Monday, 15 October 2012
Nirbachito Golpo 4
পাঁচ
তারিখ
রিঙ্কি
নস্কর
স্টেশনে
পা ফেলতেই ম্যাসেজ টোনটা বেজে
উঠে সৌমেনের মোবাইলে।
‘কি রে
কার এস.এম.এস’?
অভি জিজ্ঞাসা করল।
-“একটা
আননোন নাম্বার”।
আননোন
নাম্বারের প্রতি অভির আকর্ষণটা
বহুদিনের, সেই
স্কুলজীবন থেকেই। অচেনা
নাম্বার দেখলেই সোজা ঝাঁপ
দেয় মোবাইলে। উৎসাহের সাথে
বলে ওঠে- “দেখি
দেখি”।
ম্যাসেজটা
দেখার পর তৃষ্ণা মিটল অভির।
উৎসাহের পারদটাকে দ্বিগুণ
করে অভি বলল- ‘একবার
কল করেই দেখ না...’।
আবার
এস.এম.এস।
একই নাম্বার থেকে। পুরো এস.এম.এস
টা পড়ে সৌমেন।
-‘প্রিয়াঙ্কার
ম্যাসেজ’।
-‘কে
প্রিয়াঙ্কা’?
-‘প্রিয়াঙ্কাকে
চিনিস না ! লম্বা
বিনুনি দুলিয়ে দুলিয়ে কলেজে
আসত’।
-‘হ্যাঁ,
এইবার চিনতে পেরেছি’।
-‘মনে
হয় রামুর থেকে নাম্বারটা
নিয়েছে। শুভ নববর্ষ জানাল’।
এরই
মধ্যে লালগোলা প্যাসেঞ্জার
প্লাটফর্মে ঢুকলো। ওরা ট্রেনে
উঠে পড়ল। দুই জনেই যাবে ধর্মতলা
কেনাকাটা করতে। সৌমেনের সাথে
ছিল এ মাসের ‘দেশ’ পত্রিকা।
ওর নিঃসঙ্গতা কাটাবার একমাত্র
সঙ্গী বই। কিন্তু এখন ট্রেনের
মধ্যে শুধুই মোবাইল। চলতে
থাকে প্রিয়াঙ্কার সাথে
এস.এম.এস-এর
বিনিময়। এই ছোট যন্ত্রটার
মাধ্যমে হাজার মাইল দূরত্বে
থাকা দুটি হৃদয় খুব সহজেই
পরস্পরের কাছে চলে আসে নিমেষেই।
সৌমেনের হাত থেকে ‘দেশ’ টা
কেড়ে নেয় অভি। বলে ওঠে ‘তুই
তো পড়ছিস না আমাকে দে’। বইটা
নিয়ে পাতা উল্টাতে থাকে অভি।
কিন্তু নজরটা সৌমেনের ওপর।
ওর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি
দেখতে পায় অভি। মনে মনে বলতে
থাকে, ‘ডালমে কুছ
কালা হে...’। ট্রেনের
সাথে কলকাতার দূরত্ব ক্রমশঃ
কমতে থাকে। ম্যাসেজ দেয়া-নেয়ার
ফলে প্রিয়াঙ্কা জানতে পারে
ধর্মতলা যাবার কথা। সৌমেনের
মায়ের মতো বলে উঠে, ‘সাবধানে
যেও’...। ট্রেন
ঢোকে শিয়ালদহতে।
-‘কি
ব্যাপার প্রিয়াঙ্কার সাথে
কথা বলার সময় তোর মনে এত ফুর্তি
জাগছিল কেন’? অভি
জিজ্ঞেস করল।
সৌমেন
মৃদু হেসে পথ চলতে থাকে।
সাবওয়েতে জনসমুদ্রের ভিড়
ঠেলে ওরা পৌঁছায় বাসস্ট্যান্ডে।
কলেজে
স্বর্গের পরীদের দেখতে ভালোই
লাগে সবার মতো সৌমেনেরও। এইসব
পরীদের পাশে প্রিয়াঙ্কা ফিকে
হয়ে এলেও সৌমেনের কাছে হয়নি।
ভালোই লাগে ওর লম্বা বিনুনির
দুলুনি। ধীরে ধীরে প্রিয়াঙ্কার
মধ্যেই ডুবে যেতে থাকে সৌমেন।
ওরা
ধর্মতলায় এসে নামে। নতুন বছরের
শুরুতেই কলকাতায় জমজমাট
পরিবেশ। চারিদিকে দোকানীরা
নতুন জিনিসের পসরা নিয়ে বসে
আছে। ওরা কি কি কিনবে ঠিক করতে
পারে না।
ম্যাসেজ
এলো, আবার প্রিয়াঙ্কা।
-‘কি কি কিনলে’?
সৌমেন
রিপ্লাই দেয়, ‘ঠিক
করতে পারছি না কি কি কিনব...!
তোমার কি রঙ পছন্দ
গো’?
