স্বপ্নের
সন্ধানে
বর্ষা
শেঠ
ফেসবুক
টা লগ ইন করতেই নীলাভ কে অনলাইন
দেখল পায়েল। গত কয়েক মাস যাবত
নীলাভ-র সাথে ওর
খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
যদিও নীলাভ কে পায়েল কোনদিনও
দেখেনি। না, নীলাভ
ওর প্রোফাইল এ নিজের কোনও ছবি
দেয়নি। কতবার বলেছে পায়েল
নীলাভ-কে যেন
অন্তত নিজের একটা ছবি দেয়,
পরিচয় জানানোর জন্য।
পায়েলের মনে হয়েছে রাস্তায়
নীলাভ ওর পাশ দিয়ে চলে গেলেও
ও নীলাভ-কে কোনোদিনও
চিনতে পারবে না, তাই
অন্তত নিজের একটা ছবি তো দিতেই
পারে নীলাভ। নীলাভ অবশ্য বলেছে
পায়েল চিনতে না পারলেও সে
পায়েল কে ঠিক চিনে ফেলবে। তা
অবশ্যই সম্ভব কারণ পায়েল নিজের
অনেক ছবিই ফেসবুকে দিয়েছে;
বন্ধুদের সাথে কলেজ
পিকনিক এর ছবি, কুট্টির
সাথে ফ্যামিলি অ্যালবাম সবই
দিয়েছে ওর প্রোফাইল এ।
কুট্টি
হল পায়েলের একমাত্র অভিভাবক।
বাবা-মা গাড়ি
দুর্ঘটনায় যখন মারা গিয়েছিল
তখন পায়েল এর বয়স ৭ বছর আর
কুট্টি তখন এম.এ.
দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিল,
বাড়ি থেকে অনেক দূরে
হোস্টেলে বসে। সেই অবস্থায়
পড়াশোনা, কেরিয়ার
বিসর্জন দিয়ে পায়েল-এর
সব দায়িত্ব একা কাঁধে তুলে
নিয়েছে কুট্টি। কুট্টি কিন্তু
অভিভাবক এর মত নয়, পায়েলের
বন্ধুর মতই মেশে, ওকে
ভীষণ ভাল বোঝেও। কিন্তু পায়েল
তো এখন আর সব কথা কুট্টি কে
বলতে পারে না। এই যেমন পায়েলের
কলেজে অনার্সের যে নতুন সুদর্শন
সুপুরুষ লেকচারার। বয়স মোটামুটি
২৮-২৯। যাকে দেখেই
কলেজের সব মেয়ে ফ্ল্যাট। আর
সেখানেই সুন্দরী পায়েলের
অবস্থা তো আরও করুণ। সে না
পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে
লুকোতে। যেভাবে উদিত স্যার-কে
দেখে ও ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে
থাকছে। হ্যাঁ, পায়েলের
নতুন লেকচারারের নাম উদিত
কিরন দেব। সে নাম যাই হোক,
পায়েলের তো এখন দিনেও
অস্তগামী সূর্যের অবস্থা।
সামনেই পার্ট-II এর
পরীক্ষা আর পায়েল-এর
তো স্যার এর একটা কথাও কাণে
পৌছায় না, ও যেন
সম্মোহিত হয়ে পড়ে। এমনকি
ক্লাসের বাইরে, স্টাফ
কমনরুম এও গিয়েছিল নোটশ নিতে
ওর ক্লাসমেট তিয়াসা কে সঙ্গে
নিয়ে। স্যর কী বলেছিল নোটশ
চাওয়ার সময় ওর মনে নেই। তিয়াসাই
কমন রুম থেকে বেরিয়ে বলছিল
স্যর নাকি স্টাডি মেটিরিয়াল
ক্লাসে সবাইকে দিয়ে দিয়েছেন
আর খুব অবাক হয়ছিলেন পায়েলের
