মহাকাব্য
দেবাশিষ
সেন
পূর্ণিমার
চাঁদ আকাশের গায়ে
লিখে
রেখে যায় অন্ধকারের কবিতা।
গৃহস্তের
উঠানে তখন
নৃত্যরত
জোনাকির দল,
অদূর
শ্মশানে পরে থাকা
আধপোড়া
লাশের মুণ্ড নিয়ে
খেলা
করে কিছু শেয়াল শাবক,
মাঝেমধ্যে
হুক্কা-হুয়া রবে
জানান
দেয় তাদের উপস্থিতির কথা।
মৃদু
কান্নার রোল ভেসে আসে
উত্তুরে
হাওয়ার হাত ধরে,
সঙ্গে
বয়ে আনে বারুদের গন্ধ
আকাশ
থেকে খসে পড়ে
একে একে
কবিতারা।
ঘুম ভাঙা
চোখে অতি সন্তর্পণে
দুটি
কচি হাত আশ্রয় দেয় তাদের
সৃষ্টি
হয় এক অদ্ভূত মহাকাব্য,
যে
মহাকাব্যের গা বেয়ে ঝড়তে থাকে
শোণিত
ধারা –
۞۞۞
আগ্নেয়গিরি
সুমনা
ভট্টাচার্য্য
বিগত
প্রতি জন্মের
প্রতি
বসন্তে
জমেছে
অনেক স্মৃতি
যেন
শুকনো পাতা রাশি রাশি
যাকে
সিক্ত করেছে
মাঝরাতের
ঘুমভাঙ্গা অশ্রু
যখন
কাঁদায়
অপমান
লাঞ্ছনা বেদনা
ফাঁকে-ফোঁকরে
আছে মুক্তো
ঝরেছে
যা হাসির সাথে
ভালবাসার
কথা বলেছিল যখন আদম
অথবা
রাম করেছিল হরধনু ভঙ্গ
বা জহর
ব্রতে যেতে হয়নি যেদিন
সন্মান
রক্ষা করেছিলাম ঝাঁসিতে
সহমরনে
যাইনি যেদিন
প্রবেশ
করেছিলাম বেথুন স্কুলে
সব জমা
ছিল
মিতবাক
অন্তরে
বারবার
সয়েছি চাপ
তবু হইনি
পরাজিত
সেই
আগ্নেয়গিরি আজ মুক্ত
গলগল
করে লাভার স্রোত
ছড়িয়ে
যায়
কলম তুলি
বেয়ে
কাগজে
ইজেলে…………
۞۞۞
স্বপ্ন
নিয়ে
অতনু
আচার্য্য
স্বপ্ন
আছে স্বপ্ন নিয়ে,
স্বপ্ন
দেখি স্বপ্ন দিয়ে।
বাঁচে
স্বপ্ন আপনমনে,
স্বপ্ন
থাকে দিনযাপনে।।
স্বপ্ন
আজ দিচ্ছে যে ডাক,
স্বপ্ন
আবার করে নির্বাক।
স্বপ্নকে
আজ আঁকড়ে ধরি,
স্বপ্ন
নিয়ে দিচ্ছি পাড়ি।।
স্বপ্ন
আজ আমায় জাগায়,
স্বপ্ন
লড়তে, বাঁচতে
শেখায়।
স্বপ্ন
সত্যি করতে হলে,
স্বপ্ন
দেখো বাধা ভুলে।।
۞۞۞
কে তুমি
প্রসূন
ঘোষ
কে তুমি,
তুমি কে?
আমার
জটিল চোখের প্রশ্ন,
ভেঙ্গে
চুরমার হয়ে যায় তোমার হাসিতে।
আমি............!!!