প্রিয়াঙ্কা-
‘নীল’।
সৌমেনের
মনে হল ভালবাসার সঙ্গে নীল
রঙ-টার খুব ভাব।
দুটো নীল রঙের টি-শার্ট
কিনল সৌমেন। অভির হাতে দুটো
জিনস, দুটো শার্ট।
-‘তুই
হঠাৎ নীল রঙ......।
তোর তো প্রিয় রঙ কালো’। অভি
বলল।
-‘ভালো
লাগল, কিনে নিলাম’।
সৌমেন উত্তর দেয়।
বিগবাজার
থেকে নিউমার্কেট সবই চষে ফেলল
ওরা দুজন। সৌমেন পকেট থেকে
মোবাইল বার করে স্ক্রিনে চোখ
রাখতেই দেখে প্রিয়াঙ্কার
দুটো ম্যাসেজ। ভিড়ের কোলাহলে
ম্যাসেজ টোনই শুনতে পাইনি
সে। ম্যাসেজ দেখার পরই ঝড়ের
গতিতে টাইপ করে-‘সরি,
দেখতে পায়নি। এতো
চেঁচামেচি তে...’।
প্রিয়াঙ্কা
রিপ্লাই দেয়-‘সন্ধ্যে
হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি
ফিরবে’।
সৌমেন-‘ঠিক
আছে, তুমি চিন্তা
করো না’।
ওর প্রতি
অহেতুক কৌতূহলের কারণটা বুঝতে
পারে সৌমেন। আরও বুঝতে পারে
প্রিয়াঙ্কার মনে ও বসন্ত হানা
দিয়েছে।
মার্কেটিং
শেষ। ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরে দুই
বন্ধু। একলা ঘরে বসে টি-শার্টের
দিকে তাকিয়ে থাকে সৌমেন। রাত
তখন ১২টা। খুঁজতে থাকে প্রিয়াঙ্কার
নাম নীল রং-এ।
নীলের মত্ততাতে যখন মেতেছে
সৌমেন, তখনই আসে
প্রিয়াঙ্কার ম্যাসেজ,-‘তোমার
কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে...’?
অযাচিত
এই প্রশ্নে তুবড়ি জ্বলে সৌমেনের
মনে। অল্প সময়ের আলাপ-
পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে
মনের ক্যানভাসে হাজার ছবি
এঁকে ফেলে প্রিয়াঙ্কার।
রিপ্লাই করে-‘ না,
নেই, কেন’?
প্রিয়াঙ্কার প্রশ্নের
কারণটা বুঝে নিতে দেরী করে
না সৌমেন। প্রিয়াঙ্কাকে ওর
মনের কথা বলার জন্য একের পর
এক কথার মালা গাঁথতে থাকে।
রাত বাড়ে...।
প্রিয়াঙ্কার এস.এম.এস-
এর অপেক্ষায় থাকে
সৌমেন। রাতের খাবার কথাও ভুলে
যায় সে। অপেক্ষার কোন ফল না
হওয়ায় বালিশে মাথা গুঁজে শুয়ে
থাকে। একের পর এক প্রশ্নের
জালে নিজেকে জড়াতে থাকে। মনকে
শান্ত করে, কানে
হেডফোন গোঁজে।
-‘আমার
ও পরাণ যাহা চায়’।
নাইট
ল্যাম্পটাও নীল রঙ মেখেছে
আজ। সব মিলে মিশে এক মায়াবী
পরিবেশ তৈরি হয়, সৌমেনের
মনে ও ঘরে। অজান্তেই দু’চোখের
পাতা এক হয় সৌমেনের।
সকালে
ম্যাসেজ টোনেই ঘুম ভাঙে ওর।
প্রিয়াঙ্কার ম্যাসেজ, ‘সরি,
কালকে ম্যাসেজ
ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছিল,
তাই তোমাকে......।
গার্লফ্রেন্ডের ম্যাসেজটা
আমার ভাই পাঠিয়েছিল, ও
খুব দুষ্টু। গতকালকে তোমাকে
আসল কথাটায় বলা হয়নি’।
সৌমেন-‘কি
কথা?... তোমার মনের
কথা আমাকে বলতে পারো’।
প্রিয়াঙ্কা-
‘না না, মনের
কথা নয়। সামনের মাসের পাঁচ
তারিখ আমার বিয়ে। কলেজের সব
বন্ধুদের আসতে বলেছি। তুমিও
আসবে। ভুলে যেও না যেন,
সামনের মাসের পাঁচ
তারিখ’।
সৌমেনের
মনে বাজতে থাকে- ‘তুমি
রবে নীরবে......’।
۞۞۞
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Nirbachito Golpo 3
গোপন
ভালোবাসা
গার্গী
দাস
দেবাশিস
কয়েকদিন যাবৎ খুব খুশিতেই
আছে। ছেলে ডাক্তারি পড়ছে
ব্যাঙ্গালোরে। বাড়িতেও আর
মনিকা থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যে
পর্যন্ত অফিস-এর
চাপ। সন্ধ্যের পর বাড়িতে ফিরে
কুড়ি বছরের বাসি বউয়ের মুখ
দেখতে দেখতে কফি খাওয়া। কোনও
কোনদিন পার্টি বা বন্ধুবান্ধবদের
সাথে একটু মদ্যপান। তারপর
ডিনার এবং বিছানা। মনোটোনাস
লাইফ।
পরদিন
সকালে আবার সেই অফিস – মিটিং
– ফাইল। যত ওপরে উঠছে, তত
কাজের চাপ বাড়ছে। আর্থিক
স্বচ্ছলতা জীবনের সুখ কেড়ে
