর পার্সেন্ট মার্কা
একটা সাফল্যের হার নিয়ে রীতিমতো গর্ব অনুভব করছিলাম, আবার রূপার উপর একটা বেশ তীব্র অভিমানও জন্মাচ্ছিল। অর্কই তোর সব হলো? অ্যাপ্রুভ করার কথা আমায়
একবার বলতেও পারলি না? মানছি আমি তোকে ইনফ্লুয়েন্স করেছি,
কিন্তু তবুও মনুষ্যত্বের খাতিরে অন্ততঃ একবার তো বলাই যেত। আমার চাপা অভিমানটা টের পেয়েই বোধহয় অর্ক আমায় নিউজ়টা দিলো।
রনি, নেক্সট স্যাটারডে রবীন্দ্রসদনে আমরা মীট করছি। আমি তুই রূপা আর রূপার
ফ্রেন্ড দেবলিনা। ইউ ডিজার্ভ এ ট্রীট। বিকেল পাঁচটায়, চলে যাস।
আমি প্রথমে শুনেই বলতে যাচ্ছিলাম যাবোনা, দেবলিনার নামটা শুনে শেষমেষ হ্যাঁ করে দিলাম। রূপার সাথেও অবশ্য একটা বোঝাপড়া আছে, সেটাই
বা বাদ দিই কি করে? অগত্যা চলে গেলাম সময় মতো। পৌঁছেই আমার মুখ হাঁ। হামেশা লেট সে আনেওয়ালা অর্ক বিফোর টাইম। রামদেব বাবা কে স্মরণ করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। প্রেমে পড়লে ছেলেগুলো
কেমন অমানুষ হয়ে যায়। এদিকে রূপার বান্ধবী দেবলিনার দিকে এবার চোখ গেলো, বেশ কিউট দেখতে। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত। আমরা চারজন গল্প করতে লাগলাম। আমারই লেখা স্ক্রিপ্ট আমাকেই বারবার শুনতে হচ্ছিল। আমি আমার পুরো অভাব
অভিযোগ নিয়ে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য, দেবলিনা কে অ্যাট্রাক্ট করা। তবে ফল বিশেষ হলো না। দেবলিনার নির্ঘাৎ বয়ফ্রেণ্ড আছে কোনো, তাই
আমায় বিশেষ পাত্তা দিলো না, এই লাভ স্টোরির কারিগর জানা সত্বেও। মনে মনে ভাবছিলাম তোরও দিন আসবে, আর
আর সেদিন আমাকেই তেল মারতে হবে। দেবলিনার কাল্পনিক বয়ফ্রেণ্ড এর
সাথে ঝগড়ার সিন আর তাতে আমার অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন এই সবই আগাপাশতলাই ভাবছিলাম আর
মাঝেমাঝে দাঁত বের করে হাসছিলাম। শেষমেশ চূড়ান্ত বোর হয়ে এদিক ওদিক
তাকিয়ে রবীন্দসদনের সিঁড়িতে বসে থাকা লোকজনদের দিকে মনঃসংযোগ করব ঠিক করলাম। ভ্রমীয়মাণ দৃষ্টি হঠাৎ একটা মেয়ের উপর এসে সমস্ত সংযোগকে কেমন যেন ফেভিকল লাগিয়ে
স্টীল করে দিলো। সেই কড়া চোখের দৃষ্টি, সেই কালো ফ্রেম, সেই কোঁচকানো ভ্রূ। আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বেশ বুঝতে পারছিলাম,
কিন্তু চোখ সরাবার উপায় নেই, আমি পুরো অনড়। চারপাশে কি হচ্ছে খেয়াল নেই। হঠাৎ কি মনে হলো, একটু আসছি, বলে আমি উঠে পড়লাম। তারপর ইমনেরই সামনে দিয়ে আরো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়ালাম। একটু বাদেই দেখি ইমনও এদিকেই আসছে। আমার ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আমি অপরাধী মুখ করে কিছু বলতে যাব, তার আগেই বরাবরের মতই ইমনের মুখ থেকে ফোয়ারা ছুটলো-
এটা কি ধরনের জোকার মার্কা কম্বিনেশন
শুনি? ক্যাটক্যাটে লাল একটা টি-শার্ট পড়েছ? তোমাকে আমি বারণ করেছি না এই ধরনের কালার
তোমায় একদম মানায় না? যে জিনিসটা বারণ করি সেটাই যে কেন বেশী
করে করো তোমরা ছেলেরা?
আমি ইমনকে বলতে যাচ্ছিলাম এই টি-শার্টটা তো তুমিই পছন্দ করেছিলে, কিন্তু আমার
মুখ দিয়ে বেরোলো- আর কটা ছেলে তোমার কথা না শুনে চলার ক্ষমতা
রাখে শুনি?
ইমন কটমট করে আমার দিকে তাকালো। আর তাতেই আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেলাম। ইমনের হাত ধরে চুপিসারে রবীন্দ্রসদন
থেকে বেরিয়ে গেলাম। অর্ক, রূপা,
দেবলিনা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। থাকগে, চিরটাকাল সাইড হিরো হিসাবে কাটিয়েছি। এবার আমার লিড রোলে অভিনয় করার দিন। আমার হিরোইনের হাত ধরে নির্জন কোনো
রাস্তার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। অনেক অভিমান জমে গেছে। এইবেলা নিরিবিলিতে ঝাড়টা খেয়ে নিতে হবে।
Fatafati!!!!!!
ReplyDelete