-->
শাহবাগ
ও কিছু ভাবনা
রামকৃষ্ণ
ভট্টাচার্য্য
আমাদের
মহান পশ্চিম বঙ্গের মধ্যবিত্ত,
সংকীর্ণচেতা
বাম ও ডান পন্থী “মনীষীদের”
বাগবৈদগ্ধ্যের প্রদর্শনী
যে ভাবে এই বঙ্গের রাজনীতিতে
সংবাদ মাধ্যমে মুদ্রিত হয় বা
সন্ধেবেলায় মেক আপ করে বৈদ্যুতিন
মাধ্যম আলো করে,
চ্যানেলের
মর্জিমাফিক “লাইভ” টেলিকাষ্ট
হয়,
সেখানে
এই লেখা পর্যন্ত শাহবাগ নিয়ে
কোনো তথ্য সমৃধ্য আলোচনা চোখে
পড়ে নি ।
“লিভ
টুগেদারের” মত তাই বিভিন্ন
বাংলা চ্যানেল দেখা এবং
সংবাদপত্র পড়লেও,
বাংলাদেশের
শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে,
তাদের
আপাত মৌনতা;
সম্মতির
লক্ষণ যে নয়,
সেটা
বুঝতে আইনস্টাইনের আই.কিউ.
দরকার
পড়ে না।
অনেক
হিসেব নিকেশ আছে এই সব ব্যাপারে
প্রতিক্রিয়া দেবার ব্যাপারে।
ভোটের
বালাই তার মধ্যে একটা।
কিছু
বাণিজ্যিক সংবাদপত্র তাদের
নিজেদের স্বার্থেই (বিক্রি
বাড়ানোর উদ্দেশ্যে)
ইদানীং
কিছু সংবাদ ছাপছেন বটে,
তবে
সেটা চাহিদার তুলনায় নগণ্য
।
মানুষ
কিন্তু,
জানতে
চাইছে কি হচ্ছে বাংলাদেশে!
এদেশের
বাঙালিদের,
বিশেষ
করে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ
মানুষের শেকড় তো ওই দেশে।
তাই,
জানতে
চাওয়াটাই স্বাভাবিক ।
সংবাদ
যাঁরা পেতে চান তাঁদের একটা
বড় প্রহসনের সম্মুখে দাঁড়াতে
হয়েছিল।
যারা
১৯৪৭ য়ের জুলাই মাস পর্যন্ত
ছিলেন ভারত বর্ষে,
আর
যারা সেই ১৯৪৭ য়েই অগাস্টের
পর এলেন ভারতবর্ষে।
সংস্কৃতি,
পরিস্থিতি,
মানুষজন
সম্পূর্ণ আলাদা ।
১৯৪৭-এর
পর তখনকার পূর্ব পাকিস্তান
থেকে আগত সহায়-সম্বলহীন
উদ্বাস্তু কলোনীর বাসিন্দারা
পরিচিত হল “বাঙ্গাল”
হিসেবে।
সবারই
অবস্থা সমান।
সকলেরই
জবর দখল করা জমিতে বসবাস।
তাই
নাম উপনিবেশ বা কলোনি।
প্রতিবেশীর
গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় বস্তু
ধার নেওয়ার চল ছিল,
সেই
সময়ে।
এর
পিছনে যে একদল মানুষের সমূলে
উচ্ছেদের,
জাতি-দাঙ্গার
করুণ কাহিনী আছে তা কেউ জানাল
না,
জানল
না।
দেশছাড়াদের
যন্ত্রণা কেই বা তেমন করে
বোঝে?