নিয়েছে সেটা ইদানিং সে বুঝতে
পারছে।
মনিকাকেও
ইদানিং সব সন্ধ্যেতে বাড়িতে
পাওয়া যায় না। মোবাইল এ ফোন
করলে শোনে বন্ধুদের বাড়ি,
না হয় “কিটি পার্টি”
এই সবে মেতে আছে।
খুব
ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করেছিল
দেবাশিস। সেই সময় একদিন অফিস-এ
কাজের ফাঁকে নেট সার্ফ করতে
করতে, কি মনে হল
অর্কুট খুলে বসল। সেখানে
প্রোফাইল-এ নিজের
সম্পর্কে লিখল, “চল্লিশ
বছর বয়েস, ভীষণ
একাকী, গল্প করার
জন্য সঙ্গিনী খুঁজছি”।
নাম,
বয়েস, ঠিকানা
কোনও টাই সঠিক দেয় নি। ও জানত,
কেউ দেয় ও না। শুনেছে
এখানে নাকি ছেলেরা মেয়ের
ছদ্মবেশে এসে চ্যাট করে।
প্রোফাইল
এ নিজের “বায়োডাটা” প্লেস
করার ৩ দিন পর রেসপন্স এল
দীপিকার। সে প্রোফাইল এ লিখেছিল,
“আমার বয়েস তিরিশ,
স্বামী এখানে থাকে
না, ছেলে বাইরে
পড়ে, আমি গল্প
করতে, বন্ধুত্ব
পাতাতে চাই”।
সেই
থেকে শুরু এদের বন্ধুত্ব।
গত ৬ মাস ধরে একটানা সৌম্য
(দেবাশিস এই নামেই
প্রোফাইল খুলেছিল) আর
দীপিকা চ্যাট করে গেছে। অফিস
এর লাঞ্চ ব্রেক এ সৌম্য বসে
পড়ত ল্যাপটপ এর সামনে। দীপিকাও
জেনে গিয়েছিল টাইমটা, তাই
তারও জবাব আসতো খুব তাড়াতাড়ি।
দুজন দুজনে ভালবাসা, ভাললাগা,
নিজেদের জীবনযাপন
সব লিখেছে অকপটে। এই ভাবে চলতে
চলতে আস্তে আস্তে তারা পার্সোনাল
মেল দেওয়া নেওয়া শুরু করল।
তাতেও যখন মন মানল না কথা বলার
সুখ পেতে দুজনের মোবাইল নাম্বার
এক্সচেঞ্জ করল।
কিন্তু
এত এগোবার পরেও কেউ কাউকে ফটো
পাঠায় নি। সৌম্য গোড়ার দিকে
একবার বলেছিল কিন্তু দীপিকা
বলেছিল “না”। ফটো নয়। নিজেদের
মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হলে নিজেরা
দেখা করব। এই কথা শুনে সৌম্য
অভিভূত হয়েছিল। দীপিকার
কালচার, পারসোনালিটি,
ডিগনিটি তে। মনে
মনে তুলনা করেছিল যদি মনিকা
এমন হত তাহলে আজ ওকে এত লোনলি
হতে হত না।
অবশেষে
গ্রীন সিগন্যাল এসেছে। আজ
সেই দিন, বিকেলে
দীপিকা দেখা করার কথা বলেছে
তাই সৌম্য আজ খুব খুশি।
ব্রেকফাস্ট
শেষ করে দেবাশিস তাড়াতাড়ি
অফিস চলে গেল। সারাদিন কাজের
মধ্যেও বার বার ঘড়ির দিকেই
চোখ ছিল। বিকেল ৬ টা তে নন্দন
এ দেখা করার কথা, সেই
অনুযায়ী ৪ টের সময় দেবাশিস
অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। যাবার
আগে পূর্ব নির্ধারিত করা ড্রেস
পরে নিল। পরস্পর পরস্পরকে
সহজে চেনার জন্য নিজেরা কিছু
ড্রেস ঠিক করে নিয়েছিল। সেই
অনুযায়ী দেবাশিস মেরুন শার্ট,
ক্রিম ট্রাউজার ও
কালারড স্পেকস। আর দীপিকা
পরে আসার কথা হোয়াইট শালোয়ার
কামিজ, মেরুন
দুপট্টা আর সানগ্লাস।
টাইমের
অনেক আগেই পৌঁছে যায় দেবাশিস।
দীপিকা কে ফোন করে জানতে পারে
সেও বেরিয়ে পড়েছে কিন্তু
রাস্তায় আটকে পড়েছে। কিছুক্ষণের
মধ্যেই পৌঁছে যাবে। দেবাশিস
একটা জায়গা দেখে বসে। তারপর
ভাবতে থাকে পুরানো কথা গুলো...
ভাবতে থাকে দীপিকা
দেখতে কীরকম হবে। কি কথা বলবে।
এই সব ভাবতে থাকে, হঠাৎ
ফোনের শব্দে দেবাশিস নিজের
জগতে ফিরে আসে। ফোনটা রিসিভ
করে ওপাশ থেকে ভেসে আসে সেই
চেনা সুর, সৌম্য
তুমি কোথায় আমি তোমার নির্ধারিত
করা জায়গায় এসে গেছি।
দীপিকার
আসতে দেরি হওয়াতে প্রায় সন্ধ্যে
নেমে এসেছিল। তাই দেবাশিস
একটু সরে আলোর নীচে গিয়ে দাঁড়াল।
দীপিকা ওকে দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই
চলে আসবে। হ্যাঁ। এগিয়ে এল।
তবে দীপিকা নয়। দেবাশিস ভুত
দেখার মত চমকে উঠল।
কী
ব্যাপার ??? তুমি
এখানে? একা একা
দাঁড়িয়ে কি করছ? কাকে
খুঁজছ ?