নোটস চাওয়াতে। কারণ তার আগের
সপ্তাহেই পায়েল নোটস চেয়েছিল
বলেই স্যার স্টাডি মেটিরিয়াল
দিয়েছিলেন আগের সপ্তাহে। এই
হচ্ছে পায়েলের সমস্যা। উদিত
স্যর কে দেখলেই ওর সব ঘেটে-ঘ
হয়ে যাচ্ছে।
আজ
নীলাভ-কে অনলাইন
এ ওর এই প্রেম ঘটিত সমস্যার
কথা বলবেই। গত ৫ মাস ধরে নীলাভ
ওর খুব ভালো বন্ধু। কারণ নীলাভ-র
সঙ্গে ওর মতের খুব মিল। তাই
নীলাভ-কে না দেখলেও
নীলাভর প্রতি ওর একটা বিশ্বাস
আর নির্ভরতা গড়ে উঠেছে যদিও
নিলাভ খুব কম অনলাইন দেখা যায়।
নীলাভ কি করে, কোথায়
থাকে কিছুই পায়েল জানে না।
কিন্তু নীলাভ ওর অনেক সমস্যা
শুনেই তার সমাধান করে দেয়।
পায়েলের মতে নীলাভ-র
একটাই দোষ, নীলাভ
ভীষণ ফ্লার্ট করে। কিন্তু
পায়েল এই হেলদি ফ্লার্ট কে
গায়ে মাখে না আর ও ভালমতই জানে
নীলাভ ওর বিষয়ে সিরিয়াস নয়।
নয়ত পায়েলের অনেকবার বলা
সত্ত্বেও নীলাভ কোনদিনও দেখা
করতে আগ্রহ দেখায়নি এমনকি
পায়েল আগ্রহ দেখালে "পরে
হবে" বলে কাটিয়ে
দিয়েছে।
কিন্তু
পায়েলের সমস্যা তো নীলাভ নয়,
সমস্যা হল উদিত কিরণ
কে ঘিরে যার সমাধান করতেই হবে
নীলাভ-কে। পায়েলের
এই উদ্বেগ কমাতে পারে নীলাভ-ই।
শেষমেশ নীলাভ-কে
পায়েল তার উদিত স্যারের কলেজে
আসা থেকে শুরু করে সমস্ত ঘটনা
বলল ধারাবাহিকভাবেই। কিন্তু
তার উত্তরে নীলাভ যা বলল তা
শুনে পায়েল তো লাফিয়ে উঠল।
উদিত কিরন নাকি নীলাভের
নিকটাত্মীয় আর সেই সুত্রে
ওরা খুব ভালো বন্ধুও। তাই
নীলাভ উদিতকে পায়েলের কথা
বললে উদিত নিশ্চয়ই পায়েলের
সাথে বিশেষ সম্পর্কের কথা
ভাববে। কিন্তু সমস্যা উদিতের
মাকে নিয়ে কারণ ভদ্রমহিলা
নাকি ভীষণ খুঁতখুঁতে। তাও
পায়েলের জন্য সেটাও সম্ভব
করবে নীলাভ কিন্তু পরিবর্তে
পায়েলকে তার একটা কথা রাখতে
হবে। পায়েল তো এরকমটা ভাবেনি।
সে তো খুশিতে গদগদ হয়ে বলল যে
সে নীলাভর সব কথা শুনতে রাজী।
কিন্তু পায়েল ভাবতে পারেনি
যে নীলাভ ওর সাথে পায়েলকে একটা
নিশিযাপন করতে বলবে।
পায়েল
তো ভীষণ অবাক হয়ে গেল। প্রথমে
ওর মনে হল নীলাভ নিশ্চয়ই মজা
করছে। কিন্তু নীলাভ ওকে জানাল
যে না, ও কোনোরকমের
মজা করছে না। আর এটাকে মজা
ভাবাটাই পায়েলের চরমতম বোকামি।
যাই হোক, পায়েল
যদি রাজী থাকে তো ওকে যেন মেইল
করে জানায়। কিন্তু এ কি করে
সম্ভব। যতই নীলাভ ওর ক্লোজফ্রেন্ড
হোক না কেন, আলটিমেটলি
তো ফ্রেন্ডই আর নীলাভের কোনও
অস্তিত্ব তো পায়েলের কাছেও
নেই। এছাড়া এখন পায়েল উদিত
