Monday, 15 October 2012

Nirbachito Golpo 3


গোপন ভালোবাসা
গার্গী দাস


দেবাশিস কয়েকদিন যাবৎ খুব খুশিতেই আছে। ছেলে ডাক্তারি পড়ছে ব্যাঙ্গালোরে। বাড়িতেও আর মনিকা থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত অফিস-এর চাপ। সন্ধ্যের পর বাড়িতে ফিরে কুড়ি বছরের বাসি বউয়ের মুখ দেখতে দেখতে কফি খাওয়া। কোনও কোনদিন পার্টি বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে একটু মদ্যপান। তারপর ডিনার এবং বিছানা। মনোটোনাস লাইফ।

পরদিন সকালে আবার সেই অফিস – মিটিং – ফাইল। যত ওপরে উঠছে, তত কাজের চাপ বাড়ছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা জীবনের সুখ কেড়ে নিয়েছে সেটা ইদানিং সে বুঝতে পারছে।

মনিকাকেও ইদানিং সব সন্ধ্যেতে বাড়িতে পাওয়া যায় না। মোবাইল এ ফোন করলে শোনে বন্ধুদের বাড়ি, না হয় “কিটি পার্টি” এই সবে মেতে আছে।

খুব ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করেছিল দেবাশিস। সেই সময় একদিন অফিস-এ কাজের ফাঁকে নেট সার্ফ করতে করতে, কি মনে হল অর্কুট খুলে বসল। সেখানে প্রোফাইল-এ নিজের সম্পর্কে লিখল, “চল্লিশ বছর বয়েস, ভীষণ একাকী, গল্প করার জন্য সঙ্গিনী খুঁজছি”।

নাম, বয়েস, ঠিকানা কোনও টাই সঠিক দেয় নি। ও জানত, কেউ দেয় ও না। শুনেছে এখানে নাকি ছেলেরা মেয়ের ছদ্মবেশে এসে চ্যাট করে।

প্রোফাইল এ নিজের “বায়োডাটা” প্লেস করার ৩ দিন পর রেসপন্স এল দীপিকার। সে প্রোফাইল এ লিখেছিল, “আমার বয়েস তিরিশ, স্বামী এখানে থাকে না, ছেলে বাইরে পড়ে, আমি গল্প করতে, বন্ধুত্ব পাতাতে চাই”।
সেই থেকে শুরু এদের বন্ধুত্ব। গত ৬ মাস ধরে একটানা সৌম্য (দেবাশিস এই নামেই প্রোফাইল খুলেছিল) আর দীপিকা চ্যাট করে গেছে। অফিস এর লাঞ্চ ব্রেক এ সৌম্য বসে পড়ত ল্যাপটপ এর সামনে। দীপিকাও জেনে গিয়েছিল টাইমটা, তাই তারও জবাব আসতো খুব তাড়াতাড়ি। দুজন দুজনে ভালবাসা, ভাললাগা, নিজেদের জীবনযাপন সব লিখেছে অকপটে। এই ভাবে চলতে চলতে আস্তে আস্তে তারা পার্সোনাল মেল দেওয়া নেওয়া শুরু করল। তাতেও যখন মন মানল না কথা বলার সুখ পেতে দুজনের মোবাইল নাম্বার এক্সচেঞ্জ করল।

কিন্তু এত এগোবার পরেও কেউ কাউকে ফটো পাঠায় নি। সৌম্য গোড়ার দিকে একবার বলেছিল কিন্তু দীপিকা বলেছিল “না”। ফটো নয়। নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হলে নিজেরা দেখা করব। এই কথা শুনে সৌম্য অভিভূত হয়েছিল। দীপিকার কালচার, পারসোনালিটি, ডিগনিটি তে। মনে মনে তুলনা করেছিল যদি মনিকা এমন হত তাহলে আজ ওকে এত লোনলি হতে হত না।

অবশেষে গ্রীন সিগন্যাল এসেছে। আজ সেই দিন, বিকেলে দীপিকা দেখা করার কথা বলেছে তাই সৌম্য আজ খুব খুশি।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে দেবাশিস তাড়াতাড়ি অফিস চলে গেল। সারাদিন কাজের মধ্যেও বার বার ঘড়ির দিকেই চোখ ছিল। বিকেল ৬ টা তে নন্দন এ দেখা করার কথা, সেই অনুযায়ী ৪ টের সময় দেবাশিস অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে পূর্ব নির্ধারিত করা ড্রেস পরে নিল। পরস্পর পরস্পরকে সহজে চেনার জন্য নিজেরা কিছু ড্রেস ঠিক করে নিয়েছিল। সেই অনুযায়ী দেবাশিস মেরুন শার্ট, ক্রিম ট্রাউজার ও কালারড স্পেকস। আর দীপিকা পরে আসার কথা হোয়াইট শালোয়ার কামিজ, মেরুন দুপট্টা আর সানগ্লাস।

টাইমের অনেক আগেই পৌঁছে যায় দেবাশিস। দীপিকা কে ফোন করে জানতে পারে সেও বেরিয়ে পড়েছে কিন্তু রাস্তায় আটকে পড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। দেবাশিস একটা জায়গা দেখে বসে। তারপর ভাবতে থাকে পুরানো কথা গুলো... ভাবতে থাকে দীপিকা দেখতে কীরকম হবে। কি কথা বলবে। এই সব ভাবতে থাকে, হঠাৎ ফোনের শব্দে দেবাশিস নিজের জগতে ফিরে আসে। ফোনটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে ভেসে আসে সেই চেনা সুর, সৌম্য তুমি কোথায় আমি তোমার নির্ধারিত করা জায়গায় এসে গেছি।

