Friday 15 February 2013

Golpo: Fera by Sumana Bhattacharyya


ফেরা
সুমনা ভট্টাচার্য্য

মদের বোতল থেকে আরো কিছু টা তরল ঢালল গ্লাসে সুজয়। পানীয়ে অল্প চুমুক দিল সে, একটা হাল্কা ভাললাগা ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। কয়েককুচি সল্টেড কাজুবাদাম তুলে নিল ডান হাতে, একটা দুটো করে মুখে ফেলল। ক্রমশঃ মাথায় জমাট কষ্ট টা সরছে, অবশ হয়ে যাচ্ছে অনুভূতির সরষেদানা গুলো, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে শিরায়-শিরায়। একটা সিগারেট বের করল প্যাকেট থেকে, আনমনা ভাবে ঠুকে, লাইটার দিয়ে ধরিয়ে, দিল এক সুখটান। দুই প্যাকেট ফিল্টার উইলস উড়িয়ে দেয় সে অনায়াসে প্রতিদিন। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ইউরিক এসিড, সব রকম, মাঝ বয়েসী অসুখ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। সারাদিন অফিস করে ফিরে এসেছে মেসে। সুজয়ের বয়েস সাতচল্লিশ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মাঝারি উচ্চতা, পরনে পাজামা পাঞ্জাবী। চুলে পাক ধরেছে, বছর তিনেক হল, আপাতত কালিমার পরশ চুলে, জুলফি একটু সাদা। এরকম থাকলে নাকি বেশ মার্জিত রুচি দেখায়, স্ত্রী সোহিনীর মত। সোহিনীর কোন কথাই সে ফেলতে পারে না, মনেপ্রাণে ভালবাসে তাকে। সোহিনীর সাথে প্রথম আলাপের স্মৃতি, এখনো টাটকা তরতাজা, তার কাছে। কলেজের বন্ধু সোমনাথের সাথে, সুজয় গিয়েছিল রবীন্দ্র-সন্ধ্যার এক অনুষ্ঠানে। সেখানে একটি মেয়ে খুব সুন্দর আবৃত্তি করল, অনুষ্ঠানের শেষেও তাঁর রেশ রয়ে গিয়েছিল সুজয়ের মনে। সোমনাথ বিচক্ষণ, সেই ঘোর এড়ায় নি তার চোখ। সে সুজয় কে বলল, ‘কি রে আলাপ করবি?’ সুজয় চমকে যায়, বলে, ‘কার সাথে?’। সোমনাথ বলে, ‘কার সাথে আবার, সোহিনীর সাথে। আমার বোন মিতালির সাথে এক ক্লাসে পড়ে ও, আমাদের বাড়ি তে আসে, আমায় দাদা বলে ডাকে’। সুজয় কে সাথে নিয়ে সোমনাথ, মঞ্চের দিকে এগোয়। সোহিনী সোমনাথ কে দেখে বলে, ‘কেমন আছো দাদা? কেমন লাগল অনুষ্ঠান? মিতালি সাথে আসেনি?’ সোমনাথ বলে, ‘তোর অনুষ্ঠান সব সময় ভালো লাগে রে, তুই প্রতিটা শব্দ এত নিখুঁত ভাবে উচ্চারণ করিস, কবিতা শ্রোতার মননে প্রবেশ করে অনায়াসে। মিতালি আসেনি রে আজ, মায়ের আজ সকালে হঠাৎ জ্বর, বাড়ির কাজকর্মে, মায়ের শুশ্রূষায় ব্যাস্ত সে, ছুটির দিনে। তোর সাথে আমার বন্ধু সুজয়ের আলাপ করিয়ে দেই। ও আমার সাথেই পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে। খুব ভালো কবিতা লেখে। ওর কবিতা প্রকাশ পায় কলেজ ম্যাগাজিনে’। সোহিনী হাসি মুখে, তাঁর দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করল। সোহিনীর পরনে নীল জরিপাড় ধান রঙা তাঁতের শাড়ী, কপালে বড় গোল নীল টিপ, ভ্রমর কালো চোখে সূক্ষ্ম কাজলের রেখা, নাকে নাকছাবি, হালকা সোনার গয়না, কানে গলায় হাতে। হালকা ঘাড়খোঁপায় সাদা জুঁইয়ের মালা জড়ানো। সুজয় দু হাত জোড় করে প্রতিনমস্কার জানায়। সেদিন রাতে ঘুমের মাঝে স্বপ্নে সে দেখতে পেল, সমুদ্র থেকে উঠে আসছে এক জলপরী, মৃদু স্বরে আবৃতি করতে করতে তার দিকে, মুখ টা যার অবিকল সোহিনীর মতন।

