পাঁচ
তারিখ
রিঙ্কি
নস্কর
স্টেশনে
পা ফেলতেই ম্যাসেজ টোনটা বেজে
উঠে সৌমেনের মোবাইলে।
‘কি রে
কার এস.এম.এস’?
অভি জিজ্ঞাসা করল।
-“একটা
আননোন নাম্বার”।
আননোন
নাম্বারের প্রতি অভির আকর্ষণটা
বহুদিনের, সেই
স্কুলজীবন থেকেই। অচেনা
নাম্বার দেখলেই সোজা ঝাঁপ
দেয় মোবাইলে। উৎসাহের সাথে
বলে ওঠে- “দেখি
দেখি”।
ম্যাসেজটা
দেখার পর তৃষ্ণা মিটল অভির।
উৎসাহের পারদটাকে দ্বিগুণ
করে অভি বলল- ‘একবার
কল করেই দেখ না...’।
আবার
এস.এম.এস।
একই নাম্বার থেকে। পুরো এস.এম.এস
টা পড়ে সৌমেন।
-‘প্রিয়াঙ্কার
ম্যাসেজ’।
-‘কে
প্রিয়াঙ্কা’?
-‘প্রিয়াঙ্কাকে
চিনিস না ! লম্বা
বিনুনি দুলিয়ে দুলিয়ে কলেজে
আসত’।
-‘হ্যাঁ,
এইবার চিনতে পেরেছি’।
-‘মনে
হয় রামুর থেকে নাম্বারটা
নিয়েছে। শুভ নববর্ষ জানাল’।
এরই
মধ্যে লালগোলা প্যাসেঞ্জার
প্লাটফর্মে ঢুকলো। ওরা ট্রেনে
উঠে পড়ল। দুই জনেই যাবে ধর্মতলা
কেনাকাটা করতে। সৌমেনের সাথে
ছিল এ মাসের ‘দেশ’ পত্রিকা।
ওর নিঃসঙ্গতা কাটাবার একমাত্র
সঙ্গী বই। কিন্তু এখন ট্রেনের
মধ্যে শুধুই মোবাইল। চলতে
থাকে প্রিয়াঙ্কার সাথে
এস.এম.এস-এর
বিনিময়। এই ছোট যন্ত্রটার
মাধ্যমে হাজার মাইল দূরত্বে
থাকা দুটি হৃদয় খুব সহজেই
পরস্পরের কাছে চলে আসে নিমেষেই।
সৌমেনের হাত থেকে ‘দেশ’ টা
কেড়ে নেয় অভি। বলে ওঠে ‘তুই
তো পড়ছিস না আমাকে দে’। বইটা
নিয়ে পাতা উল্টাতে থাকে অভি।
কিন্তু নজরটা সৌমেনের ওপর।
ওর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি
দেখতে পায় অভি। মনে মনে বলতে
থাকে, ‘ডালমে কুছ
কালা হে...’। ট্রেনের
সাথে কলকাতার দূরত্ব ক্রমশঃ
কমতে থাকে। ম্যাসেজ দেয়া-নেয়ার
ফলে প্রিয়াঙ্কা জানতে পারে
ধর্মতলা যাবার কথা। সৌমেনের
মায়ের মতো বলে উঠে, ‘সাবধানে
যেও’...। ট্রেন
ঢোকে শিয়ালদহতে।
-‘কি
ব্যাপার প্রিয়াঙ্কার সাথে
কথা বলার সময় তোর মনে এত ফুর্তি
জাগছিল কেন’? অভি
জিজ্ঞেস করল।
সৌমেন
মৃদু হেসে পথ চলতে থাকে।
সাবওয়েতে জনসমুদ্রের ভিড়
ঠেলে ওরা পৌঁছায় বাসস্ট্যান্ডে।
কলেজে
স্বর্গের পরীদের দেখতে ভালোই
লাগে সবার মতো সৌমেনেরও। এইসব
পরীদের পাশে প্রিয়াঙ্কা ফিকে
হয়ে এলেও সৌমেনের কাছে হয়নি।
ভালোই লাগে ওর লম্বা বিনুনির
দুলুনি। ধীরে ধীরে প্রিয়াঙ্কার
মধ্যেই ডুবে যেতে থাকে সৌমেন।
ওরা
ধর্মতলায় এসে নামে। নতুন বছরের
শুরুতেই কলকাতায় জমজমাট
পরিবেশ। চারিদিকে দোকানীরা
নতুন জিনিসের পসরা নিয়ে বসে
আছে। ওরা কি কি কিনবে ঠিক করতে
পারে না।
ম্যাসেজ
এলো, আবার প্রিয়াঙ্কা।
-‘কি কি কিনলে’?
সৌমেন
রিপ্লাই দেয়, ‘ঠিক
করতে পারছি না কি কি কিনব...!