প্রখর
বুদ্ধি বা অনুভবি মন থাকলেই
এই যন্ত্রণা বোঝা যাবে না।
পরের
প্রজন্ম,
আমাদেরই
ছেলেমেয়েরা,
আমাদের
অতীতের ভয়াবহ সামাজিক সংঘাত,
নতুন
দেশে বাস,
নতুন
পরিবেশ,
ভিন্ন
সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে
দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামের
কষ্ট বোঝে না।
ঐতিহাসিক
সুমিত সরকার ৪০ দশক,
স্বাধীনতা
ও দেশভাগ পর্যায়কে সনাক্ত
করেছেন “সেসময়ের কংগ্রেস
নেতৃত্বের সুবিধাবাদের পরিচয়
হিসেবে।
উত্তাল
পরিবর্তনকারী জনগণকে যদি
ধার্মিক সংকীর্ণতার বাইরে
নিয়ে গিয়ে ভাত কাপড়ের প্রশ্নে
রাজনীতিকরণ করা যেত হয়তো
মুসলিম বা হিন্দু সাম্প্রদায়িক
রাজনীতিকে এতটা ছাড় দেওয়ার
দরকার পড়ত না।
শোষিত
উপনিবেশের সব মানুষ এক দেশ
হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করত।
কিন্তু
কংগ্রেসি রাজনীতির সে সময়
প্রধান লক্ষ্য দেশভাগ আটকানো
বা অর্থনৈতিক অধিকারের লড়াই
নয়,
যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীন দেশের
ক্ষমতা দখল”।
দেশভাগ-স্বাধীনতাকে
রাজনৈতিক
নেতৃত্বের দেশের মানুষের
সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে
দেখা যায়।
এদিকে
দুইপারে চলছে অবাধ হত্যালীলা।
শাসক
শ্রেণী ক্ষমতার নেশায় মশগুল।
প্রতিটা
মানুষের পরিবার আছে,
সকলেই
খেয়ে পরে বাঁচতে চায়।
খেয়ে
পরে বাঁচাটাই যখন সবচেয়ে বড়
সমস্যা তখন কেন মানুষ সব ছেড়ে
দিয়ে ধর্ম এবং ধর্মীয় পরিচয়
নিয়ে ভাবতে যাবে?
এটা
কেউ বুঝল না!
এই
সময়ে,
শেকড়
থেকে উঠে আসা আগুনের দরকার
ছিল।
আগুনের
তদারকি করার জন্য দরকার ছিল
কয়েকজন।
কিন্তু
তাঁরা (আমায়
ক্ষমা করবেন)
দুপুর
দুপুর মাছভাত সাবড়ে ভাতঘুম
দেওয়ার আগে সিগারেটে আগুন
ধরিয়ে সুখটান দিতে বেশি আগ্রহী
ছিলেন।
তাত্ত্বিক
কচকচানি নিয়ে ব্যস্ত থাকার
জন্য,
তাঁরা
ভারতবর্ষের আবহমান কাল ধরে
চলে আসা জাত-পাত,
ছোটো
জাত,
নিচু
জাত,
বর্ণ
নিয়ে মাথাই ঘামালেন না ।
নবগঠিত
রাষ্ট্র পাকিস্তান দুই হাজার
মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত
দুটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত
হল -
পূর্ব
পাকিস্তান (অধুনা
বাংলাদেশ)
ও
পশ্চিম পাকিস্তান।
ভৌগোলিক
ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যোজন
যোজন ব্যবধানে অবস্থিত এ দুটি
অংশের মধ্যে মিল ছিল কেবল
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে।
সৃষ্টি
হল এমন এক রাষ্ট্রের যার সঙ্গে
তুলনা করা চলে এক অবয়বহীন
পাখীর যার শুধু ডানা দুটো আছে।
সে
ডানা দুটোরও আবার চরিত্রগত
মিল নেই।
ভাষা,
সংস্কার,
আচার
আচরণ সব ভিন্ন শুধু ধর্ম এক
।
তখন
আবার দুই শ্রেণীর মৌলবাদ মাথা
চাঁড়া দিয়ে উঠেছে।
এপারে,
জনসংঘ
(বর্তমানে
“ভাজপা”)
আর
ওপারে জামাত।
একটি
হিন্দুত্ববাদী অপরটি ইসলাম
বাদী।
ভারত
ভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টিতে