আমি নদী।
দুই
তীরের মাঝে একটুখানি অবকাশ
পেলেই,
যাত্রা
শুরু হয় আমার কল-কল
করে।
দুর্বার
গতিতে বয়ে চলে যাই আমি,
পাহাড়
কে আমি সমুদ্রের সঙ্গে জুড়ি।
আমি
ঝর্ণাও হতে পারি।
এক পাথরের
বন্ধনপাশ শীথিল হতেই,
নির্দ্বিধায়
ঝাঁপিয়ে পড়ি নীচে,
ক্ষুধার্ত
পাথরটার বুকে।
ভেঙ্গে
ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যেতে যেতে,
খুশির
রামধনুতে চারিদিক তুলি ভরিয়ে।
অথবা
আমি সাগর হতেও পারি।
যার বুকে
জেগে আছে তীব্র রোশ,
প্রকাণ্ড,
প্রচন্ড আর মহাশক্তিশালী,
আমার
বিশালতায় আকাশও লজ্জা পায়,
মুখ ঢাকে
আমার কোলে।
তবু
উপকূল আমাকেও পোষ মানায়,
নির্দ্বিধায়
আছড়ে
পড়ে ওর বুকে নিজেকে শান্ত করি।
কে আমি
সেটা নিয়ে,
তোমার
বা কারো কিছু যায় আসে না।
এটা একটা
কথার কথা....... আগে
নিজেকে চেনো,
তবেই
আমাকে জানবে যেনো।
۞۞۞
মুহূর্তরা
সৌম্য
চক্রবর্তী
একে একে
নেমে আসে নীচে, বিস্মৃতির
সিঁড়ি ভেঙ্গে
প্রত্যেক
পদক্ষেপে ছলকে ওঠে নৈশব্দ
একেরপর
এক স্মৃতির পলকে জীবাশ্ম হয়ে
ওঠে বিগত মুহূর্ত
আর
বিক্ষিপ্ত অনুভুতিরা,
ঝরে পড়ে
আবেগ আছড়ে পড়ে ছিটকে আসে গাল
বেয়ে
আর পলাতক
কিছু মুখচোরা শব্দেরা
স্নান
করে আত্মাভিমানে
স্থান
বদলের পালা চলে নিরন্তর
তাই আজ
আমি কবিতায় অকবির নামান্তর।
۞۞۞
এ ভাবেও
ভাল থাকা যায়
শ্রাবনী
ঘোষ
ভাল থেকো
পথ চলা
জেগে
দেখা ফুটপাত
ভাল থেকো
ল্যাম্প পোষ্ট
আলো
জ্বলা দিনরাত।
ভাল থেকো
কুয়াশায়
ভোরবেলা
রাস্তায়
ভাল থেকো
ভালবাসা
সময়টা
সস্তা।
ভাল থেকো
একা থাকা
টেবিলের
আলোতে
ভাল থেকো
বেড়েওঠা
সাদা
ছেড়ে কালোতে।
ভাল থেকো
ছাইদানি
মরা
স্মৃতি জ্বলছে
ভালো
থেকো অ্যালবামে
ছবি কথা
বলছে।
ভাল থেকো
নিহাতেই
অজুহাতে
সূত্র।
۞۞۞
এ নীরবতা...
শুভাশীষ
দও
সারাটা
সন্ধ্যা অঝোরে বৃষ্টি হয়ে
গেছে
এখন গভীর
রাত
প্রচুর
শব্দের পর এখন নীরবতা
কিছুতেই
কাঁদব না-এমন শপথ
করে বসেছিলাম
সে কখন
যে পরাজয় স্বীকার করেছে জানি
না
আমার
দুচোখ অঝোর ধারায় ঝরুক
পড়ুক
তোমার চুলে-ঘাড়ে-অন্তরে
বৃষ্টি
যেমন চুঁইয়ে পরে...
তোমার
চুর্ন কুন্তল বেয়ে
মসৃন
গাল কে ছুঁয়ে
চিবুক
এ এসে স্থির- দ্বিধায়
ভাবি
আলগোছে তুলে নিই তর্জনীতে
ভাবনাটা
থেকেই যায়
কখন যে
সে গর্বিত গ্রীবাকে করে দ্রুত
অতিক্রম
তোমার
উদ্ধত উপত্যকায় যায় হারিয়ে।
তুমি
চলে গেছ অনেকক্ষন।
তোমার
চোখে ও কি ছিল জল...?
সারাটা
সন্ধ্যা সেই কি ঝরলো বৃষ্টি
হয়ে...?
জানি
না-ঝাপসা চোখে
সব এলোমেলো
নিজের
চেতনার পথ এতই পিচ্ছিল
পা ফেলছি
নিজেই টিপে টিপে।
অসহ্য
এ নীরবতা...