সময়ের সাথে সাথে পরিচয়ের গভীরতা বাড়ে সুজয় সোহিনীর, দুটো সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ত দুজনে, ঘুরে বেড়াতো নানান জায়গায়। তাঁদের কথা শেষ হতে চায় না আর। বছর দুই এইভাবেই কাটল, তারপর সোহিনী স্নাতক হল পাস কোর্সে, সুজয় ও সান্মানিক স্নাতক হল। সোহিনীর বাড়ি থেকে ওর বিয়ের সম্বন্ধ দেখছে, নানা জায়গা থেকে পাত্রপক্ষ আসছে নিজে থেকেও। সোহিনী সাহস করে, মা কে দিয়ে, সুজয়ের কথা বাবা কে জানালো। বাবা তো রেগে অগ্নিশর্মা। জাতবিভেদ তখন খুব প্রবল মফঃস্বলে, সোহিনীর বাবা প্রবল ভাবে গররাজী ছিলেন বিয়েতে, তাও সবার অমতে বিয়ে করে তারা। অনেক চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে, সেই সময় এই চাকরী টা পায় সুজয়। তারপর কলকাতায় ভাড়া বাড়িতে সংসার পাতা দুজনের। ছেলে প্রীতম এল তাঁদের কোলে, দুই বছরের মাথায়, চাহিদা গুলো বাড়তে লাগল। লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কিনল, দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পাড়ায়। এই আবাসনের আবাসিকদের আর্থিক সাচ্ছল্য অনেক বেশি, তাঁদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। সোহিনী তাঁদের মত হতে চায়, বাঁচতে চায়, তাই নিত্য নতুন আবদার করে তাঁর কাছে। দুটো এসি কিনেছে গত বছর, গরম এড়াতে। গাড়ি, এলসিডি টেলিভিশন, মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন, মডিউলার কিচেন, চিমনী, ছুটিতে বিদেশে ভ্রমন, শপিং মলে পূজোর এবং দৈনন্দিন কেনাকাটা, চাহিদার কি শেষ আছে। ছেলেকে রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করতে চেয়েছিল সুজয়, কারন আবাসিক এই স্কুলে, আশ্রমের পরিবেশে থেকে, চারিত্রিক গঠন দৃঢ় হয় ছেলেবেলা থেকেই, নিজের কাজ নিজে করার ক্ষমতা জন্মায়, যা পরবর্তী জীবনে খুব জরুরী। কিন্তু সোহিনীর স্বপ্ন, ছেলে কে ইংরাজী মাধ্যমের স্কুলে পড়ানো, সুজয় বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছে। প্রীতম পড়ে, কলকাতার ই এম বাইপাস স;লগ্ন হেরিটেজ স্কুলে।
আজ সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস, এই দিন খুব চাপ থাকে। শনিবার রবিবার কলকাতায়, বাড়ির যত জমানো কাজ তা করতে হয়। ব্যাংক, বাজার, সামাজিকতা, ছেলে প্রীতমের পড়ার খোজ খবর নেওয়া, স্ত্রী সোহিনীর কে সঙ্গ দেওয়া তাঁর অভাব অভিযোগ পরামর্শ শোনা। ঘুমোতে ঘুমোতে রবিবার রাত বারোটা হয়ে যায়। সোমবার ভোরে উঠে তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে সুজয়, ট্রেন ধরতে, পৌঁছতে হবে কর্মস্থলে ঝাড়খণ্ডে। আজ সকাল থেকেই হালকা কুয়াশা, পাহাড়ে যেতে পারেনি সে এই বছর পুজোর সময়, তাতে অবশ্য ক্ষতি নেই, আজ পাহাড়ি শহর নিজেই চলে এসেছে, তার সাথে দেখা করতে। এই বছর পয়সা বাঁচাতে গিয়ে, পূজোর সময়, বাইরে কোথাও যাওয়া হয় নি, তাই নিয়ে সুযোগ পেলেই সোহিনী খোঁটা দিতে ছাড়েনা।