এদের বিশাল ভূমিকা।
দুটি
সংগঠনই তৈরি করা হয় রাজনৈতিক
ইসলাম/হিন্দুত্ব
প্রচার করতে।
রাজনৈতিক
ইসলামের/হিন্দুত্বের
উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের
ইসলামী-করণ/হিন্দুত্ব
করণ।
অর্থাৎ
এরা যে রাষ্ট্রেই থাকুক না
কেন এদের উদ্দেশ্য একটাই
-রাষ্ট্রটিকে
মধ্যযুগীয় আদর্শ ইসলামী/
হিন্দু
রাষ্ট্রে পরিণত করা।
হিন্দু/ইসলামের
সমালোচনা এরা সহ্য করে না,
কেউ
হিন্দুত্ব বা ইসলামের বিরোধিতা
করলে কিম্বা হিন্দু বা মুসলিম
হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু/ইসলামী
জীবনযাপন না করলে এরা তাদের
শত্রু গণ্য করে।
পাকিস্তানের
জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ
পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে
বঞ্চিত হতেই থাকে এবং স্বাধীন
বাংলাদেশের জন্ম পর্যন্ত
দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম
পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানকে
শোষণ-বঞ্চনার
ইতিহাস।
প্রথম
দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় যখন
পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ
আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ঘোষণা
করলেন-
"উর্দু
এবং কেবলমাত্র উর্দুই হবে
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা"।
১৯৪৭
সালের জুলাই মাসে আলীগড়
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর
ড.
জিয়াউদ্দিন
আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ
করেন।
সাথে
সাথে পূর্ব পাকিস্তানের
বাঙ্গালীরা এই ঘোষণার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
এর
প্রতিবাদে প্রথম লেখনী ধারণ
করে ভাষাচার্য “ডক্টর
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্”।
প্রায়
সঙ্গে সঙ্গেই আজাদ পত্রিকায়
প্রকাশিত ‘পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ প্রবন্ধে
বলেন-
“পাকিস্তান
ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের
অধিবাসীদের মাতৃভাষা বিভিন্ন,
যেমন
পশতু,
বেলুচি,
পাঞ্জাবী,
সিন্ধী
এবং বাংলা;
কিন্তু
উর্দু পাকিস্তানের কোন অঞ্চলেই
মাতৃভাষা রূপে চালু নয়।
… যদি
বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজি
ভাষা পরিত্যক্ত হয়,
তবে
বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র
ভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে
কোন যুক্তি নাই।
যদি
বাংলা ভাষার অতিরিক্ত কোন
দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ
করিতে হয়,
তবে
উর্দু ভাষার দাবী বিবেচনা
করা কর্তব্য।
… বাংলাদেশের
কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা
ভাষার পরিবর্তে উর্দু বা
হিন্দি ভাষা গ্রহণ করা হইলে,
ইহা
রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর
হইবে।
ড.