তাই ঝরুক
বৃষ্টি- ঝরুক
অক্লান্তভাবে
দিন-রাত-বছর
ধরে
যতদিন
না ধুয়ে মুছে সব হয়ে যায় সাফ
যতদিন
না নতুন সূর্য উঁকি দেয় ভোরে।।
۞۞۞
গানের
ওপারে
ফকির
বাদল বাউল
একলা
বিকেল হঠাৎ যখন স্মৃতির
রোমন্থনে,
দুপুর
বেলার দারুন তাপের, সজল
আলিঙ্গনে।
সন্ধ্যেবেলার
আগামী কারন, ফুল
ফোটাবে আমার কানন,
রাতের
অনির্বানে।
যা কিছু
মোর হারিয়ে যাওয়া, যত
দুঃখে সকল সহা,
রাত্রি
খুঁজে পাবে।
একদিন
ঠিক আসবে জেনো, রাতের
অবসানে।
আলোর
টানে তোমার চোখে, যে
কথা আজ বলছে তারা,
দিনের
সফেন নীল আকাশে, আমিই
জেনো ধ্রুবতারা।
এক আকাশে
একইভাবে, থাকবো
আছি ঠিক তেমনই,
ঋতুর
টানে সময় হারা, যতই
কালো হোক যামিনী।
চোখ
খুললেই আকাশ বুকে, আমায়
পাবে ঠিক এমনই।
তোমার
দুচোখ ক্লান্ত কেন, অবিরাম
বাদলধারা।
তোমার
আকাশ নীল, তবু যে
মালতী সন্ধ্যাতারা।
তোমার
পথের দূয়ার দ্বারে, একলা
সাজা আকুল রবে।
দূর হতে
দূর মিলিয়ে দিয়ে, বাউল
পাগলপারা।
তোমার
শরীর বক্র কেন, মাথা
অবনত।
শুনছো
নাকি জীবন গানে, বৃষ্টি
অনাগত।
চোখের
বাদল অশ্রুধারায়, বৃষ্টি
দিতে পারি,
যদি বল
তোমার জন্যে বৃষ্টি হতে পারি।
প্রবল
জেনো সে বরষায়, আমি
হার মানি।
যত দুঃখ
পাবে তুমি, আমার
পবন বেগে,
সরিয়ে
দেবে বাদল সে মেঘ, শুধু
তোমায় ভালোবেসে।
۞۞۞
সোহাগের
ভাইফোঁটা
রিঙ্কি
নস্কর
কপালে
ফোঁটা নিয়ে ভাইয়েরা
যাচ্ছে
সবাই হেসে,
অনাথ
ছেলেটি দু’ নয়নে
অশ্রুতে
গাল ভাসে।
শঙ্খ
রব উলু ধ্বনি
শোনা
যায় পাড়ায় পাড়ায়...
গতবারের
প্রবল বন্যায়
সে
মা-বাবাকে হারায়।
নীরব
হয়ে দিদির মুখে
চেয়ে
থাকে ভাই,
কেমন
করে দিদি দেবে ফোঁটা
ঘরে যে
কিছুই নাই।
চোখের
জলে হাসি মুখে
বলছে
দিদি ভাই।
ফোঁটার
বদলে সোহাগ দিয়ে
ভরিয়ে
দিলাম তাই।
۞۞۞
ছেলেটা
শম্পা
চ্যাটার্জ্জী
ছোট্ট
ছেলেটা... বয়স দশ
বকুনি
খায় মায়ের কাছে
ঘুম না
ভাঙার জন্য...
খুব ভোরে
বেরোতে হয় তাকে
দুই
কিলোমিটার দূরে
তার
কাজের জায়গায়
মা যাবে
বাবুদের বাড়ি
বাবা
যখন ফেলে রেখে গেছিল
তখন সে
সদ্য হাঁটি হাঁটি পা
আজ সে
চাকুরিজীবি.....
মাস গেলে
পাঁচশ
ছোট্ট
হাতে বারুদ মাখে
কাঠিতে
লাগায়
স্ফুলিঙ্গ
তৈরী হবে বলে,
সারি
দিয়ে আগুন বাক্স
দেশলাই
কারখানায়
স্বাধীনতার
৬৪ বছর পরে......
যে হাতে
খাতা পেন্সিল মানাতো ভালো
সেই হাত
আগুন বানায়
বুকের
মাঝে আগুন নিয়ে....