চারদিন এইখানে অফিস করে মেসে থেকে, শুক্রবার রাতে ঘরে ফেরা। সন্ধের পর থেকে পানীয়ের আসর বসে মেসে, যার হোতা সে নিজেই। তারপর কিছুক্ষণ বাজী ধরে তাস খেলা, কোনদিন জেতে কয়েকশো টাকা, কোন দিন হারে, তবু খেলার বিরাম নেই। কর্মসূত্রে এর আগেও থেকেছে বাড়ির বাইরে, কিন্তু তখন সে এতোটা বেপরোয়া ছিল না। এটাই হয়ত মিড-লাইফ ক্রাইসিস, যখন মানুষ কিছু টা মরিয়া হয়ে যায়, জীবন টা কে উপভোগ করতে নিজের মতন, এটাই শেষ সুযোগ এমন একটা ভাব। যৌবনে যা করতে পারেনি ভয়ে, লজ্জায়, ইদানী; তা করে ফেলে অনায়াসে। রাত দশটায় রান্নার লোক শিবু, সবাইকে রাতের খাবার দিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে। আজকের মেনু- রুটি, ডাল, বেগুনভাজা, ফুলকপির তরকারি, মা;স আর স্যালাড। পেটপুরে খেয়ে দেয়ে, নির্দিষ্ট বিছানায় শুয়ে পাড়ি দেওয়া ঘুমের দেশে। ঘুমের মাঝে হঠাৎ মনে হয় কেউ তার শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। সে প্রাণপণে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকে, উঠে বসে অকস্মাৎ দেখে এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। চিনতে পারে সে নিজের বাবা কে। বাবা মুর্শীদাবাদে বেলডাঙ্গায়, হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলে অংক পড়াতেন। বাবা তাঁকে ছেলেবেলা সাইকেলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন, তার পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়াতেন আর বোঝাতেন ‘চরিত্রের গুরুত্ব’ মানুষের জীবনে, তার সেই কৈশোরের দিনগুলোতে। বাবা বলেন, ‘খোকা কেমন আছিস?’। সুজয় বলে, ‘বাবা খুব ভালো আছি। প্রীতম ক্লাস এইটে পড়ে, পড়াশুনায় খুব ভালো সে। কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনেছি। এই বছর আই টুয়েন্টি গাড়ি ও কিনেছি’। বাবা বলেন, সে তো বুঝলাম, কিন্তু এত টাকা পাচ্ছিস কি ভাবে? এত টাকা খরচ তোর সৎ পথে আছিস তো? বাবার প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় সুজয়। অনেক রকম লোন নিয়ে কোনো ভাবে এই সব চালায় ও। চাকরীক্ষেত্রে ওর সহকর্মীরা ওকে ঘোর অপছন্দ করে, ওর কাঠ-কাঠ কথাবার্তা, স্বার্থপরতা আর চালবাজির জন্য। কবে সাউথ সিটি মলে গিয়ে কি কিনেছে, কত টাকার বাজার করে প্রতিদিন, ইলেকট্রিক বিল ওঠে কত টাকা- এই সব গল্প সে হরদম করে সহকর্মীদের কাছে। এই কারনে পিছনে ওকে নিয়ে হাসাহাসি ও করে সবাই। তবে ভারচুয়াল দুনিয়া তে সুজয়ের জয়জয়কার। সেখানে তো মুখ থেকে মুখোশ টাকে আলাদা করা যায় না। অনেকেই মনে করে, সে বিরাট চাকুরীজীবী, অনেক তার পড়াশোনা। আগে কত সুন্দর কবিতা লিখত সে, অগুনতি বই পড়ত, সে কবিতা হোক অথবা গদ্য।তবে ভারচুয়াল দুনিয়ার লোকজনের সাথে মিশে অনেক বুদ্ধিজীবী কে দেখেছে সে বিভিন্ন কম্যুনিটির গেট টুগেদারে। তাদের কাছে থেকে মদ্যপানের অভ্যাস আর বাইরের ভড়ং টা রপ্ত করেছে। বড়লোকি ভাব দেখানোর জন্য গাড়ি ও কিনেছে। কলকাতার রাস্তাঘাটের যা অবস্থা তাতে নিজের গাড়ি, সদ্য কিনে, চালানো শিখে, একা–একা চালানো অসম্ভব। তার ওপরে প্রয়োজনের সময় অনেকসময় ড্রাইভার পাওয়া যায় না।
বাবা বলেন, খোকা আমি সব জানি, এখনো ফেরার রাস্তা খোলা আছে, তুই ফিরে যা তোর সেই আগের আমি তে, এভাবে নিজের অন্তরাত্মা কে মেরে, শরীরের ক্ষতি করে তিলতিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাস না। প্রীতম বড় হচ্ছে, মাটি দিয়ে গড়া মূর্তি আস্তে আস্তে পুড়বে, শক্ত হবে জীবন যুদ্ধে, ভাব তো একবার, ও তোর কাছ থেকে কি শিক্ষা পাচ্ছে? মাটির মূর্তি তে এখনো সংশোধনের রাস্তা আছে। সোহিনী বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে, অনেক রকম আবদার করবে তোর কাছে, কিন্তু সব মেনে নিতে হবে, তেমন কথা নেই। ‘ভালো থাকিস খোকা’ বলে, বাবা চলে গেলেন।

