।। বর্ষ শেষের মৃত্যু মিছিল ।।
~ তন্ময় কর ~
Advanced Medical Research Institute নামটা
একটু অপরিচিত লাগছে, তাই না? কিন্তু ছোট করে যদি বলা যায় তাহলে আজ বহু আলোচিত এবং
অভিশপ্ত আমরি (AMRI).
সুস্বাস্থের আশায় মানুষ ছুটে গেছিল
ঢাকুরিয়ার আমরি তে। তারা কিকরে জানবে যে সুস্বাস্থের বদলে মিলবে মৃত্যুর পরোয়ানা।
জীবনের আশায় মিলবে মৃত্যুর উপহার। আত্মীয় পরিজনের বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে
পাওয়া গেল প্রিয় মানুষটার নিথর দেহ। বর্ষবরণের প্রাক্কালে এক ভয়াবহ বিভিশিখা দেখল
বাংলার মানুষ। ৯/১২/২০১১ এক অভিশপ্ত দিন। বাঁচবার তাগিদে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ল ৯৩
জন মানুষ। অ্যানেক্স বিল্ডিং গ্রাস করল আগুন, বিষ ধোঁয়ায় আটকে অসহায় মৃত্যু। ঘটনার
দিনেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমরির লাইসেন্স বাতিল করেছেন। গ্রেফতার হয়েছেন শ্রবণ
টোডী, রবি টোডী ও আর. এস. গোয়েঙ্কা সহ ৭ জন কর্মকর্তা। বিচার-বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়ে গেছে। মৃতদের
পরিবারবর্গের প্রতি অর্থ সাহায্যের ঘোষণা ও দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ভয়াবহ
ঘটনা আবার প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিল প্রশাসনিক কর্তাদের। ঘটনার ১০ দিন আগেই দমকলের
দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়াতেও কেন দমকল বিভাগ আগে ব্যাবস্থা নেয়নি, যেখানে
মানুষের জীবন নির্ভর করে । এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? সেই দিনই কলকাতা পুলিশের
যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) দময়ন্তী সেন জানিয়েছেন যে গত ২৯শে জুলাই দমকল বিভাগ
হাসপাতাল পরিদর্শন করে বেসমেন্ট পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু পরিষ্কার হয়নি কেন এ দেখার দায়িত্ব কার? এটা কি প্রশাসনিক গাফিলতি নয়?
এতগুলো প্রানের বিনিময়ে প্রশাসনের টনক নড়বে? কি দরকার তাহলে প্রশাসনের? দমকল
কর্তৃপক্ষ FIR দায়ের করেছেন লেক থানায়। ওখানে
স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে হলফনামা দেওয়া সত্বেও আমরি কর্তৃপক্ষ নির্দেশ মানেনি। Fire
Brigade Act 199 of 1987 এ বলা আছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান হলফনামা বা
নির্দেশ ৯০ দিনের মধ্যে না মানলে সেই প্রতিষ্ঠানের No Objection
Certificate বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু ৯০ দিন পরে কেন প্রশাসনের পখ্য
থেকে পুনরায় পরিদর্শনে যাওয়া হলনা। এই FIR দায়ের করে কি লাভ
হল? আমাদের বিচার ব্যবস্থায় আদি অনন্তকাল ধরে এর বিচার চলবে। code of
criminal procedure-এ বলা আছে কোনো মামলা দায়ের হলে ৯০ দিনের মধ্যে
চার্জশীট জমা দিতে হবে। কিন্তু বিচার চলার জন্যে মাননীয় আদালতের নির্দিষ্ট সময়সীমা
নেই কেন?
দোষীদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী উঠেছে, কিন্তু
কিভাবে, তার সদুত্তর প্রশাসন দিতে পারেনি। কলকাতায় অতীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আরও
ঘটেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২৩/০৩/২০১০
এর স্টিফেন কোর্ট। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন স্টিফেন কোর্ট
এর মালিকও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিন্তু আজ সে জামিনে মুক্ত। মামলা অবস্য এখনো চলছে,
কিন্তু বিচার ব্যবস্থা সেই ঢিমেতালে। এ ক্ষেত্রেও যথাযত অগ্নি-নিরবাপন ব্যবস্থা
ছিলনা বলে ঘটনাটা ভয়াভহ রুপ নিয়েছিল।
আরও একটি আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল
বড়বাজার এর প্রাচীন বানিজ্য তোরন নন্দরাম মার্কেট-এ। ১২/০১/২০০৮ এ দুপুর আড়াইটের
সময়ে আগুন লাগে। ১৩ তলা বিল্ডিং-এ অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লাগে। পাঁচ
দিনের চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রন-এ আসে। তার পর থেকেই উপরের ৮ তলা বন্ধ। কলকাতা
কর্পোরেশন এই বাড়ীটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আজ
অবধি কিছুই হয়নি। রাজনৈতিক চাপান-উতোরে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আবার যদি ওই বাড়ির
কন অংশ ভেঙ্গে পড়ে এবং আবার কিছু মানুষের
প্রান যায়, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? শুধুই
কি EVM এর দিকে তাকিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে
ছেলেখেলা হবে? বিপজ্জনক অংশ ভেঙ্গে ফেললে কি খুব অন্যায় হত? সুধু ক্ষতিপূরণ দিলেই
কি দায় মিটে যায়? এই ধরনের প্রহসন আর কতদিন চলবে? নাকি চলতেই থাকবে একে অপরকে
দোষারোপের পালা।
কেন্দ্রীয়
সরকার প্রণোদিত National building code অবিলম্বে সর্বস্তরে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই শহরের সমস্ত বহুতলে
এই নির্দেশিকা মেনে চলার হলফনামা জারী করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এই নির্দেশিকা
কার্যকরী করা হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
এখনো অনেক
সরকারী হাসপাতালে অগ্নিবিধি মেনে চলা হচ্ছেনা, জানিনা প্রশাসনের এতে নজর আছে কিনা?
প্রত্যেক নির্বাচনের আগে স্বচ্ছ প্রশাসন চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু
বাস্তবে কখনই এর দেখা মেলেনা। মৃত্যুর হাতছানি চলছেই এই শহর তথা এই বাংলায়।
কিছুক্ষনের হৈচৈ, লোকদেখানো সমবেদনা আর তাল ঠোকাঠুকি চলছে ও চলবে, নিষ্কৃতি নেই।
No comments:
Post a Comment