চিঠি
অনির্বাণ চক্রবর্তী
(পূর্বের প্রকাশের পর থেকে)
পরের দিন ক্লাসের শেষে আবার খেলা শুরু হল। শুরু হবে নীরা কে দিয়ে। নীরা স্টেজ এ উঠে ঠিক কি
বলেছে আমি শুনিনি। আমি চুপচাপ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। কানে কোনও কথাই ঢোকেনি।
নিস্পলক দৃষ্টিতে খালি নীরা কেই দেখছিলাম। ও যখন স্টেজ থেকে নামলো তখন বুঝলাম যে
ওর বলা শেষ হয়েছে।
এবার শিবা। সে স্টেজে উঠে বলল- আমি একজন কে ভালোবাসি, তবে তার নাম বলব না। খালি
এটুকুই বলব- তার নামের মধ্যে “রামধনু ও তার একটি রং” আছে। সবাই ভাবতে বসে গেল। কে
সে? কেউ কেউ আবার জোর করল, “বল না শিবা, বল! তার নাম কি?” ও আর কিছুই বলল না। আমি
বললাম- বুঝে গেছি, তাই খালি একটা গান গাইবো। “নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়”... শিবা চোখ
বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
সেদিন ক্লাসের শেষে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর শিবা আমাকে ডেকে বলল- তুই বুঝেছিস
তো আমি কার কথা বলছি, আমি কাকে ভালোবাসি?
আমি বললাম- হ্যাঁ, বুঝেছি। তুই ওকে গিয়ে তোর মনের কথা বলে দে। দেখ ও নিশ্চয়ই তোকে
হ্যাঁ বলবে। তবে সে কে? তার নাম কি?
-
তুই জানিস তো!
-
হ্যাঁ, আমি জানি। তবুও তোর মুখ থেকে তার নাম শুনতে চাই।
-
নীরা!!
আমি কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গেলাম। বুঝতে পারলাম না কি বলব! আসলে সত্যিই আমি
বুঝতে পারিনি শিবা কাকে ভালোবাসে। আমি তার নাম টা জানার জন্যই এমনিই মিথ্যে
বলেছিলাম যে আমি জানি। কিন্তু যেটা জানলাম, এটা না জানলেই ভালো হত। তারপর নিজেকে
একটু সংযত করে নিয়ে বললাম-
-
বাহ, ভাল তো। ওকে গিয়ে বল।
-
তা কি করে হবে? তুই ওকে ভালোবাসিস, সবাই জানে, আর তুই আমাকে
বলছিস ওকে প্রোপোজ করার জন্য!!
-
সবাই জানে আমি ওকে ভালোবাসি, কিন্তু ও তো আমাকে ভালোবাসে না।
তাছাড়া এটা হয়ত আমার ভালোবাসা নয়, ভালোলাগা। তুই এগিয়ে যা ভাই, আমার কোন অসুবিধা
বা আপত্তি নেই।
-
সত্যি? তোর কোন আপত্তি নেই?
-
নাহ রে ভাই, আপত্তি নেই। থাকলে নিশ্চয়ই তোকে বলতাম।
এই বলে ক্লাসের বাইরে এসে
দেখি অচিন্ত্য দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে ও এমন ভাব করল যেন ও এই মাত্র এল আর
আমাদের কোন কথাই শোনেনি। কিন্তু আমি বুঝলাম, এই ঘটনার একজন সাক্ষী থেকে গেল। আমি
শিবা কে বললাম- ক্লাস শেষ হয়ে গেছে, যা নীরাকে এগিয়ে দিয়ে আয়।
বাড়ি ফিরেই কবিতার খাতাটা ছিঁড়ে ফেললাম। নিজেকে সমস্ত দিক দিয়ে
নীরা শূন্য করার জন্য উদ্যত হলাম। কবিতার খাতাটায় সব কবিতাই নীরা কে উদ্দেশ্য করে
লেখা ছিল। নিজে নিজেকে প্রতিজ্ঞা করলাম, আর নীরার সাথে কথা বলব না এমনকি ওর দিকে
তাকাবো ও না। ওর টেলিফোন নম্বর টা আমার ডাইরি থেকে পেন দিয়ে কেটে দিলাম। পেন এর
উপর জোর টা একটু বেশী দিয়েছিলাম, তাই পৃষ্ঠাটাও ছিঁড়ে গেল।
পরের দিন কলেজে যেতেই শ্রেয়া আমাকে ক্যান্টিনে ডেকে নিয়ে গেল।
আর বলল- শুনেছিস, শিবা নীরা কে প্রোপোজ করবে!