কাকে
খুঁজব? এমনি এসেছি।
অফিস
ফেরত বাড়ি না গিয়ে এমনি এমনি
একা একা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছ।
কি মুশকিল
এই জায়গা টা আমার খুব ভাল লাগে,
তাই মাঝে মাঝে অফিস
থেকে তাড়াতাড়ি বেরতে পারলে
এখানে ঘুরে যাই। কি পুলিশের
মত জেরা করছ, কিন্তু
তুমি এখানে কি করছ?? এই
রকম সেজেগুজে জম্মেও তো এই
রকম ড্রেস পরে বেরুতে দেখি
না।
আমি
বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে
এসেছি। কেন সাজলে কি আমায়
খারাপ লাগে?
না তা
নয় । তবে ---
তবে কি?
নিজের দিকে তাকিয়ে
দেখেছ এই সব জামা প্যান্ট কবে
বানালে? সাদা ছাড়া
ত কিছুই পরতে না। চুলেও রঙ
করেছ। তারপর মনিকা আর একটু
রেগে গিয়ে বলল কয়েক মাস ধরেই
দেখছি তুমি অন্য কোনও জগতে
বাস করছ। আমি ভেবেছিলাম কাজের
চাপ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে
অন্য কোন ব্যাপার আছে। তুমি
নিশ্চয়ই আমাকে কিছু লুকোচ্ছ।
তুমি এখানে নিশ্চয়ই কারোর
সাথে দেখা করতে এসেছ। নিশ্চয়ই
কোন বান্ধবীর জন্য দাঁড়িয়ে
ছিলে। ডাকো ডাকো। আলাপ করি।
দেখো আমি অত মিন মাইন্ডেড নই।
আমাদের অন্য কারও সাথে মিশতে
ভাল লাগতেই পারে। এতে অন্যায়
কিছু ত নেই। প্লিজ মিছে কথা
বোলো না।
দেবাশিস
একটু ধাতস্থ হল মনে বল পেল,
বলল - ডাকব?
তুমি মেনে নিতে পারবে
তো ?
মনিকা
বলল হ্যাঁ ডাকো আমিও তো দেখি
সে আমার চেয়ে কতটা আলাদা।
দেবাশিস
মোবাইল এ বোতাম টিপল।
বাজছে...
বাজছে।
পরোক্ষনে
দুজনেই চমকে উঠল। মোবাইল টা
বাজছে মণিকারই হাতে।
মানে!
এর মানে তুমি দীপিকা!
এই কয়েকমাস তুমি
আমাকে ধোঁকা দিয়ে হাবিজাবি
কথা লিখেছ। ফোনে দুখের কথা
শুনিয়েছ।
আর তুমি?
সৌম্য? তোমার
বউ থেকেও নেই? তুমি
তোমার বউ সম্পর্কে এই সব বলতে
পারলে?
‘তুমি
যেন অজস্র সত্যি কথা বলেছ!
তোমার স্বামী মানে
আমি নাকি দেশেই থাকি না,
বছরে ১-২
টো চিঠি লিখি, টাকা
পাঠিয়েই খালাস? আমার
সাথে দশ বছর কোন সম্পর্ক নেই।’
আর তোমার
বয়েস চল্লিশ। কি অভিনয় রে
বাবা। গলাটাও নরম সরম করে কথা
বলতে যেন কচি খোকা।
হ্যাঁ,
তুমি ত তিরিশের ডগডগে
খুকি? খুকি খুকি
গলা?
মোটেই
না আমি যা আমি সেই ভাবেই কথা
বলতাম। তুমি নেশায় ছিলে,
বুঝতে পারনি।
কিছুক্ষণ
চুপ করে থাকার পর দেবাশিস হো
হো করে হেঁসে উঠল।
তুমি
হাসছ?
হাসব
না? হাসছি তোমার
করুন অবস্থা দেখে। স্বামীকে
ধরে ফেললে “এক্সট্রা মারিটাল
অ্যাফেয়ারস এর চার্জ ” এ। আর
একি সঙ্গে নিজেও ফেঁসে গেলে
একই চার্জে।
মনিকা
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে
নিজেও হেসে ফেলল। বলল এই সব
আমাদের জন্য নয়। ধ্যাত। এত
কষ্ট করে বিউটি পার্লার গিয়ে
আমার এতসব সাজগোছ ফালতু হয়ে
গেল।
দেবাশিস
মনিকাকে বলল কিছু ফালতু হয়
নি। আজ আমারা এই দিনটাকে দীপিকা
আর সৌম্যর ইচ্ছে অনুযায়ী
বাঁচব। প্রথমে নন্দনে সিনেমা
দেখে, রাতে কোন
বড় হোটেলে ডিনার করে, আজ
আমরা কোন হোটেলেই থাকব।
۞۞۞
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Nirbachito Golpo 2
বুড়ি
অতনু
আচার্য্য
- শুভ,
ঘরে আছিস? শুভ...
এই শুভ?
- এইরে!