দীপিকার আসতে দেরি হওয়াতে প্রায় সন্ধ্যে নেমে এসেছিল। তাই দেবাশিস একটু সরে আলোর নীচে গিয়ে দাঁড়াল। দীপিকা ওকে দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই চলে আসবে। হ্যাঁ। এগিয়ে এল। তবে দীপিকা নয়। দেবাশিস ভুত দেখার মত চমকে উঠল।

কী ব্যাপার ??? তুমি এখানে? একা একা দাঁড়িয়ে কি করছ? কাকে খুঁজছ ?
কাকে খুঁজব? এমনি এসেছি।
অফিস ফেরত বাড়ি না গিয়ে এমনি এমনি একা একা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছ।
কি মুশকিল এই জায়গা টা আমার খুব ভাল লাগে, তাই মাঝে মাঝে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরতে পারলে এখানে ঘুরে যাই। কি পুলিশের মত জেরা করছ, কিন্তু তুমি এখানে কি করছ?? এই রকম সেজেগুজে জম্মেও তো এই রকম ড্রেস পরে বেরুতে দেখি না।
আমি বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে এসেছি। কেন সাজলে কি আমায় খারাপ লাগে?
না তা নয় । তবে ---
তবে কি? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছ এই সব জামা প্যান্ট কবে বানালে? সাদা ছাড়া ত কিছুই পরতে না। চুলেও রঙ করেছ। তারপর মনিকা আর একটু রেগে গিয়ে বলল কয়েক মাস ধরেই দেখছি তুমি অন্য কোনও জগতে বাস করছ। আমি ভেবেছিলাম কাজের চাপ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অন্য কোন ব্যাপার আছে। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে কিছু লুকোচ্ছ। তুমি এখানে নিশ্চয়ই কারোর সাথে দেখা করতে এসেছ। নিশ্চয়ই কোন বান্ধবীর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলে। ডাকো ডাকো। আলাপ করি। দেখো আমি অত মিন মাইন্ডেড নই। আমাদের অন্য কারও সাথে মিশতে ভাল লাগতেই পারে। এতে অন্যায় কিছু ত নেই। প্লিজ মিছে কথা বোলো না।

দেবাশিস একটু ধাতস্থ হল মনে বল পেল, বলল - ডাকব? তুমি মেনে নিতে পারবে তো ?
মনিকা বলল হ্যাঁ ডাকো আমিও তো দেখি সে আমার চেয়ে কতটা আলাদা।
দেবাশিস মোবাইল এ বোতাম টিপল।
বাজছে... বাজছে।

পরোক্ষনে দুজনেই চমকে উঠল। মোবাইল টা বাজছে মণিকারই হাতে।
মানে! এর মানে তুমি দীপিকা! এই কয়েকমাস তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়ে হাবিজাবি কথা লিখেছ। ফোনে দুখের কথা শুনিয়েছ।

আর তুমি? সৌম্য? তোমার বউ থেকেও নেই? তুমি তোমার বউ সম্পর্কে এই সব বলতে পারলে?
তুমি যেন অজস্র সত্যি কথা বলেছ! তোমার স্বামী মানে আমি নাকি দেশেই থাকি না, বছরে ১-২ টো চিঠি লিখি, টাকা পাঠিয়েই খালাস? আমার সাথে দশ বছর কোন সম্পর্ক নেই।’
আর তোমার বয়েস চল্লিশ। কি অভিনয় রে বাবা। গলাটাও নরম সরম করে কথা বলতে যেন কচি খোকা।
হ্যাঁ, তুমি ত তিরিশের ডগডগে খুকি? খুকি খুকি গলা?
মোটেই না আমি যা আমি সেই ভাবেই কথা বলতাম। তুমি নেশায় ছিলে, বুঝতে পারনি।
 
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর দেবাশিস হো হো করে হেঁসে উঠল।
তুমি হাসছ?
হাসব না? হাসছি তোমার করুন অবস্থা দেখে। স্বামীকে ধরে ফেললে “এক্সট্রা মারিটাল অ্যাফেয়ারস এর চার্জ ” এ। আর একি সঙ্গে নিজেও ফেঁসে গেলে একই চার্জে।

মনিকা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে নিজেও হেসে ফেলল। বলল এই সব আমাদের জন্য নয়। ধ্যাত। এত কষ্ট করে বিউটি পার্লার গিয়ে আমার এতসব সাজগোছ ফালতু হয়ে গেল।

দেবাশিস মনিকাকে বলল কিছু ফালতু হয় নি। আজ আমারা এই দিনটাকে দীপিকা আর সৌম্যর ইচ্ছে অনুযায়ী বাঁচব। প্রথমে নন্দনে সিনেমা দেখে, রাতে কোন বড় হোটেলে ডিনার করে, আজ আমরা কোন হোটেলেই থাকব।

۞۞۞



Download and install Avro Keyboard to view the contents.
Mail us to phoenix.punoruday11@gmail.com for pdf version of this Magazine


No comments:

Post a Comment