-
হ্যাঁ, জানি। ও আমাকে বলেছে।
-
তুই নীরা কে কেন আগে বললি না! কেন ওকে প্রোপোজ করলি না?
-
এটা হয়ত আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা নয়। তাই আমি ওকে প্রোপোজ
করি নি। তাছাড়া শিবা নীরা কে সত্যিই খুব ভালবাসে। এতে ওদের দুজনেরই ভালো হবে।
-
সে তো তুই ও ওকে ভালোবাসিস।
-
আরে, বললাম না, এটা হয়ত আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা নয়। ছাড়,
এসব ভেবে লাভ নেই। চল ক্লাসে যাই, প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস আছে। দেরি করলে চলবে না।
চল।।
-
Are you
sure?
আমি মুচকি হেঁসে বললাম- হ্যাঁ...
এরপর কয়েকদিন ধরে শিবা নীরা কে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসছে। প্রায়
প্রত্যেকদিন কিছু না কিছু গিফট কিনে এনে আমাকে দেখিয়ে বলছে- দেখ তো ভাই, এটা কেমন
হয়েছে? তারপর সেটা নীরার হাতে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমি আবার ওকে মতামত দিই এরপর কি
গিফট কিনবি। সেদিন যেমন ওকে আমি একটা রুপম ইসলাম এর একটা ক্যাসেট গিফট করতে বললাম।
আমি জানতাম, নীরা রুপমের ফ্যান। আমার নিজের আর কোন কাজ রইল না। তাই যেচে কাজ তৈরি
করতে লাগলাম। ডিপার্টমেন্ট এর বিভিন্ন কাজে এমনকি ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট এর কাজেও স্বেচ্ছায়
শ্রম দিলাম।
কলেজে কালচারাল টীম এর ছেলেমেয়েদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল, এখন ওদের সঙ্গে
আড্ডা দিই, গান গাই, প্রায় রাত ৭ তা পর্যন্ত। সেই আলাপচারিতার মাধ্যমে আমি
কালচারাল টীম এর সদস্য হয়ে গেলাম। আমি গীটার বাজাতাম। তবে কখনও স্টেজ এ উঠতাম না,
আমার স্টেজ এ উঠতে ভাল লাগতো না। তাই আমি ওদের বলে দিয়েছিলাম, আমি শুধুমাত্র
রিহার্সাল এই থাকবো। পরবর্তীকালে আমাদের কালচারাল টীম কলেজের বাইরেও অনুষ্ঠান করতে
শুরু করল। প্রথমে বিভিন্ন কলেজ ভিত্তিক প্রতিযোগিতা এবং তার পরে বিভিন্ন কলেজ ও
পাড়ার অনুষ্ঠান। যেহেতু আমি স্টেজ এ উঠবো না তাই আমার উপর দায়িত্ত এল ম্যানাজমেন্ট
এর। গান লেখা আর সুর দেওয়া টা আগে থেকেই করতাম। প্রত্যেক টা প্রতিযোগিতায়
নতুন গান তৈরি করে গাইতাম। আর বাকি কলেজ গুলো চলতি ব্যান্ড গুলোর গান গাইত। ঠিক এই
কারনেই আমরা প্রায় সমস্ত প্রতিযোগিতায় জয়ী হতাম।
সব ই ঠিক চলছিল, খালি পড়াশোনা টা ছাড়া। এই সমস্ত অনুষ্ঠানের চক্করে আমি ক্লাস
ই করতাম না। স্যার ও ম্যাডাম রা আমাকে খুব ই ভালোবাসতেন তাই তারা সবসময় বোঝাতেন
ক্লাসে আসার জন্য। কিন্তু আমি খালি প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস ছাড়া আর কোনও ক্লাসেই