আবার বুড়িটা ঘরে
এলো।
আমি কোন
রকমে সিগারেট টা নিভিয়ে পড়তে
বসে গেলাম। আমার রুমমেট ও
বন্ধু দীপ দরজাটা খুলে দিল।
- এই দেখ
তোর জন্য কি এনেছি! পাড়ার
উড়ের দোকান থেকে জিলাপি। একদম
গরম গরম ভাজা।
আমি
লাফিয়ে গিয়ে জিলাপির ঠোঙ্গাটা
নিয়ে নিলাম। মিষ্টি আমার খুব
প্রিয়। বাহ! বেশ
দারুণ করেছে তো। দীপ বলল
- ঠাকুমা,
এই তোমার জন্যই বিদেশ
এসেও বেঁচে আছি। তুমি প্রতিদিন
সন্ধ্যায় আমাদের টিফিন খাইয়ে
বাঁচিয়ে রেখেছ।
দীপ টা
সুযোগ পেলেই লোককে তেল মারে
আর কাজ হাসিল করে। নেহাত মিষ্টি
আমার খুব প্রিয়, নাহলে
আমি লাফিয়ে উঠতাম না।
আমরা
দুজনেই মানে আমি আর দীপ থাকি
হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া তে।
কলকাতায় পড়াশোনার উদ্দেশে
আসা। দ্বিতীয় বর্ষের কমার্সের
ছাত্র। বুড়ি, আমাদের
মেসের পাড়ায় থাকেন, বয়স
প্রায় সত্তর বছর। এই মেস এলাকায়
জলের একটু অসুবিধা আছে। খাওয়ার
জল আনতে একটু দূরে পাড়ার মোড়
এ যেতে হয়। তাই হয়ত এই কারনে
এই চত্বরে বাড়ি ভাড়া কম। আমাদেরও
বেশী ভাড়া দিয়ে থাকার সামর্থ্য
নেই। ওই পাড়ার মোড়েই বুড়ির
বাড়ি, একদম টাইম
কলের লাগোয়া। আমরা সকালে বালতি
আর বোতল নিয়ে জল আনতে যাই। উনি
আমাদের হাত থেকে ওগুলো নিয়ে
নেন, আর বলেন ঘুরে
আসো। আমরা এই সুযোগ এ চায়ের
দোকান থেকে ব্রেকফাস্ট করে
চা খেয়ে নিতাম। এসে দেখতাম
আমাদের বালতি বোতল সব ভরা হয়ে
গেছে।
এমনিতে
বুড়ির সবকিছুই ভাল, কিন্তু
এই সন্ধেবেলায় এসে গল্প করাটা
ঠিক পোষায় না। প্রায় ঘণ্টা
দুয়েক বরবাদ করে দেন। পড়াশোনার
এনার্জিটাই চলে যায়। উনি গল্প
শুরু করা মানেই আমরা চুপ হয়ে
যাই। সারাক্ষণ বকবক করতে থাকেন
আর আমার গা জ্বলে যায়। তার উপর
আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে
বাবা বাছা করলে আরও অস্বস্তি
হয়। আমার গায়ে যদি নোংরা
জামাকাপড় দেখেন তাহলেই বলবেন,
“কি বাবা, নতুন
জামা নেই? পরে আমি
একটা কিনে এনে দেব”। এই সেদিন
আমি একটা ছেঁড়া সোয়েটার পরে
ঘরে বসেছিলাম, উনি
বলেন কিনা আমাকে একটা সোয়েটার
বানিয়ে দেবেন! আমার
রুমমেট দীপ এই দেখে মুচকি
মুচকি হাসতে থাকে, আর
আমার মাথা গরম হয়ে যায়।
দীপ রাত
জেগে পড়তে পারে এবং পড়ে। কিন্তু
আমি পারিনা। রাত দশটা বাজলেই
দুনিয়ার যত ঘুম আমার চোখে নেমে
আসে, আমি ঘুমিয়ে
পড়ি। আর এই সময়ে দীপ লাইট
জ্বালিয়ে পড়তে বসে। তাই বুড়ির
বকবকের কোন কুফল ওকে ভোগ করতে
হয় না। ইদানীং কালে বুড়ির আমার
প্রতি ভালোবাসাটা আরও বেড়ে
গেছে। এখন কলেজে যাওয়ার আগেও
একবার এসে উপস্থিত হয়, সঙ্গে
রান্না করা কিছু খাওয়ার। “দেখ
শুভ তোর জন্য কি এনেছি!”।
আরও এক ঘণ্টা বরবাদ।
পরীক্ষা
আর মাস দুয়েক বাকি, কিন্তু
সিলেবাসের অর্ধেকও আমার পড়া
হয়নি। যত দিন যাচ্ছে, তত
চাপ বাড়ছে। প্রায় প্রত্যেকদিন
কলেজের স্যারের কাছ থেকে বকুনি
শুনতে হয়। ভাগ্যিস বড় হয়ে
গেছি, স্কুলে
পড়িনা, নাহলে মারও
খেতে হত। স্কুল থেকে বাড়ি
ফিরতে হত পিঠে দাগ নিয়ে। কিন্তু
ক্লাস ভর্তি ছেলে মেয়েদের
সামনে অপমান করা, সেও
তো আরও বেশী কষ্টকর।
দিনটা
ছিল শনিবার, ক্লাসে
স্যার খুব অপমান করলেন পড়া
ঠিকঠাক বলতে পারিনি বলে। স্যার
আমাকে ক্লাস থেকে বের করে
দিলেন, সবার সামনে
আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। পরের
ক্লাসগুলো না করেই কলেজ থেকে
বেরিয়ে সোজা রুম এ চলে এলাম।
বহুদিন বাড়ি যাওয়া হয় নি। কলেজ
থেকে সোজা বাড়ি যাব বলে ব্যাগ
গোছানোই ছিল। তবে বাড়ি যেতে
ভাল লাগছে না। মন খুব খারাপ,
ক্লাসের অপমানের
কথা বারবার মনে পড়ছে। কিন্তু
বাড়ি যেতেই হবে, সব
টাকা প্রায় শেষ। এমন সময় বুড়ি
এসে হাজির।
- শুভ
এসেছিস? আজ এত
তাড়াতাড়ি? শুভ...?
