শতবর্ষের
আলোয়
রবীন্দ্রনাথের
নোবেল পুরস্কার
বিজয়ের কাহিনী
---- ফিরে
দেখা
প্রেমানন্দ
ঘোষ
(একটা
ছোট্ট সংশোধনের
পরে আমার
এই সংখ্যার
বক্তব্যে আসছি।
গত সংখ্যায়
প্রকাশিত ‘Waste
Land’ নামক
কবিতাটি আমারই
ভুল বশত
‘West Land’ নামে
ছাপা হয়,
এবং লেখার
ভুলে এখানে
কবিতাটির রচয়িতা
ইয়েট্স
বলে ভ্রম
হয়।
যদিও কবিতাটির
আসল কবি
হলেন টি
এস এলিয়ট।)
আগের
সংখ্যার পর...
“Gitanjali, Song Offerings”- এর
জন্য কবিকে
যে নোবেল
পুরষ্কারে ভূষিত
করা হল,
তা কিন্তু
অতি সহজে
সম্ভব হয়
নাই।
প্রতিবন্ধকতা অনেক
ছিল।
ইংল্যান্ড ছাড়া
ইউরোপের অন্যান্য
দেশে কবি
পরিচিত ছিলেন
না।
“Gitanjali, Song Offerings” ছাড়া
কবির অন্যান্য
রচনার সঙ্গে
বিশেষ কেউ
পরিচিত ছিলেন
না।
“Gitanjali, Song Offerings”- এর
প্রকাশের পর
কবি উৎসাহিত
হয়ে ডাকঘর,
মালিনী,
রাজা
প্রভৃতি নাটক
অনুবাদ করেন।
ডাকঘর মঞ্চস্থ
হয়।
প্রযোজনা করেন
ইয়েট্স।
অন্যতম দর্শক
ছিলেন কবির
গুনমুগ্ধ টমাস
স্টার্জ মুর।
ভগিনী নিবেদিতা
“Gitanjali, Song Offerings”- এর
আগে কয়েকটি
ছোটগল্পের অনুবাদ
করেন।
তার মধ্যে
‘কাবুলিওয়ালা’
অন্যতম।
আর কবি
ইয়েট্স
“Gitanjali, Song Offerings”- এর
ভূমিকায় ভূয়সী
প্রশংসা করে
লেখেন, “ আমরা
এই অত্যাশ্চর্য
রচনায় অভিভূত
নই, আমরা
মুগ্ধ; কারণ
এর মধ্যে
আমরা আমাদের
ছায়া দেখতে
পাচ্ছি”।
যাই হোক
কবির কএকজন
শুভানুধ্যায়ীর
উদ্যোগে কবির
নাম নোবেল
কমিটির কাছে
পাঠানো হল।
রয়্যাল সোসাইটির
সদস্য স্যার
টমাস স্টার্জ
মুর সুইস
একাডেমীর কাছে
কবির নাম
প্রস্তাব করেন।
কিন্তু কি
এমন ঘটনা
ঘটলো যার
ফলে আন্তর্জাতিক
বিচারকদের কমিটি
একজন বাঙালী
কবিকে এই
গউরব মুকুটে
ভূষিত করলেন।
সম্ভবত ১৯১৩
সালের নোবেল
কমিটির চিন্তাধারাকে
বেশী প্রভাবিত
করেছিল গীতাঞ্জলীর
আদর্শবাদ/আধ্যাত্মবাদ(idealism)।
তাছাড়া আলফ্রেড
নোবেলের উইলে
একটি শর্ত
আছে যে
পুরস্কার প্রাপককে
আদর্শবাদী/
আধ্যাত্মবাদী
প্রবণ হতে
হবে।
এই কারনে
নোবেল কমিটির
প্রধানের সন্দেহ
ছিল “Gitanjali, Song
Offerings” কবির
নিজস্ব রচনা,
নাকি
ভারতীয় ধ্রুপদী
কাব্যের অনুকরণ।
তদানীন্তন সুইডেনের
বিখ্যাত কবি
ভারনার ভন
হেইডেন্স্টাম
(১৯১৬
সালের সাহিত্যে
নোবেল পুরস্কার
জয়ী) রবীন্দ্রনাথের
পরিত্রাতার ভূমিকায়
অবতীর্ণ হলেন।