۞۞۞
চার
দেওয়ালের চারটে দাগ
নির্ঝর
কুণ্ডু
চার
দেওয়ালের চারটে দাগ
মাথার
উপর একটা ছাদ
মধ্যিখানে
মায়া।
হাত
বাড়ালেই ছুঁতে পাওয়া
স্বপ্নগুলোর
কাছে যাওয়া
ভুলে
শরম হায়া।
আকাশ
দেখা জানলা দিয়ে
মেঘের
সাথে পাঙ্গা নিয়ে
এমনি
ভেসে চলা।
আকাশ
ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে
ছাদের
উপর স্বপ্ন ফাঁদে
যায়না
তবু ভোলা।
চার
দেওয়ালের চারটে দাগ
মাথার
উপর একটা ছাদ
মধ্যিখানে
মায়া।
ওখানটাতেই
স্বপ্ন দেখা
ওখানটাতেই
ভালবাসা
ওখানটাতেই
ছায়া।
۞۞۞
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
তিলক
মুখার্জী
অসীম
আকাশের নীচে,
নিদ্রামগ্ন
রাতের কলকাতা
অসংখ্য
ঝিলমিল তারারা
করছে
আকাশে তাদের একার রাজত্ব।
চাঁদের
আলো বিচ্ছুরিত হয়
শহরের
আনাচে কানাচে,
রাতের
পাখি হঠাৎ ডেকে ওঠে-
পাড়ার
গলিতে কুকুরেরা করে দাদাগিরি
দিচ্ছে
রাতে নিশ্ছিদ্র পাহারা......
আসর শেষ
হবার পরে
মাতাল
বাড়ি ফেরে,
আবোল-তাবোল
বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে
সবাই
যখন ঘুমিয়ে পড়ে
রাজপথ
শূন্য হয়- ব্যস্ততা
সঙ্গ হয়
তিলোত্তমা
কলকাতায়।
ফুটপাথে
ভিখিরিরা ঘুমোয়
পুলিশ
পেট্রলিং বেরোয় নিয়ম মাফিক
তখনই
চোখের আড়ালে
স্বর্গের
সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালা।
ঘুমন্ত
বালকের চোখে সে
দিয়ে
যায় স্বপ্ন
তার
আকাঙ্খিত প্রেমের।
স্বপ্ন
ছুঁয়ে যায় সেই নারীর মনে
যে অনুভব
করে পাশে শুয়ে তার প্রবাসী
স্বামী।
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালা স্বপ্নের বীজ বপন
করে সেই যুবকের চোখে
চাকরি
পাবার আশা,
জুয়ায়
হেরে দেউলিয়া হয়ে রাস্তায়
ঘুমোয়
ল্যাংড়া বলাই...
স্বপ্নের
দাতা তাকেও করেনা বঞ্চিত
স্বপ্ন
দেখে সে, হয়েছে
মস্ত বড়লোক!!
স্বপ্ন
দেখে সরকারী হাসপাতালে হতদরিদ্র
এক মানুষ,
সেরে
গেছে তার মারণ রোগ,
ফিরবে
কাল সে বাড়ি।
কিছু
পলকের ছবির মতো
ভেসে
ওঠে স্বপন মনে
একটু
পরেই সে আবার
মুছে
যায় মন থেকে।
সকাল
হলেই কাজের ভাবনা
হাজার
হাজার দুশ্চিন্তা
তারই
অবসরে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
চলে যায়
শহর ছেড়ে।
মানুষের
মনে আশা জাগানো প্রতিশ্রুতি,
তার কাজে
সে দেয়না ফাঁকি।
হোক না
বালক, নারী কিংবা
যুবক কি বলাই
সবাই
অপেক্ষা করে থাকে রাতের
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালার জন্য।
মিথ্যে
হলেও ক্ষতি নেই
নির্ভেজাল
প্রতিশ্রুতির
আশা
বাঁধে বুকের মাঝে
ভবিষ্যতের
সুখ...
সহস্র
কোটি ধন্যবাদ
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালাকে
আবার
দেখার জন্য নীরব রাত্রে
সেই আশার
প্রতিচ্ছবি।।
۞۞۞
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
No comments:
Post a Comment