যেতাম না। বুঝলাম পার্ট ওয়ান এর পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর পর। একটু ভুল বললাম, আমি
তো বুঝতাম, বাড়ির লোকেরাও বুঝে গেলো।
রেজাল্ট বেরোল, আমার ক্লাসের প্রায় সবাই ফার্স্ট ক্লাস পেল, কিন্তু আমি
টেনেটুনে সেকেন্ড ক্লাস। তবে হ্যাঁ, প্র্যাক্টিক্যালে আমিই সবচেয়ে বেশি। খালি এই
টুকুই আশা, বাকি পুরোটাই হতাশা। ম্যাডাম চেঁচিয়ে বললেন- বারবার বলেছিলাম, অনির্বাণ
একটু পড়ায় মন দাও, সবকটা ক্লাস কর। তখন তো কথা শোননি, এখন বোঝো। খালি প্র্যাক্টিক্যাল
ই সব নয়। আমি চুপ করে রইলাম। বাড়িতে ফেরার পর আবার বকুনি শুনতে হল। তারপর কয়েকদিন
খাওয়ার টেবিলে আমার বকুনি শোনাটা অভ্যেসে দাঁড়ালো। রোজ রোজ খালি রেজাল্ট নিয়ে কথা।
কিন্তু আমি কাউকে এটা বোঝাতে পারছি না যে শুধুমাত্র সিলেবাস মুখস্ত করে আমি
ফার্স্ট ক্লাস পেতে চাই না। যেখানে কোনও ক্রিয়েটিভিটি নেই, সেখানে আমিও নেই।
সিলেবাসের বেশিরভাগ অংশ ই কোনও কাজে লাগে না। নেহাত নম্বর বাড়ানোর জন্য
বাকিরা সেটা মুখস্ত করে, আর আমি সেটাকে বাদ দিয়ে দিই। ইচ্ছে হয় সেই পৃষ্ঠা গুলোকে
ছিঁড়ে ফেলতে।
এরপর আমি যদি বাকি ক্লাসগুলো না করি তাহলে স্যার ও ম্যাডাম আমাকে
প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে ঢুকতে দিতেন না। এইভাবে শেষ পর্যন্ত আমাকে ক্লাস করতে
বাধ্য করলেন। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক দিন আমাকে হোম ওয়ার্ক ও দিতেন। সেগুলো বাড়ি
ফিরে করতে হত। না করলে প্র্যাক্টিক্যাল বন্ধ। আমি বেকায়দায় পড়ে নিয়মিত ক্লাস ও হোম
ওয়ার্ক করতে শুরু করলাম। কিন্তু বাইরে অনুষ্ঠান করতে যাওয়া ছাড়লাম না।
দুর্গাপুরে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনুষ্ঠানের সুযোগ পেলাম। ওরা ভালো টাকা
দেবে। সুতরাং দলবল নিয়ে হাজির। আমরা খুব ভালোভাবে গাইলাম, তাতে ওখানকার অধ্যক্ষ
খুশী হয়ে ৫০০ টাকা বেশি দিলেন। আমরাও খুব খুশী।
সব মিলিয়ে ৪ দিন কলেজ কামাই। কলেজে এসে দেখি শিবার সাথে শ্রেয়ার বন্ধুত্ব বেস
ভালই হয়েছে। ওরা দুজনে একসাথে আসছে, ক্যান্টিন যাচ্ছে, পাশাপাশি বসছে, একসাথেই বাড়ি
ফিরছে। বুঝলাম এটা শিবার একটা ফন্দি, নীরা কে রাগানোর জন্য। অচিন্ত্য কে ও ব্যাপারটা
বললাম, ও শুনে অবাক হয়ে বলল-
-
সেকি! তুই জানিস না?
-
কি হয়েছে? কেউ তো কিছু বলেনি।
-
অচিন্ত্য নীরা কে প্রপোজ করেছিল, তাতে নীরা না বলেছে। তার
পর থেকেই শিবা আর শ্রেয়া একসাথে।
-
ও শিবা শ্রেয়ার সাথে ঘুরছে, এই দেখে কি তোর দুঃখ হচ্ছে?