দরজাটা খোল, দেখ
তোর জন্য কি এনেছি!!
ডাক টা
শুনেই আমার মাথাটা হটাত করে
গরম হয়ে গেল। আমি দরজা না খুলেই
চেঁচিয়ে বললাম – “যাও তো বুড়ি,
আর জ্বালিও না। তোমার
জন্য আমার পড়াশোনা লাটে উঠেছে।
আর কোনদিনও আমাদের জ্বালাতে
আসবে না। যাও, চলে
যাও এখান থেকে”।
এর
কিছুক্ষণ পরেই আমিও বাড়ির
উদ্দেশে রওনা হলাম। ঠিক সময়ে
বাড়িতে পোঁছালাম। এবারে বাড়িতে
এসে আমার মন টা টিকছে না। বারবার
খালি বুড়ির কথাই মনে পড়ছে।
সন্ধ্যে হলেই কানে ভেসে আসছে
– “শুভ বাড়ি আছিস?”।
ইস, বুড়ি কে ওভাবে
না বললেই ভাল হত। হাজার হোক
উনি বয়স্ক মানুষ। আমাদের কোন
ক্ষতি করেন না, সাহায্য
করেন, ভালবাসেন।
খালি আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন।
পুরো রবিবার টা আমার খুব খারাপ
কাটল। সোমবার খুব সকালে উঠেই
কলকাতার গাড়ি ধরলাম। উলুবেড়িয়া
থেকে আমাদের মেস আস্তে ঘণ্টা
দুয়েক সময় লাগে। পুরো রাস্তাটাই
বুড়ির কথা ভাবতে ভাবতে চলে
এলাম। ঠিক করলাম রুমে এসেই
আগে বুড়ির সাথে দেখা করব।
রুমে
এসে দেখি, দীপ
এখনও বাড়ি থেকে ফেরেনি। আমি
রুমে ব্যাগ টা রেখেই বুড়ি কে
দেখতে গেলাম। না, আর
ওনাকে বুড়ি বলব না, ঠাকুমা
ই বলব। ওনার বাড়ি যাওয়ার পথে
আমাদের বাড়িওয়ালার সাথে দেখা।
বাড়িওয়ালা জিজ্ঞেস করলেন-
- কি এখন
এলে?
- হ্যাঁ
- তা এখনই
এসে আবার কোথায় যাচ্ছ?
- যাই,
ঠাকুমার সাথে দেখা
করে আসি।
- সে পরে
যাবে, আগে আমার
ঘরে চল। কিছু কথা আছে।
আমি
বাড়িওয়ালার সাথে উল্টো পথে
হাঁটা শুরু করলাম। বুঝলাম,
ভাড়াটা আগেই দিতে
হবে। এই নিয়ে দু-মাসের
ভাড়া বাকি। মেসে পৌঁছেই আমি
আমার ব্যাগ থেকে দু-মাসের
ভাড়াটা বের করে এনে বাড়িওয়ালার
হাতে দিলাম।
- আরে,
এত তাড়াহুড়ো করার
কি দরকার ছিল? পরেই
দিতে। তুমি তো আর চলে যাচ্ছ
না। তাছাড়া আমি তোমাদের চিনি,
তোমরা আমার নিজের
লোকের মত।
- না,
আপনি আমাকে রাস্তা
থেকে ডেকে আনলেন, তাই
ভাবলাম ভাড়া চাইবেন হয়ত।
- বাবা,
আমি বাড়িওয়ালা হতে
পারি, মহাজন নই।
বলেই
উনি হাসতে লাগলেন।
- সে আমি
আগে দিই বা পরে, দিতে
তো হবেই। নাহ, যাই
এবার, ঠাকুমার
সাথে দেখা করে আসি।
এই বলেই
আমি উঠতে যাব এমন সময় উনি আমাকে
থামিয়ে বললেন- “বুড়ি
মারা গেছেন, রবিবার
সন্ধ্যায়”। আমি যেন আকাশ থেকে
পড়লাম। সেকি? কি
করে হল?
- হাই
প্রেশার এর রোগী ছিলেন। হার্ট
অ্যাটাকে মারা গেছেন।
- বাড়িতে
কেউ ছিল না? কেউ
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় নি?