তিনি এর
উত্তর দিলেন
–
“Just as a selection of Goethe’s
poems could well convince us of Goethe’s greatness, even we were
unfamiliar with his other writings, so we can say quite definitely of
these poems by Tagore, which we have in this summer, that through
them we have come to know one of the very greatest poets of our age”
(যদি
আমরা গ্যেটের
অন্যান্য রচনাবলীর
সঙ্গে পরিচিত
নাও থাকি,
তথাপি
তাঁর নির্বাচিত
একগুচ্ছ কবিতাই
তাঁর মহত্ব
/ শ্রেষ্ঠত্ব
সম্বন্ধে আমাদের
সম্যকরূপে উপলব্ধি
করাতে পারবে।
সুতরাং আমরা
সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে
বলতে পারি
রবীন্দ্রনাথের যে
কবিতাগুলি এই
গ্রীষ্মে আমাদের
হাতে এসেছে
সেগুলির মাধ্যমে
আমরা জানতে
পেরছি যে
তিনি আমাদের
কালের অতি
মহান কবিদের
একজন)।
এরপর আর
কোনও কথা
চলে না।
সৃষ্টি হল
ইতিহাস।
কবির জীবন-দেবতা
অলক্ষ্যে হাসলেন।
আমরা
সে সময়ের
ইউরোপের সামাজিক
ও রাজনৈতিক
অবস্থা পর্যালোচনা
করলে জানতে
পারব কেন
তাঁরা রবীন্দ্রনাথকে
পরিত্রাতার ভূমিকায়
দেখেছিলেন।
সে সময়
দু’দুটি
বলকান যুদ্ধ
হয়ে গেছে।
ইংরেজরা বুয়োর
আক্রমণ করেছে।
বুয়োরজাতি সে
আক্রমণে বিপর্্যুস্ত,
ক্ষত-বিক্ষত।
উত্তর পুর্ব
ইউরোপ অগ্নিগর্ভ।
আকাশে ঘনমেঘ
ঘনিয়ে আসছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
প্রস্তুতি চলছে।
আগ্রাসী ধনতন্ত্র,
উদগ্র
জাতিপ্রেম ও
যন্ত্রশক্তির
নিষ্ঠুর নিষ্পেষণে
এবং অন্তর্বিরোধে
পাশ্চাত্যের
স্পর্শকাতর জাতিসত্তা
জর্জরিত ও
বিপন্ন।
তারা চাতকের
মতো শান্তিবারি
প্রার্থনা করছে।
“Gitanjali, Song Offerings” জাতি
ও সংস্কৃতিগত
ঐক্যের কথা
না বললেও
মরমিয়া ভাবের
গভীর আকুতি
ও প্রশান্তির
কথা আছে।
কবি সকল
মানুষের প্রানের
প্রদীপ জ্বালিয়েছেন।
গানের অঞ্জলি
দান করেছেন
ঈশ্বরকে, অন্তর্বেদনায়
বিপর্যস্ত সর্বকালের
মানুষকে।
“Gitanjali, Song Offerings”-এর
এই শান্তির
বাণী, প্রেম
ও সম্প্রীতির
কথা ইউরোপের
মানুষকে উজ্জীবিত
করেছিল।
বিদেশে
কবি-খ্যাতির
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
হোলেও, স্বদেশে
তাঁর খ্যাতি
গেল আরও
বেড়ে।
সমস্ত দেশ
এই সম্মানে
গৌরব বোধ
করে আনন্দ
প্রকাশ করতে
লাগলো।
প্রভাত কুমার
মুখোপাধ্যায় লিখেছেন
– “কলকাতার শিক্ষিত