তোমার কি রঙ পছন্দ
গো’?
প্রিয়াঙ্কা-
‘নীল’।
সৌমেনের
মনে হল ভালবাসার সঙ্গে নীল
রঙ-টার খুব ভাব।
দুটো নীল রঙের টি-শার্ট
কিনল সৌমেন। অভির হাতে দুটো
জিনস, দুটো শার্ট।
-‘তুই
হঠাৎ নীল রঙ......।
তোর তো প্রিয় রঙ কালো’। অভি
বলল।
-‘ভালো
লাগল, কিনে নিলাম’।
সৌমেন উত্তর দেয়।
বিগবাজার
থেকে নিউমার্কেট সবই চষে ফেলল
ওরা দুজন। সৌমেন পকেট থেকে
মোবাইল বার করে স্ক্রিনে চোখ
রাখতেই দেখে প্রিয়াঙ্কার
দুটো ম্যাসেজ। ভিড়ের কোলাহলে
ম্যাসেজ টোনই শুনতে পাইনি
সে। ম্যাসেজ দেখার পরই ঝড়ের
গতিতে টাইপ করে-‘সরি,
দেখতে পায়নি। এতো
চেঁচামেচি তে...’।
প্রিয়াঙ্কা
রিপ্লাই দেয়-‘সন্ধ্যে
হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি
ফিরবে’।
সৌমেন-‘ঠিক
আছে, তুমি চিন্তা
করো না’।
ওর প্রতি
অহেতুক কৌতূহলের কারণটা বুঝতে
পারে সৌমেন। আরও বুঝতে পারে
প্রিয়াঙ্কার মনে ও বসন্ত হানা
দিয়েছে।
মার্কেটিং
শেষ। ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরে দুই
বন্ধু। একলা ঘরে বসে টি-শার্টের
দিকে তাকিয়ে থাকে সৌমেন। রাত
তখন ১২টা। খুঁজতে থাকে প্রিয়াঙ্কার
নাম নীল রং-এ।
নীলের মত্ততাতে যখন মেতেছে
সৌমেন, তখনই আসে
প্রিয়াঙ্কার ম্যাসেজ,-‘তোমার
কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে...’?
অযাচিত
এই প্রশ্নে তুবড়ি জ্বলে সৌমেনের
মনে। অল্প সময়ের আলাপ-
পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে
মনের ক্যানভাসে হাজার ছবি
এঁকে ফেলে প্রিয়াঙ্কার।
রিপ্লাই করে-‘ না,
নেই, কেন’?
প্রিয়াঙ্কার প্রশ্নের
কারণটা বুঝে নিতে দেরী করে
না সৌমেন। প্রিয়াঙ্কাকে ওর
মনের কথা বলার জন্য একের পর
এক কথার মালা গাঁথতে থাকে।
রাত বাড়ে...।
প্রিয়াঙ্কার এস.এম.এস-
এর অপেক্ষায় থাকে
সৌমেন। রাতের খাবার কথাও ভুলে
যায় সে। অপেক্ষার কোন ফল না
হওয়ায় বালিশে মাথা গুঁজে শুয়ে
থাকে। একের পর এক প্রশ্নের
জালে নিজেকে জড়াতে থাকে। মনকে
শান্ত করে, কানে
হেডফোন গোঁজে।
-‘আমার
ও পরাণ যাহা চায়’।
নাইট
ল্যাম্পটাও নীল রঙ মেখেছে
আজ। সব মিলে মিশে এক মায়াবী
পরিবেশ তৈরি হয়, সৌমেনের
মনে ও ঘরে। অজান্তেই দু’চোখের
পাতা এক হয় সৌমেনের।
সকালে
ম্যাসেজ টোনেই ঘুম ভাঙে ওর।
প্রিয়াঙ্কার ম্যাসেজ, ‘সরি,
কালকে ম্যাসেজ
ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছিল,
তাই তোমাকে......।
গার্লফ্রেন্ডের ম্যাসেজটা
আমার ভাই পাঠিয়েছিল, ও
খুব দুষ্টু। গতকালকে তোমাকে
আসল কথাটায় বলা হয়নি’।
সৌমেন-‘কি
কথা?... তোমার মনের
কথা আমাকে বলতে পারো’।
প্রিয়াঙ্কা-
‘না না, মনের
কথা নয়। সামনের মাসের পাঁচ
তারিখ আমার বিয়ে। কলেজের সব
বন্ধুদের আসতে বলেছি। তুমিও
আসবে। ভুলে যেও না যেন,
সামনের মাসের পাঁচ
তারিখ’।
সৌমেনের
মনে বাজতে থাকে- ‘তুমি
রবে নীরবে......’।
۞۞۞
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
No comments:
Post a Comment