- তুমি
জানো না? ওনার
বাড়িতে তো কেউ থাকেনা।
এরপর
বাড়িওয়ালা পুরো ঘটনা টা বললেন।
বুড়ি ওই বাড়িতে একাই থাকেন।
ওনার এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েকে
হাতিবাগানের এক ব্যবসায়ী
ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। আর
ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, বউ
কে নিয়ে সাউথ ক্যালকাটা তে
ফ্ল্যাট এ থাকে। দুজনের কেউ
খোঁজ রাখে না। দুজনকেই ফোন
করেছিলাম। রং নম্বর!! নম্বর
এর কোন অস্তিত্ব নেই।
সম্পত্তি
বলতে তো কিছুই ছিল না। খালি
ওই বাড়িটা, তাও
তিনি ওটা পাঠাগার করার জন্য
দান করে গেছেন। ছেলেকে
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন লোকের
বাড়িতে আয়ার কাজ করে, আর
সেই ছেলে বিয়ে করে মা কে একলা
রেখে চলে গেল। বছর দুয়েক আগে,
ওই বাড়ি দান করার
আগে ছেলে ও মেয়ে শেষবারের মত
এসেছিল। সঙ্গে এনেছিল জামাকাপড়,
মিষ্টি, ফল
আরও কতকিছু। ওই বাড়িটা ওদের
নামে করে দিতে বলেছিল। এখানে
একটা ফ্ল্যাটবাড়ি করবে ও বুড়ি
কে একটা ঘর দেওয়া হবে। বুড়ি
বলে, না, এখানে
পাঠাগার হবে। গরিব বাড়ির ছেলে
মেয়েরা এসে এখানে পড়াশোনা
করবে। ব্যাস, সেই
যে ওরা গেল, আর
এলনা। কোন যোগাযোগ ও রাখল না।
আমি
এতক্ষণ হতবাক হয়ে শুনছিলাম,
ঠাকুমা নেই এটাই
বিশ্বাস হচ্ছিল না। বাড়িওয়ালার
ডাকে আবার সজ্ঞানে এলাম।
- শনিবার
সন্ধ্যাবেলায় বুড়ি এখানে
এসেছিল, তোমাকে
দেওয়ার জন্য একটা প্যাকেট
রেখে গেছেন।
বলেই
বাড়িওয়ালা আমার হাতে একটা
কাগজের প্যাকেট ধরিয়ে দেন।
আর বলেন বুড়ি বলেছিল এটা নাকি
তোমার খুব প্রয়োজন।
আমি
প্যাকেট টা খুলেই আর চোখের
জল আটকে রাখতে পারলাম না।
সজোরে কান্না নেমে এলো আমার
চোখ দিয়ে। প্যাকেটের ভিতরে
একটা পলিথিনের ব্যাগ এ অনেকগুলো
নারিকেল নাড়ু মোড়া আছে। আর
একটা হাতে বোনা সোয়েটার।
সোয়েটার টা আস্তে আস্তে ভিজে
গেল চোখের জলে।
খুব
দুর্বল লাগছিল। হাতে-পায়ে
কোন বল পাচ্ছিলাম না। হটাত
করে হাত থেকে প্যাকেট টা পড়ে
গেল। ঘরের মেঝেতে নাড়ুগুলো
ছড়িয়ে গেল। সোয়েটার টা মেঝের
উপর পড়ে রইল। দেখি নীল রঙের
সোয়েটার এর সামনে দিকে হলুদ
রঙের উল দিয়ে বুনে লেখা আছে-
“শুভ...”।
۞۞۞
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Nirbachito Golpo 1
চ্যাটিং
রোহিত
ব্যানার্জী
Rahul : hi… acho ???
Barnali : hmm… ei elam… ki korcho
??
Rahul : ki r korbo.. tomar apekhay
chilam…
Barnali… oh ! tai bujhi ? amar
souvagyo !
………………………………………………
কথা
চলতে থাকলো……একমনে চ্যাটিং
করে যাছেন সুপ্রকাশ সান্যাল
ওরফে রাহুল। হ্যাঁ, এটাই
তাঁর ছদ্মনাম এই সোশ্যাল
নেটওয়ার্কিং সাইটে। প্রায়
দেড়বছর হলো রিটায়্যার করেছেন
চাকরী থেকে, কেন্দ্রীয়
সরকারী কর্মচারী ছিলেন তিনি।
সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন
দীর্ঘ তিরিশটি বছর। সংসারও
তার যথেষ্ট সুখের, দুই
মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের
সুপাত্রে বিয়ে দিয়েছেন,
জামাইরা প্রত্যেকেই
সুপ্রতিষ্ঠিত। বড় মেয়ের এক
ছেলে এবং ছোট মেয়ের এক ছেলে
এক মেয়ে। একমাত্র ছেলে হোটেল
ম্যানেজমেন্ট পাশ করে হায়দ্রাবাদে
কাজ পেয়েছে, বছর
দুই আগে ছেলেরও বিয়ে দিয়েছেন,
ছেলে বউমাকে নিয়ে
হায়দ্রাবাদেই থাকে, মাস
ছয় হলো তাদের একটি পুত্রসন্তানও
হয়েছে। ছেলে মেয়েরা বাবার
যথেস্ট খোঁজ-খবর
রাখে, মেয়েরা কাছে
থাকে বলে মাঝেমধ্যেই চলে আসে;
ছেলে-বউমাও
বছরে অন্তত বার দু-এক
আসবেই।
এত
আনন্দের মধ্যে একটাই শূন্যতা,
সুপ্রকাশবাবুর