ভদ্রজন কবিকে
শান্তিনিকেতনে
সম্বর্ধনা করতে
এলেন।
প্রায় পাঁচশত
নর-নারী
স্পেশাল ট্রেনে
করে বোলপুরে
পৌঁছলেন ১৯১৩
সালের ২৩
শে নভেম্বর।
এঁরা যে
কবির নোবেল
প্রাইজ পাওয়ার
সংবাদ পেয়ে
সংবর্ধনার আয়োজন
করেছিলেন তা
নয়।
কলকাতার টাউন
হলে কবিকে
সম্বর্ধিত করার
আয়োজন হচ্ছিল,
এমন সময়
নোবেল পুরস্কার
প্রাপ্তির খবর
এল।
তখন কলকাতার
উৎসাহীরা ঠিক
করলেন শান্তিনিকেতনে
কবির আপন
স্থানে গিয়ে
তাঁদের সম্মান
ও প্রীতি
জানিয়ে আসবেন।
শান্তিনিকেতনের
আম্রকুঞ্জে উৎসব
হল।
সভাপতি করা
হল আচার্য
জগদীশ চন্দ্র
বসুকে।
নানা প্রতিষ্ঠান
ও বিভিন্ন
সম্প্রদায় কবিকে
মানপত্র দিলেন।
সেদিনকার শ্রদ্ধা
নিবেদনের মধ্যে
বাঙালির কোনও
কপটতা ছিল
না।
কিন্তু কবির
মনে কি
একটা ক্ষোভ
ছিল, অকস্মাৎ
সেদিন প্রকাশিত
হয়ে পড়লো।
অভিমান ভ’রে
কবি সেদিন
বলেছিলেন, ‘আজ
আপনারা সম্মানের
যে সুরাপাত্র
আমার সামনে
তুলে ধরেছেন
তা আমি
ওষ্ঠের কাছ
পর্যন্ত ঠেকাব
কিন্তু এ
মদিরা অন্তরে
গ্রহণ করতে
পারবো না’।
শোনা যায়
কবিকে লেখা
অত্যন্ত তিক্ত
একখানি চিঠি
সেদিনই তাঁর
হস্তগত হয়,
আর সভায়
উপস্থিত এমন
কয়েকজনকেও একেবারে
সামনের সারিতে
দেখলেন যাঁরা
বরাবর কবিকে
অনাদর করে
এসেছেন।
সম্বর্ধনার আয়োজন
কৃত্রিম বলে
তাঁর মনে
হল।
তাই প্রতিভাষণে
এমন কড়া
কথা বললেন
যাতে কবির
ভক্ত অভক্ত
সকলেই অত্যন্ত
ক্ষুন্ন ও
অসন্তুষ্ট হয়ে
ফিরে গেলেন।
তাঁর ঐ
ভাষণ নিয়ে
সমসাময়িক কাগজপত্রে
বহুদিন ধরে
বহু আলোচনা
চলেছিল”।
কবির এক
জীবনীকার লিখেছেন।
“২৩ শে
নভেম্বর ছিল
কবির স্ত্রীর
ও কনিষ্ঠ
পুত্রের মৃত্যুদিন।
হয়তো এই
দেশব্যাপী গৌরবের
দিনে তাঁদের
কথা স্মরন
করে তাঁর
মন স্বভাবতই
ভারাক্রান্ত ছিল।
কবিও মানুষ,
যতই শান্ত
সংযত হন
তাঁর মন
মানুষেরই মন”।
যাইহোক সুখ্যাতির
ফলে কবির
বইয়ের বিক্রি
বেড়ে গেল।
ইংল্যান্ড থেকে
ভালোরকম টাকা
আসতে লাগলো।
১৯১৩
সালের ১৩ই
নভেম্বর সুইডিশ
সরকার রাজধানী
স্টকহোমে ঘোষণা
করেন রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের নাম
১৯১৩ সালের
সাহিত্যে নোবেল
পুরস্কারের জন্য
মনোনীত করা
হয়েছে।
১৪ই নভেম্বর
সুইডিশ সরকারের
পক্ষ থেকে
কবিকে স্বীকৃতি-পত্র
(Acceptance Letter) পাঠাবার
জন্য অনুরোধ
করে তারবার্তা
পাঠানো হয়।
কবি ১৭ই
নভেম্বর উত্তর
পাঠান।