বলেই আমি হেসে ফেললাম।
অচিন্ত্য মুখ গোমড়া করে বসে গেল। আমি ভাবলাম শিবা আমাকে একবার বলল না! বলার
প্রয়োজন বোধ করল না!! হটাত করে অচিন্ত্য বলে উঠল- যা এবার তোর চান্স, নীরা কে
প্রপোজ করে দে। আমি বললাম- অনির্বাণ চক্রবর্তী যখন কথা দিয়েছে ওর দিকে তাকাবে না,
তো তাকাবেই না। আমি কথার খেলাপ করি না। তাছাড়া পরীক্ষা এগিয়ে আসছে, এবারে
ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তুই তো ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে বসে আছিস, আর আমাকে এবারে খুব
খাটতে হবে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার জন্য। অচিন্ত্য হেসে বলল- তুই আবার কবে থেকে
রেজাল্ট এর কথা ভাবতে শুরু করেছিস? আমি বললাম- আমি নই, আমার পরিবার স্যার ম্যাডাম
রা ভাবাচ্ছে।
এরপর থেকেই আমি শ্রেয়া ও শিবা কে এড়িয়ে যেতে শুরু করি। কয়েকদিন
চলার পর ওরা একদিন হটাত আমাকে জিজ্ঞাসা করল- কি ব্যাপার! আমাদের সাথে কোনও কথা
বলছিস না কেন? আমি বললাম- কই না তো, এই এখন একটু পড়ায় মন দিয়েছি। সাম্নেই তো
পরীক্ষা, এই আর কি! বলেই বইতে আবার মুখ গুঁজলাম।
প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে কারোর কোনও অসুবিধা হলে প্রথমে আমার
কাছে আসে। আমি সাহায্য করি ও বুঝিয়ে দিই। হটাত একদিন বোঝার জন্য
নীরা এসে সামনে হাজির। আগে যতবার এসেছে আমি ওকে স্যার এর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু
এবারে আমিই ওকে প্র্যাক্টিক্যালটা বুঝিয়ে দিলাম।
তবে বন্ধুদের যেভাবে বোঝাই সেভাবে নয়, ঠিক অপরিচিতের মত। ও নিশ্চয়ই বুঝতে পারে যে
আমি ওকে এড়িয়ে থাকি। আসলে ওকে দেখলেই তো আমি দুর্বল হয়ে পড়ি। কিন্তু আমি কথা
দিয়েছি আমি ওর দিকে তাকাবই না।
এবারে পরীক্ষার প্রস্তুতিটা ভালই হয়েছে। সিলেবাসের অপছন্দের জিনিসগুলো
ও ভালো করে পড়েছি এবং বুঝেছি। ৪ ঘণ্টা ধৈর্য ধরে পরীক্ষাও দিয়েছি। সবকটা লিখিত
পরীক্ষাই ভালো হয়েছে। এরপর প্র্যাক্টিক্যাল, মানে আমার ভালোলাগার বিষয়। রাত জেগে
প্র্যাক্টিক্যাল খাতা তৈরি করে পরীক্ষা দিয়েছি, এটাও খুব ই ভালো হয়েছে। যারা বাইরে
থেকে পরীক্ষক এসেছিলেন তারা খুব প্রশংসা করেছেন। এবার রেজাল্টের অপেক্ষা।
পরীক্ষার পর সময় আর কাটতে চায় না। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছি,
সপ্তাহে ২-৩ টে গল্পের বই পড়ে শেষ করছি আর বন্ধুদের ফোন এ জ্বালাতন করছি। যদিওবা
বেশিরভাগ বন্ধুরাই কোথাও না কোথাও ঘুরতে গেছে। যারা কলকাতায় আছে মাঝে মাঝে তাদের
বাড়ি চলে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। আমার বাড়িতে যত গল্পের বই ছিল সব শেষ, এখন এর ওর বাড়ি
থেকে এনে পড়ছি। তবে কেমন যেন একটা শূন্যতায় ভুগছি, যার কারন আমি বুঝতে পারছি না আর
কাউকে বলতেও পারছি না।
এখন কোনও কলেজ বা পাড়ায় অনুষ্ঠান পাচ্ছি না। সেই পরীক্ষার মাস
দুয়েক আগে শেষ অনুষ্ঠান করেছি। ব্যস, তারপর বন্ধ। এখন খালি বাড়িতে বসে রেজাল্টের
অপেক্ষা করা, আর নিজের জমানো টাকা সিগারেট ফুঁকে ওড়ানো। এখন সেই টাকা ও শেষের পথে।
বাড়ি থেকেও চাইতে সংকোচ হয়।
হটাত একদিন খবরের কাগজ উল্টে দেখি, সেদিনই রেজাল্ট বেরবে। বন্ধুদের জানাবো বলে
ফোন করে দেখি, সবাই খবর টা পেয়েছে। কোনওরকমে বাড়ি থেকে খেয়ে কলেজে যাই। কলেজে
লিস্ট টাঙিয়ে দিয়েছে। আমি পৌঁছানোমাত্রই অচিন্ত্য আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে- তোর
ফার্স্ট ক্লাস হয়েছে। আমার চোখে জল নেমে এল। লিস্ট টা নিজে থেকে দেখেই নিজের চোখ
কে শান্ত করলাম। তারপর ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দিলাম। ডিপার্টমেন্ট এ যেতেই স্যার
ম্যাডাম রা বললেন- দেখলি তো, পার্ট ওয়ান এ যদি একটু খাটতিস তাহলে রেজাল্ট টা আরও
ভালো হত। আমি বললাম- আমি এতেই খুশী। তবে সিলেবাস টা কিন্তু পালটানো দরকার। ওই
সমস্ত বস্তা পচা জিনিসগুলো না রেখে কিছু আধুনিক জিনিস রাখা প্রয়োজন। স্যার বললেন- তুই শুধরাবি
না!