জিয়াউদ্দিন
আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের
বিদ্যালয়ে শিক্ষার বাহনরূপে
প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে
উর্দু ভাষার স্বপক্ষে যে অভিমত
প্রকাশ করিয়াছেন আমি একজন
শিক্ষাবিদ রূপে উহার তীব্র
প্রতিবাদ জানাইতেছি।”
১৯৪৮
সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য
সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণে
তিনি বলেছিলেন-
“আমরা
হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য,
তার
চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালি।
এটি
কোন আদর্শের কথা নয়;
এটি
একটি বাস্তব কথা।
মা
প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের
চেহারায় ও ভাষায় বাঙ্গালীত্বের
এমন ছাপ রেখে দিয়েছেন যে
মালক-তিলক-টিকিতে
কিংবা টুপি-লুঙ্গি
দাড়িতে ঢাকবার কোন জো-টি
নেই।”
১৯৪৮
সালের ১১ই মার্চ ঐতিহাসিক
রাষ্ট্রভাষা দিবসে বগুড়ার
আজিজুল হক কলেজের ছাত্রদের
আহ্বানে তিনি হাসিমুখে এগিয়ে
এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
এই
প্রতিবাদ অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে,
জন্ম
দিয়েছিল রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের।
১৯৫২-র
২১ শে ফেব্রুয়ারি তে শহীদ হলেন
বরকত সহ আরও অনেকে ।
পাকিস্তানের
রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত
নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম
সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা
অর্জন করে।
দলটি
পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি
আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ
করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয়
পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়,
যা
আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের
অধিকার প্রদান করে।
কিন্তু
নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা
প্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস
পার্টির নেতা জুলফিকার আলী
ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা
করেন।
তিনি
প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের
দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে
দু'জন
প্রধানমন্ত্রী।
"এক
ইউনিট কাঠামো"
নিয়ে
ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের
মানুষের মধ্যে এরকম অভিনব
প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের
সঞ্চার করে।
ভুট্টো
এমনকি মুজিবের ৬-দফা
দাবি মেনে নিতেও অস্বীকার
করেন।
মুজিব
সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন।
১৯৭১
সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার
রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
এক
ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।
এই
ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয়
পরিষদের অধিবেশনের আগেই
বাস্তবায়নের জন্য চার দফা
দাবি পেশ করেন:
১)
অবিলম্বে
মার্শাল ‘ল'
প্রত্যাহার
করতে হবে।
২)
সামরিক
বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যেতে
হবে।
৩)
নিহত
ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা
অনুসন্ধান করতে হবে।
৪)
২৫শে
মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের
আগে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের
হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে
হবে।
শেখ
মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে
ঘোষণা করলেন,
"এবারের
সংগ্রাম আমাদের মুক্তির
সংগ্রাম,
এবারের
সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"।
তাঁর
এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার
আকাঙ্ক্ষায় উত্তাল করে তোলে।
শেখ
মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী
লীগ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ
নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার
গঠনের অধিকার অর্জন করে,
কিন্তু
পাকিস্তানের সামরিক সরকার
ক্ষমতা কোন পূর্ব পাকিস্তানের
মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি
ছিল না।
মার্চের
৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের
এই দুই নেতা পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে
দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায়
বৈঠকে মিলিত হন।
তবে
বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না।
৩
মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের
অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত
হয়,
কিন্তু
ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান
পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা
জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং
সামরিক বাহিনীর অফিসারদের
নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা
বোনা শুরু করে।
১৯৭১
সালের ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই
৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন
বাতিল করা হয়।
ক্ষুব্ধ
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের
ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে
গেল এই সিদ্ধান্ত।
সারা
দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ
হয়।
ঢাকা
পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।
বঙ্গবন্ধু
সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল এবং
অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
তার
আহবানে সারা পূর্ব পাকিস্তান
কার্যত অচল হয়ে যায়।
সামরিক
সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে
কিন্তু বুলেটের ভয় দেখিয়ে
বাঙ্গালিদের রাজপথ থেকে সরানো
যায় না।
৫
দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স
ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর
ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন।
অনেক
ক্ষোভ এবং বঞ্চনার ইতিহাস
বলার পর তিনি বললেন-
(তাঁর
অননুকরণীয় ভাষায়)
“এরপরে
যদি বেতন দেওয়া না হয়,
আর
যদি একটা গুলি চলে,
আর
যদি আমার লোকদের হত্যা করা
হয়-
তোমাদের
কাছে আমার অনুরোধ রইলো,
প্রত্যেক
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।
তোমাদের
যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর
মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের
তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে
সবকিছু-আমি
যদি হুকুম দেবার নাও পারি,
তোমরা
বন্ধ করে দেবে।
আমরা
ভাতে মারবো,
আমরা
পানিতে মারবো।
তোমরা
আমার ভাই,
তোমরা
ব্যারাকে থাকো,
কেউ
তোমাদের কিছু বলবেনা।
কিন্তু
আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার
চেষ্টা করো না।
সাত
কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে
পারবানা।
আমরা
যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের
ডুবাতে পারবে না।..............