২০শে নভেম্বর
সুইডিশ একাডেমী
পুনরায় তারবার্তায়
জানান যে
১০ই ডিসেম্বর
স্টকহোমে কবির
হাতে সম্মানের
সঙ্গে নোবেল
পুরস্কার অর্পণ
করা হবে।
কবিকে ঐদিন
উপস্থিত থাকার
জন্য আমন্ত্রণও
ঐ তারবার্তায়
ছিল।
এই সীমিত
সময়ে (মাত্র
২০ দিন)
কবির
পক্ষ্যে স্টকহোমে
যাওয়া সম্ভবপর
ছিল না
(সে
সময়ে জলপথে
বোম্বে বা
অধুনা মুম্বাই
থেকে জাহাজে
ইংল্যান্ড যেতেই
২৭/২৮
দিন সময়
লাগতো, বিমান
পরিসেবা স্বাধীনতার
পরে শুরু
হয়)।
সুইডিশ একাডেমী
কবির পক্ষ
থেকে পুরষ্কার
গ্রহণের জন্য
আমন্ত্রণ জানাল
সুইডেনের তদানীন্তন
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত
মিঃ ক্লাইভ
কে; তাঁরা
জানতেন ঐ
অনুষ্ঠানে কবির
যোগদান সম্ভবপর
নয়।
মিঃ ক্লাইভ
তখন বাংলার
ছোটলাট মিঃ
কারমাইকেলের মাধ্যমে
কবিকে অনুরোধ
করেন সুইডিশ
একাডেমীকে কিছু
লিখে দেবার
জন্য।
কবি সেই
পরিপ্রেক্ষিতে
নিম্নোক্ত তারবার্তাটি
পাঠান-
“I beg to convey to the Swedish
Academy my grateful appreciation of the breadth of understanding
which has brought the distant near and has made a stranger brother”
“সংস্কারমুক্ত
দরাজ মানসিকতায়
দূরকে নিকট
এবং পরকে
আপন করার
দৃষ্টান্তমূলক
সমাদরকে আমার
সবিনয় ও
সকৃতঞ্জ স্বীকৃতি
জানাচ্ছি”
সুইডিশ
একাডেমীর নথীতে
এই লেখাটি
কবির ব্যাঙ্কোয়েট
ভাষণ হিসেবে
সংরক্ষিত আছে।
১৯২১ সালে
কবি সুইডেন
গেলে একাডেমীর
সামনে একটি
লিখিত ভাষণ
দেন, পুরস্কার
প্রাপককে একবার
একাডেমীর সামনে
এসে ভাষণ
দেওয়াটাই রীতি।
প্রবন্ধের শেষে
ভাষণটির বঙ্গানুবাদ
তুলে দেওয়া
হল।
১০ই
ডিসেম্বর ১৯১৩
মিঃ ক্লাইভ
কবির পক্ষ
থেকে পুরস্কারতি
গ্রহণ করে
পাঠিয়ে দেন
কলকাতার ছোটলাট
মিঃ কারমাইকেলের
কাছে।
তিনি ১৯১৪
সালের ৯ই
জানুয়ারি একটি
ভব্য অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে কবির
হাতে পুরস্কারটি
তুলে দেন।
পুরস্কার মুল্য
ছিল ৮০০০
ব্রিটিশ পাউন্ড
বা ১,২০,০০০
টাকা (প্রায়)
ও একটি
সোনার পদক।
পুরস্কার প্রদানের
কারন হিসেবে
যা নথিভুক্ত
আছে তা
হোল-
"because of his profoundly
sensitive, fresh and beautiful verse, by which, with consummate
skill, he has made his poetic thought, expressed in his own English
words, a part of the literature of the West".
