Saturday 14 April 2012

Saralrekha by Prasun Mishra

সরলরেখা


প্রসূ মিশ্র


প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়ে পড়া আকাশের অহঙ্কার আজও চোখে মুখে স্পষ্ট। জীবনতরী বইতে বইতে কোন মোহনায় বন্দী হবে, কোন শূন্যতায় বিলীন হবে সেটা জানা প্রশ্নের অজানা উত্তর মাত্র।
তবে শৈশবের বুক ফাটা হাসির স্বপ্নিল অকৃত্রিম ভাবাবেগ আমার লেখনীর পটভূমিকা যোগায়। কালি মাখা হাতের রেখায় ফুটে ওঠা ভবিতব্য, রৌদ্রদীপ্ত যৌবনের আহ্বানে আজ সবার মুখের কথা কেড়ে নিতে চাই। ফেলে আসা পথের অস্থি মজ্জায় জড়ানো স্মৃতির পাড়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময় খুঁজে পাগল ওই কাঁচা বন্দী জীবনের উচ্ছ্বাস। এক সময়ের উদ্দামতার নূপুর ধ্বনি আজকের সীমাবদ্ধ রুটিনের অ্যালার্ম নয়তো অপেক্ষারত call-এর রিংটোনের এক ঝলক মাত্র।
রাবীন্দ্রিক চাদরে মোড়া লেখার সাথে বড় হয়ে ছাত্রজীবন আজ কোথাও যেনও বিকৃত হয়ে আমাদের আমাদের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার পরিহাস দীর্ঘশ্বাস হয়ে আজ ইসস্কুল ব্যাগের ওজন দেয়, নয়তো এক ঝাঁক ইচ্ছেডানার নিজস্বতার সুতোটা কেটে দেয়। নেশাবন্দী জীবনের হতাশা, নয়তো আমোদপ্রিয় টালমাটাল অবস্থায় চাপা কান্না, নয়তো হাসিঠাট্টা খুঁজে বেড়ায়। চলমান লক্ষ্যের দিকে তাক করে বসে থাকা লক্ষ্যভেদীরা অগোচরে অপ্রিয় হয়ে অপরের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
আজকের ভালবাসার রঙ্গিন মোড়ক আমার ভাবাবেগের উদ্রেক করে, আমার মনের মণিকোঠায় একটা জায়গা করে নেয়। তবুও যেন আমি উদাসীন হয়ে ওই বাঁশিওয়ালার বাঁশির মূর্ছনায় আছড়ে পড়া সূরের সাথে আমার হৃদস্পন্দনের একটা যোগসূত্র খুঁজে পাই। আধুনিকতার বীজ বুনে ওদের আবার একটা পরিবর্তনের অপেক্ষা অনেক চেষ্টা করেও আমার নিঝুম রাতের কোজাগরী আকাশের অমাবস্যা দেখতে পাইনি। স্বপ্নিল চোখ আজও বৃষ্টির ধারায়, গ্রীষ্মের শীতল ছায়ায়, হাড়কাপানি শীতের কম্পনের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাই। ভূলের মধ্যে লুকোনো সত্যিগুলো আজও আমায় ফিরিয়ে দেয় আমার ভালবাসার বাহুডোরে।
সাম্রাজ্যবাদের করালগ্রাসে যখন মানুষের আমিত্ব লুণ্ঠিত হয়েছিলো, সেই আমরাই কোমর বেঁধে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তোমায় স্বাধীনতার একটা লাল সূর্য, হয়তো সেটা সন্তানহারা জননীর অশ্রুবারি নয়তো বীরপুরুষ, বীরঙ্গনার রক্তে ডুব দিয়ে ওঠা একটা ফেলে আসা অতীত আর ভবিষ্যতের আশার মিলনসূত্র। সেই মিলনসূত্রধারীরা হয়তো আজ আত্মকেন্দ্রিত, স্বার্থপরতার জালে জড়িয়ে একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করে, ওদের তীক্ষ্ণ নখের আঁচড় ভারতমাতার সুপ্রশস্ত পথকে অজান্তে একটা গভীর খাদের কিনারার দিকে ঠেলে দেয়। সেই বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি হয়তো আজকের যুবসমাজকে বাধ্য করে অস্ত্র তুলে নিতে, নয়তো আত্মাহুতির পথে কয়েকধাপ এগিয়ে দেয়।
সবার মধ্যেই হাসিকান্নার এই সম্মিলনীতে এসে আমরা আজ কেউ বিস্মিত, কারোর হয়তো ফিরে পাবার তীব্র বাসনা, কারোর চাপা কান্নার বুকফাটা হাহাকার, কারোর প্রাপ্তি, কারোর হারিয়ে যাওয়া অতীতের কিছু কোলাজ ঘেঁটে নতুন আনন্দের অনুভূতি। জীবনের এই টুকরোগুলো আজ জোড়ার সময় এসেছে। মন বলছে হয়তো- যা পেয়েছি তা চাইনা, যা চেয়েছি, কেনই বা তা পাইনা কিংবা আরো একটু বেশী হলে লাগতো ভালো। ভালমন্দের এই জীবনধারায় বইতে বইতে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমার মনে একটা রেখার ছবি ফুটে উঠছে। বিন্দু বিন্দু জুড়ে সেই ক্লান্ত আমি ভেবেছিলাম পাবো একটা সরলরেখা। কিন্তু বাস্তবের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে এই অন্যায় আব্দার কেউ রাখবে না, তাই সরলরেখা আজ বক্ররেখার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অবিরাম সুখের অনুভূতিতে অন্ততুষ্ট পৃথিবীর দুঃখের অনুভূতি যদি আমরা ভূলে যাই, তাহলে জীবনের অনেককিছু না পাওয়া, না বোঝা থেকে যায়। কথায় আছে শেষ হয়েও হয়না শেষ, সবই থাকবে, আমরাও থাকবো, থাকবেনা কিছু সতেজ সকাল, উষ্ণ দুপুর, ক্লান্ত সন্ধ্যে আর রাতের এক মুঠো শান্তি।।

No comments:

Post a Comment