মনে
রাখবা,
“রক্ত
যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো এ
দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো
ইনশাল্লাহ''।
“এবারের
সংগ্রাম আমাদের মুক্তির
সংগ্রাম,
এবারের
সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
“জয়
বাংলা”
অত্যাচার
তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে,
ব্যাপক
হারে নারী ধর্ষণ হয়।
প্রায়
৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর
বাংলাদেশ যুদ্ধে জয়লাভ
করেছিল।
আগেই
বলেছি-
বাংলাদেশেরই
কিছু মানুষ জামাত নাম নিয়ে
স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল
এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে
বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার
বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে
সহায়তা প্রদান করে,
গণহত্যা,
ধর্ষণ,
শারীরিক
নির্যাতন ইত্যাদি চালিয়ে
যায়।
এরাই
পরিচিত হয় “রাজাকার”
নামে।
এখানে
“রাজাকার” শব্দটি নিয়ে দু
একটি বাক্য লেখা যাক:
১৯৭১
সালে বাঙালিরা “রাজাকার”
শব্দের সাথে পরিচিত হয়।
৭১
সালে যুদ্ধরত পাকিস্তান
সেনাবাহিনীকে সহায়তা প্রদানের
উদ্দেশ্যে এই বাহিনী গঠিত
হয়।
‘রাজাকার’
ফার্সি শব্দ।
এর
অর্থ স্বেচ্ছাসেবী।
ভারত
বিভাগ কালে তদানীন্তন হায়দ্রাবাদের
শাসক নিজাম ভারত ভুক্ত হতে
অনিচ্ছুক থাকায় ভারতের সামরিক
বাহিনীকে প্রাথমিক প্রতিরোধের
জন্য রাজাকার নামক একটি
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন
করেন।
১৯৭১
সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন
সময়ে পাকিস্তান সামরিক শাসনকে
সহায়তা করার জন্য মে মাসে
খুলনায় খান জাহান আলী রোডের
একটি অজানা ক্যাম্পে কয়েকজন
পাকিস্তান পন্থী কর্মী নিয়ে
হায়দ্রাবাদের ‘রাজাকার’-এর
অনুকরণে রাজাকার বাহিনী গঠন
করা হয়।
পরবর্তীতে
বাংলাদেশের অন্যান্য অংশেও
রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়।
যুদ্ধকালীন
এই সব সংঘটিত অপরাধের বিচারের
জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি
করা হয়।
১৯৭৫
এর ১৫ ই আগস্ট খুন হন মুজিব
এবং তার পরিবার।
হাসিনা
দেশের বাইরে ছিলেন বলে বেঁচে
যান।
বাংলাদেশে
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের
সময় “আওয়ামী
লীগ”
এর অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক
ইশতেহার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা।
সে
নির্বাচনে তারা নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয়ী
হয়।
প্রতিশ্রুতি
অনুযায়ী আওয়ামী লীগের একজন
সাংসদ ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি
জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারের প্রস্তাব পেশ করলে
তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়।
অবশেষে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের
৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে
অভিযুক্তদের বিচারের জন্য
২০১০ সালের ২৫শে মার্চ
ট্রাইব্যুনাল,
আইনজীবী
প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা
গঠন করা হয়।
আগেই
বলেছি-
বাংলাদেশের-ই
কিছু মানুষ “জামাত”
নাম নিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা
করেছিল এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে
বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার
বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে
সহায়তা প্রদান করে,
গণহত্যা,
ধর্ষণ,
শারীরিক
নির্যাতন ইত্যাদি চালিয়ে
যায়।
যুদ্ধকালীন
এই সব সংঘটিত অপরাধের বিচারের
জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি
করা হয়।
২০০৯
সালে কিছুটা সংশোধন করা হয়।
এ
আইনের আওতায় ২০১০ সালের ২৫শে
মার্চ এ সকল অপরাধের বিচারের
জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।
২০১৩
সালের ২১শে জানুয়ারি
ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে
আবুল কালাম আজাদ (বাচ্চু
রাজাকার)-কে
মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
সারা
দেশ উল্লাসে ফেটে পড়লেও বাচ্চু
রাজাকার বাংলাদেশের জেল থেকে
পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয়
নিয়েছে ততদিনে।
এরপর
৫ই ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়
রায়ে কাদের মোল্লাকে ৩টি
অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড
এবং ২টির জন্য যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কিন্তু
এতো বড় সব অপরাধের শাস্তি
হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে
যারা মেনে নিতে পারেননি,
তাদের
মধ্যে ১৭ জন ব্লগার,
আহমেদ
রাজীব হায়দরের (থাবা
বাবা)
উদ্যোগে
শাহবাগে অহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের
ডাক দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ
করতে শুরু করার কথা বলেন।
সেই
সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে
দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়।
প্রথম
শহীদ হন রাজীব ।
প্রথম
দিকে মুখে বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট
পার্টি (বি.এন.পি)
এর
সমর্থনে কিছু কথা বললেও
রাজাকারদের সংগঠন জামাতীদের
চাপে পিছু হটে।
রাজীবকে
যে বা যারা খুন করেছে তারা
জামাতীদের সদস্য,
এটাও
প্রমাণিত সত্য।
শ্রেণীর
ধারণাটা অনেকের কাছেই ঝামেলা
বলে মনে হয়।
অর্থনৈতিক
ও রাজনৈতিক শ্রেণী যেমন আছে,
তেমন
সাংস্কৃতিক শ্রেণীকরণও সমাজে
হয়ে থাকে।
একটা
বিশেষ কায়েমী স্বার্থবাদী
গোষ্ঠী যখন নিজেদের কর্তৃত্ব
ফলিয়ে,
সবাইকে
আলাদা রেখে সব ক্ষমতা ভোগ করতে
চায়,
তখনই
“শ্রেণীসংগ্রাম” আপনা-আপনি
শুরু হয়।
এই
সংগ্রামটি শুরু হয়েছে,
বাংলাদেশের
নব প্রজন্মের হাত ধরে।
আশার
কথা এই নব প্রজন্ম আগের
দুর্দশাগুলো বুঝতে পেরেছে
।
দেশের
অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য
বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার
মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনার,
চট্টগ্রামের
প্রেসক্লাব চত্বর,
রাজশাহীর
আলুপট্টি মোড়,
খুলনার
শিববাড়ি মোড়,
বরিশালের
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার,
বগুড়ার
সাতমাথা,
যশোরের
চিত্রা মোড়,
কুমিল্লার
কান্দিরপাড়া,
কুষ্টিয়ার
থানা মোড় ইত্যাদি।
শাহবাগের
প্রজন্ম চত্ত্বরের শপথ-
কাদের
মোল্লা সহ প্রত্যেক রাজাকারদের
মৃত্যুদণ্ডের রায় নিশ্চিত
না হওয়া পর্যন্ত চত্বর ছেড়ে
যাবই না।
তাই
বিক্ষোভ এখনও চলছে।
আরও
হত্যা চালাচ্ছে এই রাজাকারের
চেলারা।
সংখালঘুদের
নীপীড়ন,
তাদের
উপাসনা স্থল ভাঙা -যতই
বাড়ছে রাজাকারদের,
ততই
শক্ত হচ্ছে নবীন প্রজন্মদের
চোয়াল।
তিস্তার
জল নিয়ে বাংলাদেশের সমর্থনে
কোথাও কোনো কথা বলা হচ্ছে না
বলে একটা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া
হচ্ছে বাংলাদেশে।
তিস্তার
জল নিয়ে নিশ্চয়ই কথা হবে এবং
হচ্ছে,
তাই
বলে শাহবাগ নিয়ে কোনো সমর্থনের
কথা বলা যাবে না!