ভোর রাত্রে ঘুম ভাঙল সুজয়ের, মনে পড়ল বাবার কথা। যখন চারিদিকে চাপ চাপ অন্ধকার, সবাই ঘুমের অতলে, বিছানার ওমে মুখ ডুবিয়ে, এই সর্বগ্রাসী ঘুমের কালিমাকে দূরে সরিয়ে দিলে ক্ষতি কি। পাখির কিচিরমিচির শব্দ বাইরে শোনা যাচ্ছে, দিনমণি উদয় হবেন পূব দিকে, কত দিন সুর্যোদয় দেখে নি সে। ছবি তোলার খুব নেশা ছিল একসময়, ছুটীর দিনে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়াতো সে, গঙ্গার পাড়ে, বন্দী করত মেঘের কারিকুরি আকাশের গায়ে, লেন্স দিয়ে। হাঁটার জুতো, হাফ সোয়েটার পরে, মাথায় মাফলার জড়িয়ে, হাঁটতে বেরিয়ে পড়ল সুজয়। আকাশ তো সেই আগের মতই সুন্দর আছে, ধীরে ধিরে কমলা রঙ ধরছে এক দিকে। রাতের স্বপ্ন মেখে, শিশিরকণা এখনো জ্বলজ্বল করছে ঘাসের ডগায়। রাস্তাঘাট নির্জন, মনে হচ্ছে যেন কোন অচেনা জায়গায় চলে এসেছে। হয়ত এটাই তার মন, যার মাঝে ঢোকেনি কতদিন সে। ভুল পথে হেঁটে-হেঁটে সে যে অতল খাদের কিনারায় চলে এসেছে, এটা ভেবেই দু- চোখে অজান্তেই জল চলে এল। এই জলেই ধুয়ে গেলো মনের সব কালিমা। নিজের সাথে একাকী হওয়ার সুযোগ সে কতদিন পায়নি এই ভাবে। শুধু দায়িত্ব শুধু চাপ আর অনবরত ছুটে চলা মরীচিকার পিছনে। না আর ঐ পথে যাবে না সে আর, এই প্রতিজ্ঞা করল সে। রাধাচূড়ার ডালে বসা, ফিঙে আস্তে করে লেজ নাড়িয়ে সায় দিল সুজয়ের কথায়। দোয়েল পাখি ও লাফিয়ে উঠল ঘাস থেকে, ছাতিমের ডালে। হেমন্তের সকালের এক অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ সে অনুভব করতে লাগল।
মেসে ফিরে এসে, রান্নাঘরে গেল সে, চা করে ডাকল সহকর্মীদের। তারা তো বেজায় অবাক আর খুশী আজ, সাত সকালে বিছানায় বসে, গরম চা পেয়ে। তারা বলে, ‘কি রে ঘুম হয় নি রাতে’? সুজয় মুচকি হাসে আর মনে মনে বলে, ‘এতদিন তো ঘুমিয়ে ছিলাম’। অন্যদিন সুজয় বাজারে যাওয়া এড়িয়ে যায় বরাবর, আজ নিজে বাজারে গেল সে, নিয়ে এলো সবুজ টাটকা আনাজপাতি, ছোট মাছ। ফিরে দেখে, শিবু এসে আজ অবাক, চা খাওয়া হয়ে গেছে সবার, বাজারে গেছে সুজয়দা। স্নান খাওয়া সেরে অফিসে গেল সবাই দশটায়। সারাদিন অফিসে ভালোই কাটল। আজ অফিস থেকে ফিরে, চা জল খাবার খেয়ে সুজয় অনেক দিন পর কবিতার খাতা খুলল, যেখানে গচ্ছিত রাখা যায় মনের সব ভাবনা এবং রাসায়নিক পরিবর্তন কে।






Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine.

No comments:

Post a Comment