কে ভালবাসে সুতরাং উদিত ছাড়া
আর কারো কথা ও ভাবতেই পারবেনা।
এসবই ভাবতে লাগল পায়েল সারাদিন
ধরে, এমনকি রাতে
শুয়েও এসব চিন্তা পায়েলের
পিছু ছাড়ল না।
এভাবে
কয়েকদিন কেটে গেল। পায়েলের
কলেজ যাওয়া শিকেয় উঠল। যা
কুট্টির নজর এড়াল না। সব
বন্ধুদের ফোন করে কুট্টি
পায়েলের কলেজ বয়কটের কারণ
উদ্ধার করতে না পেরে সরাসরি
পায়েলকে জিজ্ঞেস করল যে সে
হঠাৎ কলেজ যাওয়া বন্ধ করল কেন।
প্রথমে কিছু না বলতে চাইলেও
শেষমেশ কুট্টিকে সব বলে ফেলল
পায়েল। নীলাভ থেকে উদিত,
আদ্যোপান্ত সমস্তটাই
বলল কুট্টিকে। কুট্টি সব শুনে
পায়েলকে নিলাভ-র
প্রস্তাব মেনে নিতে বলল আর
সেটা জানিয়ে নিলাভকে যেন পায়েল
মেইল-টা করে দেয়।
পায়েল হতভম্ব হয়ে গেল এ কথা
শুনে। কিন্তু কুট্টি তাকে
আস্বস্ত করলে পায়েল মেল করে
নীলাভ এর প্রস্তাবে সম্মতি
জানাল।
পরেরদিন
সকালে পায়েল দেখে নীলাভ তার
মেল এর রিপ্লাই দিয়ে লিখেছে
যে শহরের নামী হোটেলে নেক্সট
শুক্রবার সন্ধে ৭ টায় পায়েল
যেন চলে আসে, সেখানেই
সে পায়েলের অপেক্ষা করবে
নীলাভ। কুট্টিকেও মেলটা দেখায়
পায়েল।
শুক্রবার
সন্ধে ৭ টা বেজে ১০ মিনিটে
পায়েল কুট্টির সাথে হোটেলের
সামনে এসে দাড়াল। ভেতরে গিয়ে
রিসেপসনে নীলাভের খোঁজ করে
জানল যে নীলাভ রেস্টুরেন্টের
১৮ নং টেবিলে অপেক্ষা করছে।
পায়েলের ভীষণ রাগ হল নিজের
ওপর, রাগে মাথাটা
দপদপ করতে লাগল। সত্যিই ও এখন
অপরিণতমনস্কই রয়ে গেল। এখনও
বন্ধু সিলেকশন করতে আর মানুষ
চিনতে ও কত বড় ভুলটাই না করেছে।
কুট্টি পায়েলকে রেস্টুরেন্টে
যেতে বলল আর বলল যে কুট্টি
রিসেপসনে বসে থাকবে, তবে
কোনরকম বেগড়বাই দেখলেই পায়েল
যেন কুট্টিকে কল করে। পায়েলের
তো একা খুব ভয় করতে লাগল। আগে
পায়েল নীলাভ-কে
দেখতে চেয়ে মিট করতে বলেছে
কিন্তু আজ যেন নীলাভ-র
চেহারাটা জানতে ওর একফোঁটাও
ইচ্ছে করছে না। ওই দিকে যেতেও
ওর পা সরছে না। কোনোরকমে নিজেকে
টেনে ১৮ নং টেবিলের সামনে এসে
দাড়াল পায়েল।
পিছন
ফিরে বসেছিল নীলাভ। কিন্তু
মুখ ঘোরাতেই পায়েল তো হতভম্ব
হয়ে গেল। নীলাভ-র
জায়গায় তার সামনে বসে তার
কলেজের লেকচারার, তার
প্রথম ভালবাসা উদিত কিরন দেব।।
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to
phoenix.punoruday11@gmail.com
for pdf version of this Magazine.
Like our
Facebook Page- http://www.facebook.com/phoenix.punoruday
No comments:
Post a Comment