এটাও
একরকমের ফতোয়া দিচ্ছেন জামাত
মনোভাবাপন্ন লোকেরা।
হিন্দু
মন্দির ও হিন্দুদের ওপর অকথ্য
নির্যাতন চালাচ্ছে জামাতীরা।
নব
প্রজন্ম আপ্রাণ চেষ্টা করছে,
এই
সবকে ঠেকানোর।
টলানো
যাচ্ছে না,
নবীন
প্রজন্মকে।
৪৪
বছরের স্বাধীনতার সময়ে তাদের
অঙ্গীকার-
ধর্ম
যার যার,
রাষ্ট্র
সবার ।
আমরা
যারা এপারের বাঙালি,
তারা
যদি নৈতিক সমর্থনও না দেই,
তাহলে
বাঙালির এক স্বাধীন,
সার্বভৌম
বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অলীক
থাকবে।
আসুন
গলা মেলাই এদের সাথে।
“জয়
বাংলা”।
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Like our
Facebook Page- http://www.facebook.com/phoenix.punoruday
Bangladesh Government declared their Country or their State is a Democratic & Secular Country and though at the beginning of Shahbaag Movement their Parliamentarian, Ministers and Political leaders participated in the movement now the Government is taking steps against both the agitators Jamat & Shahbaag. I think, under this circumstance, Government of India or any other Government or politcal party can't openly publish any statement as because that would be an International Question. On other side we a large section of Bengali want to support Shahbaag movement and want to do something for them there as like as we did during 1971. Many thing may be done as and when situation would demand. In present state of situation we need to know the actual depth of consciousness of agitating youths and other people too. We want to know if they are ready to fight a long. Thanks to Atanu Acharya and Ramkrishna Bhattachaya.
ReplyDeleteBefore making any comments on the subject a few facts may be evaluated in their perspective :
ReplyDeletehttp://www.defence.pk/forums/military-history-strategy/18420-bangladesh-decorated-hero-pays-tribute-indian-army-1971-a.html
Fact remains that, and also evident in the relevant referral area of the blog - contributions of Indian Army to the fact of Bangladesh Liberation War is yet to be recognized by the political establishment of Bangladesh.even this blog does not mention anything about it. And Bangladesh Political Establishment obviously have their reasons - Politics makes strange companions, and obviously this companionship has extended to the grass root level with supportive logic s to the cause of non recognition.
2. Indian Political Establishment is being diplomatically correct, for reasons.
Having said that it is also fit in the context to admit that Indian Political establishment is also not free from the issue of making strange Companionship, for political reasons generated in the vortex of Vote Politics, which have been stated in this blog as the politics generated by Congress, for their reasons. So the issue even though not without blemishes is a historical fact being perpetrated by the political establishment.
Bangladesh Political establishment is also showing the same symptoms.
Having said that it is also important to believe that there is a vast number of people in both the countries who are not political in the sense that is supportive of the politics of the game. these are the people who are fighting a cause in Bangladesh.
The same people on this side of the International Border should and in fact are agitating on the matter to live up to their own moral standards. and this should intensify, but simultaneously not forgetting facts that question a lot of attitudes fixed in the political arena of both the countries. self evaluation is a good thing - it emancipates people from their cloistered perception of the world around, but that evaluation should take all facts into consideration.
Correction of an error in above statement - "there is a vast number of people in both the Countries who are not political in the sense that is supportive of the politics of the game..."
ReplyDeleteshould be read as
"... in the sense that is they are NOT supportive of the politics of the game..."
khub sattyi kotha dhormo jar jar..rastro sobar...ami mone kori Shahbag andolon desh bidesh joto bangali acchen tader sobai somorthon kora uchit..joto i amre epare thaki..ekta atttmik taan amader madhye sob somoy thake..tai ami sorbantokorone ei andolone k somorthon kori..
ReplyDelete