(“ কবি
গভীর সংবেদনশীল,
প্রানবন্ত
ও সুন্দর
কবিতার মাধ্যমে
তাঁর কাব্য
ভাবনা অনবদ্য
দক্ষতায় পাশ্চাত্য-সাহিত্যের
একটি অংশ
নিজস্ব ভাষায়
প্রকাশিত করেছেন”)
১৯২০
সালের জুন
মাসে কবি
ইংল্যান্ড গেলেন।
পুরানো বন্ধুদের
সঙ্গে ভোজসভা,
আলোচনা
হল।
কিন্তু সেখানে
কবি উপলব্ধি
করলেন ‘নাইট’
উপাধি ত্যাগ
করার ফলে
কিছুসংখ্যক রাজভক্ত
ইংরেজরা তাঁর
সঙ্গে দূরত্ব
বজায় রেখে
চলছেন।
কবি এখান
থেকে আমেরিকা
গিয়ে কয়েকমাস
থেকে আবার
ইংল্যান্ডে ফিরে
আসেন (২৪
মার্চ ১৯২১)
সেখান
থেকে ফ্রান্স,
জার্মানি
ও সুইজারল্যান্ড
হয়ে ডেনমার্কে
আসেন।
সর্বত্র কবিকে
বিপুলভাবে স্বাগত
ও সম্বর্ধনা
জানানো হয়।
কবি সুইডেনে
উপস্থিত হলে
তাঁকে সম্বর্ধনা
দেবার জন্য
স্বতস্ফুর্ত বিশাল
জনসমাগম হয়।
সুইডেনের রাজধানী
স্টকহোমে কবিকে
স্বাগত জানানোর
জন্য সুইডিশ
একাডেমীর সদস্যগন
স্টেশনে উপস্থিত।
বাইরে বিরাট
জনতা।
সুইডিশরা যে
ভারতীয় কবিকে
নোবেল প্রাইজ
দিয়ে সম্মানিত
করেছিল তাঁকে
দেখার জন্য
সমস্ত নগর
যেন ভেঙ্গে
পড়ছে।
নোবেল প্রাইজের
নিয়মানুসারে
পুরস্কৃতকে অন্তত
একবার এসে
একাডেমীর সম্মুখে
কিছু বলে
যেতে হয়।
কবি ১৯১৩
সালে এখানে
আসতে পারেন
নি।
দুই লাইনের
একটি ধন্যবাদ
বার্তা একাডেমীর
কাছে পাঠিয়ে
দেন টেলিগ্রাম
মারফত।
এখন কবিকে
ভাষণ দিতে
হল।
১৯২১ সালের
২৬ মে
কবি লিখিত
ভাষণ দিলেন।
কবি
তার ভাষণে
প্রাচ্যের প্রাচীন
সভ্যতা ও
আধ্যাত্মিকতার
সঙ্গে পাশ্চাত্যের
উন্নত সভ্যতার
মিলন ঘতিয়ে
এক নতুন
সভ্যতা ও
সংস্কৃতি গড়ে
তুলতে চেয়ে
ইউরোপ বাসীদের
সহযোগিতা চেয়েছেন।
কবির ভাষণান্তে
উপ্সালা
গির্জার আর্চবিশপ
বললেন ঋষি
ও শিল্পীর
সমন্বয় হয়েছে
কবির মধ্যে
– নোবেলের সাহিত্য
পুরস্কার যোগ্য
পাত্রেই অর্পিত
হয়েছে।
অভিভূত আর্চবিশপ
সেখানকার ক্যাথিড্রালে
কবিকে বক্তৃতা
দেবার নজিরবিহীন
সম্মান দিলেন।
এই নগরের
আর্চবিশপ উপস্থিত
থাকতে অন্য
কেউ চার্চের
মধ্যে বক্তৃতা
দেবার সম্মান
পাননি, সেখানে
একজন ভিন্নধর্মী
মানুষের কাছে
এই সম্মান
ইতিহাসের পাতায়
নথিবদ্ধ হয়ে
রইল।
ইউরোপের আরও
কয়েকটি দেশ
ঘুরে কবি
দেশে ফিরলেন
১৯২১ সালের
জুলাই মাসে।
ইউরোপের
সর্বত্র কবিকে
বিশেষ সমাদরের
সঙ্গে গ্রহণ
করা হয়
আর বিশিষ্ট
অতিথির সম্মান
দেওয়া হয়।
তাঁকে দেখতে
ও তাঁর
বক্তৃতা শোনার
জন্য সর্বত্র
বিপুল জনসমাগম
হয়।
আমাদের মনে
রাখতে হবে
যে কবি
নোবেল পুরস্কার
পাওয়ার আট
