জল নিয়ে কিছু কথা
শুভাশীষ দও
জল প্রকৃতির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও
মহার্ঘ দান। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্নান-দাঁতমাজা-হাতমুখ ধোওয়া এই
তিনটি কাজের জন্য আমাদের সবচাইতে বেশী জল খরচ হয়। বিশ্বজুড়ে ক্রমহ্রাসমান জলের
ভান্ডারের মোকাবিলা করার জন্য বছর কয়েক আগে ইউ.এস.এ তে এই জলকে রিসাইক্লিং করে পুনরায় ব্যবহার
করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু প্রয়োগ করার আগেই ক্যালিফোরনিয়ার মেয়র প্রকল্পটি
বন্ধ করতে বাধ্য হন প্রবল জনমতের চাপে যে পদ্ধতিটি হয়তো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অতি
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ও Toilets
to Tap কর্মসূচী গ্রহন করেছে।
বলা যায় জল সংরক্ষনের জন্য যে রেইন ওয়াটার- হারভেস্টিং-ই যে যথেষ্ট নয় সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তার সময় এসেছে।
কেন এই কথা
বললাম সেটা একটু খতিয়ে দেখা যাক। আজ এই গ্রহের জনসংখ্যা 7 বিলিয়ন
এবং ২ বিলিয়ন মানুষ আরও যুক্ত হবে 2050 র মধ্যে। সমীক্ষা অনুযায়ী আমরা প্রতিদিন 2-4 লীটার জল পান করে থাকি। ফলে কি পরিমান জল আমরা ভোগ করে থাকি শুধু পানীয় হিসাবে
তা সহজেই অনুমেয়। UN জানাচ্ছে
যে বর্তমানে প্রতি 6 জনের 1
জন মানুষ সুপেয় জলের অভাবের সম্মুখীন। ক্রমবর্ধমান ব্যবহার যোগ্য (safe water) জলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে 1993 থেকে প্রত্যেক বছর ২২শে মার্চ দিনটি উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব জল দিবস। 1992 তে ডাবলিন-এ অনুষ্ঠিত হয় International Conference of Water & Environment. সেখানে প্রথম পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান
পৃথীবিতে ব্যবহারযোগ্য জলের ভান্ডার যে হারে কমছে আগামী 10
বছরের মধ্যে কিছু দেশে দেখা দেবে পানীয় জলের আকাল। এরপর
তাবৎ দেশের বিজ্ঞানীরা নড়েচড়ে বসেন। ঠিক হয় জলের সমস্যা, সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা এবং সাধারন মানুষ কে এর গুরুত্ব
সম্বন্ধে অবহিত করানোই প্রাথমিক কাজ। এর সঙ্গে জল সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজন অরন্যায়ন, নদী,
নালা, দিঘী ও পুকুর সংস্কার। কিন্তু আজও এ বিষয়ে কোনো সঠিক
পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। তার ফলে
চলছে যথেচ্ছাচার। সরকার তথা জনগনের এই দায়হীন মনোভাব আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক
ভয়ংকর সমস্যার মুখোমুখি যা প্রকারান্তরে বেড়েই চলেছে। একটা ছোট্ট উদাহরন নেওয়া
যাক। পুকুর সংরক্ষনের নামে এখন পুকুরপাড় সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানোর হুজুগ। পরিবেশ
বিজ্ঞানীদের মতে এটা পকুরের স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে। জলাশয় বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে
বিল্ডিং, রাস্তা বা স্টেডিয়াম। যে হারে পুকু্র, জলাশয় বা ঝীলের সংখ্যা কমছে অদূর ভবিষ্যতে এগুলি
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যার সরাসরি প্রভাব পড়বে মাটি তলার জলের ভান্ডারে। বিপন্ন হবে
জীববৈচিএ। মাটি হয়ে উঠবে বন্ধ্যা। ফলে দেখা দেবে খরা- দুর্ভিক্ষ- মহামারী।
সংখ্যাতত্ব
যাই বলুক আসলে বেশীরভাগ জল যা আমরা গ্রহন করি তা আসলে খাদ্যের মধ্যেই প্রকারান্তরে
ঘনীভূ্তঃ 1 কিলো মাংস প্রস্তুত হতে 15,000 লীটার জল ব্যায়িত হয় আর 1 কিলো
গম তৈরীতে 1500 লীটার। বাস্তবে আমরা কি পরিমান জল গ্রহন
করছি তা নিহিত আছে আমাদের খাদ্যাভাসের তালিকার উপর যা কিনা চেস্টা করলেই বদলানো
সম্ভব। তাই এবছর (2012) বিশ্ব জল দিবস এর থীম: The World Is Thirsty, Because We Are Hungry. সুতরাং আমাদের জাগবার সময় এসেছ, আর বেশী দেরি হবার আগেই বদলাতে হবে নিজেদের, বুদ্ধিমত্তা ও সংযমের সাথে খরচ করতে হবে জল যদি আগামী
পৃথীবিকে বাসযোগ্য করে যেতে হয় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।।
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for
pdf version of this Magazine.
No comments:
Post a Comment