এরপর স্যার ও ম্যাডাম আমাদের টিফিনের ব্যবস্থা করলেন। আমরা ওই খেতে খেতে পুরনো
ঘটনার স্মৃতিচারণ করছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। আমাদের গল্প
চলছেই, আর আমরা আস্তে আস্তে ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। একটু আধটু কান্নাকাটি ও হল। আমরা
একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বললাম যোগাযোগ রাখবো, বছরে অন্তত একবার সবাই মিলে দেখা করব।
তারপর আমরা স্যার ও ম্যাডাম কে প্রনাম করে সবাই একসাথে ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে
গেলাম।
আমি বেরিয়েই সিগারেট খাব বলে একটা দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। এই দোকান থেকেই
বিগত ৩ বছর সিগারেট কিনছি। ততক্ষণে সবাই এগিয়ে গেছে। আমি সিগারেট টা ধরিয়ে
দোকানদারকে বিদায় জানিয়ে ঘুরে দেখি নীরা দাঁড়িয়ে। আমি বললাম-
- -কি ব্যাপার! এখানে দাঁড়িয়ে??
- -কেন এখানে দাঁড়ানো বারন?
- -না, তা নয়। সবাই এগিয়ে গেছে, তুই যাসনি, তাই জিজ্ঞেস করলাম।
- -আসলে, তোকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিল।
- -কি? কি জিনিস??
ও আমার হাতে একটা ভাঁজ
করা কাগজ ধরিয়ে দিল। আমি ওটা খুলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ও বলল- বাড়িতে গিয়ে দেখিস।
চল তাড়াতাড়ি, ওরা অনেকটা এগিয়ে গেছে।
বাড়িতে ফিরে দেখি দাদা, বাবা সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে গেছে,
সঙ্গে মিষ্টি। সময়টা বেশ হৈ-হুল্লড় করে কাটছে। কিন্তু মনটা পড়ে আছে সেই নীরার
দেওয়া ভাঁজ করা কাগজটায়। সুযোগ ই পাচ্ছি না ওটা দেখার। মা রাতের বেলায় আমার
পছন্দের খাবার রান্না করেছে। বেশ তৃপ্তি করেই খেলাম। বিগত এক বছর এই তৃপ্তি টা
পাইনি। খাওয়ার পর নিজের ঘরে গেলাম, এবার সুযোগ এল কাগজ টা দেখার। খুলে দেখি একটা
কবিতা। এমন সময় দাদা এসে দরজা খুলে বলল- আজ আর পড়া নয়, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়। বলেই
লাইট টা নিভিয়ে দিল। আমিও সুবোধ বালকের মত চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হাজার
চেষ্টা করেও ঘুম এলনা। শেষ পর্যন্ত দরজায় খিল দিয়ে টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে কাগজটা
পড়তে বসলাম।
অনির্বাণ,
আমি জানি তুই হয়ত কষ্ট পেয়েছিস, তোর চিঠির উত্তর দিইনি বলে।
আসলে তোর চিঠির উত্তর দেওয়ার মত ভাষা ছিল না আমার কাছে, আর ঠিক তোর মত মুখেও কিছু
বলতে পারছিলাম না। এখনও এটা লিখতে বসে আমার হাত টা কাঁপছে।
একটা কবিতা লিখে ফেললাম, এই কবিতাটা, এটা তোর জন্য। হ্যাঁ, শুধু
তোর ই জন্য...
যেথায় আজ চোখ তুলে চাই,
দেখি তোমায়,
তবু তুমি পাশে নাই,
কাছে পাওয়ার ই অপেক্ষায়,
থাকি জাগরনে,
সেই আসাতেই কাটে
দিবানিশি, বিনিদ্র ক্রন্দনে।
অন্তরে আজ তোমাকেই পাই,
যতবার পাই,
আবার হারাই,
ভালবাসা আজ বাধ মানে না,
সীমার বাঁধনে,
নীরা তোমায় ভালোবাসে,
কারনে-অকারনে।।
সমাপ্ত
Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine.
ভাল......খুব ভাল, কিন্তু কোথাও যেন ২ টো জিনিস পেলাম না খুঁজে। আশা করি, নীরার পরের পর্ব তে সেটা খুঁজে পাবো।
ReplyDeleteএকটা ছোট্ট সমালোচনা, লেখকের প্রতি, শেষ পর্ব টা পড়ে মনে হল, যেন প্রথম টার তুলনায় বড্ড তাড়াহুড়ো করে লেখাটা শেষ করা হয়েছে। প্রথম টা বেশি উপভোগ করেছিলাম লেখকের আঙ্গিকে।