বছর পরে
ইউরোপ ভ্রমণে
যান।
এতদিন পরেও
সেখানকার সাধারণ
মানুষজন যেভাবে
কবিকে আন্তরিক
স্বাগত জানান
ও আতিথেয়তা
দেখান, তাতে
কবি অভিভূত
ও আপ্লূত
হন।
তিনি ইউরোপবাসীর
মনের মণিকোঠায়
স্থান পেয়েছেন।
নোবেল প্রাপ্তির
মত এও
একটি বিরল
ঘটনা।
এক বাঙালী
কবির বিশ্ববিজয়
ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে
লিখিত হল।
আমরা
এমনই হতভাগা
যে নোবেল
কমিটি প্রদত্ত
স্বর্ণ পদকটি
আমরা সযত্নে
রক্ষা করতে
পারি নাই।
শতবর্ষ পূর্ণ
হওয়ার কয়েক
বছর আগে
(২৪ শে
মার্চ ২০০৪
সালে) সেটি
বিশ্বভারতীর
সংগ্রহশালা থেকে
চুরি হয়ে
যায়।
আজ অবধি
তাঁর কোন
হদিস পাওয়া
গেল না।
এই ঘটনা
অত্যন্ত লজ্জা
ও পরিতাপের
বিষয়।
দেশ ও
জাতির কলঙ্ক।
২০১০-২০১১
সালে কবির
জন্ম সার্ধ
শতবর্ষ উৎসব
সারম্বরে ভারতবর্ষ
সহ সমগ্র
বিশ্বে পালিত
হয়েছে।
তাঁর নোবেল
পুরস্কার লাভের
শতবর্ষ শুরু
হয়েছে ১৩ই
নভেম্বর ২০১২
সালে।
তিনি যে
বিশ্বের মহান
কবিদের মধ্যে
অন্যতম টা
সর্বজন বিদিত।
সাহিত্যের সকল
বিভাগে গল্পে,
উপন্যাসে,
নাটকে,
প্রবন্ধে,
কবিতায়
তাঁর বিশিষ্ট
অবদান রেখে
গেছেন।
শিল্প; সঙ্গীত
ও নৃত্যনাট্যে
ও তাঁর
প্রতিভার সাক্ষর
বহন করছে।
তাঁর মানস-প্রতিমা
বিশ্বভারতী
বিশ্ববিদ্যালয়কে
তিনি আন্তর্জাতিক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
পরিণত করে
গেছেন।
এই শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে তিনি
ভারতীয় ঐতিহ্যের
সঙ্গে সামঞ্জস্য
রেখে তাঁর
চিন্তাভাবনার রূপ
দিয়েছেন।
বিশ্বমানবতার কথা,
সার্বজনীন
শিক্ষা ব্যাবস্থার
কথা, প্রাচ্য
ও পাশ্চাত্যের
মিলনের কথা
কেবল বক্তৃতা
কিংবা লেখায়
সীমাবদ্ধ না
রেখে তাঁর
চিন্তাধারাকে
বাস্তবে পরিণত
করে গেছেন।
এ তাঁর
এক বিরল
কৃতিত্ব।
কবি
“Gitanjali, Song Offerings”-এর
মাধ্যমে যে
শাশ্বত বাণী
বিশ্ববাসীর কাছে
প্রচার করে
গেলেন তা
চিরকাল অক্ষয়
থাকবে।
কবি তা
জানতেন।
তাই তো
ভবিষ্যৎ- বাণী
করে গেছেন
------
“কে
তুমি পড়িছ
বসি আমার
কবিতাখানি,
কৌতুহল
ভরে,
আজি
হতে শতবর্ষ
পরে?”
ঋণ-স্বীকার
–
১)
রবীন্দ্র
জীবনকথা -- প্রভাত
কুমার মুখোপাধ্যায়
২)
নোবেল
পুরষ্কারের ইতিবৃত --
শ্রীমন্ত
কুমার জানা
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Like our
Facebook Page- http://www.facebook.com/phoenix.punoruday
Asadharon. Probondho ti pore riddho holam...
ReplyDelete