সহধর্মিনী গত হয়েছেন প্রায়
বছর ছ’য়েক আগে ক্যন্সারে
আক্রান্ত হয়ে। চাকুরী করাকালীন
কাজের ব্যস্ততায়, ছেলেমেয়েদের
ভবিষ্যত চিন্তায় স্ত্রীর
অভাব খুব একটা অনুভব করেননি
বা বলা যায় অনুভব করার সময়
পাননি, কিন্তু
রিটায়্যারমেন্টের পর সমস্ত
শূন্যতা ঘিরে ধরে তাকে, সময়
আর কাটতে চায়না। বাড়িতে তো
মানুষ বলতে তিনি আর সর্বক্ষনের
চাকর লক্ষন। মেয়েরা যাও বা
আসে তাও সপ্তাহে দুদিন। সময়টাই
সুপ্রকাশবাবুর কাছে একমাত্র
সমস্যা।
ছেলে
বছর খানেক আগে বাবার জন্মদিনে
একটি ল্যাপটপ গিফট্ করেছিলো।
কমপিউটার সম্বন্ধে সম্যক
জ্ঞ্যান কোনোকালেই ছিল না
সুপ্রকাশবাবুর। বড় নাতি পুজোর
ছুটিতে দাদুর কাছে বেরাতে
এসে কিছুটা কাজ চালানোর মতো
শিখিয়ে দিয়ে গেছিলো; তবে
এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে
হাতেখড়ি পেয়েছেন তারই সহকর্মী
রমেনের কাছ থেকে। রমেন মানে
রমেন্দ্রনাথ লাহিড়ী চোখ টিপে
বলেছিলেন-“বুঝলে
প্রকাশ, একটা
আকাউন্ট খুলে চ্যাটিং শুরু
করে দাও, সময় কোথা
দিয়ে কেটে যাবে বুঝতেই পারবেনা,
নামটা শুধু গোপন
রেখো ব্যাস।”
অতঃপর
রমেনের পরামর্শেই সুপ্রকাশবাবু
রাহুলের ছদ্মনাম নিয়ে আকাউন্ট
খুলেছেন। অবশ্য শুধু নাম বদলই
নয়, বয়সটাও দিয়েছেন
৬২-এর বদলে ২৬।
সেই শুরু, আজ প্রায়
ছয় মাস হয়ে গেলো সুপ্রকাশবাবু
ওরফে রাহুল প্রায় সারাদিন
অনলাইন থেকে চ্যাটিং করেন
অনেক অজানা অদেখা মানুষের
সাথে, সত্যি সময়টা
এখন হাজার গুণ বেগে কেটে যায়।
সম্প্রতি
একজনের সাথে আলাপ হয়েছে
সুপ্রকাশের, মেয়েটির
নাম বর্নালী, দক্ষিন
কলকাতায় বাড়ি, সদ্য
গ্র্যাজুএশন করেছে। পরিচয়টা
ধীরে ধীরে এতোটাই ঘনিষ্ট হয়ে
উঠেছে যে এখন বেশির ভাগ সময়ে
দুজনেই কথা বলেন, নানা
অনুভূতি ও চিন্তা শেয়ার করেন
পরস্পর। মেয়েটি এর মধ্যে একদিন
বলেওছে যে সুপ্রকাশের সাথে
কথা বলতেই তার বেশি ভালো লাগে।
সুপ্রকাশের মনেও কেমন একটা
অনুভূতি জাগে, বর্নালীর
সাথে কথা বলতে গেলে তিনি যেন
ভুলে যান তার বাস্তব, তার
তখন মনে হয় সত্যি তিনি ২৬-এর
যুবক রাহুল। আজ প্রায় আড়াই
মাস কথা বলছেন তারা, তবুও
যেন মনের কোথাও লেগে আছে নতুনের
অনুভূতি। বর্নালী সাধারণতঃ
সন্ধের পর থাকে অনলাইন,
সুপ্রকাশ সারাদিন
ধরে আপেক্ষা করেন ওই সময়টার
জন্য। কোনো এক অমোঘ আকর্ষন
খেলা করে তার মনের গভীরে।
কথাটা
অনেকদিন ধরেই বলবেন বলে
ভাবছিলেন, অনেক
উচিত অনুচিত চিন্তা ঘুরছিল
মাথায়, শেষে মনস্থির
করে বলেই ফেললেন আজ। দেখা করার
প্রস্তাবটা শুনে বর্নালী
একটু থমকালো, মনে
হয় কিছু চিন্তাও করছিল কারণ
রিপ্লাই আসতে দেরী হচ্ছে একটু।
সুপ্রকাশ দমবন্ধ করে তাকিয়ে
ছিলেন চ্যাট বক্সটির দিকে,
যদি মেয়েটি রাজী না
হয়? যদি ‘না’ বলে
দেয়? অবশেষে
স্ক্রীনে যখন ‘ok’ কথাটি
ফুটে উঠলো, তখন
প্রায় লাফিয়ে উঠেছিলেন চেয়ার
থেকে! একটা চাপা
উচ্ছাস ও উত্তেজনায় তার মনে
তখন বরফ শীতল হাওয়া বইছে।
কোনোমতে
নিজেকে সংযত করে চ্যাটিং-এ
মন দিলেন আবার, সামনের
রবিবার দেখা করবার দিন ঠিক
হোলো, বিকেল ৫টায়
রবীন্দ্রসরোবর পার্কে।
হাতে
আর মাত্র চার দিন বাকী,
সুপ্রকাশের এখন মনে
হচ্ছে কাজটা কি তিনি ঠিক করলেন?
মেয়েটি এসে যখন
দেখবে, তিনি বছর
২৬-এর রাহুল নয়,
৬২ বছরের সুপ্রকাশ
সান্যাল। তখন তার সম্বন্ধে
কি ভাববে? মনে এই
ভাবনাটা আসার সঙ্গে সঙ্গেই
একটা বিপরীত যুক্তিও নিয়ে
এলেন তিনি, আজকালকার
ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট প্রশস্তমনস্ক,
বয়স বদলানোর মতো
সামান্য ব্যাপারে আশা করা
যায় কিছু মনে করবেনা, আর
তাছাড়া তিনি তো আর মেয়েটির
সঙ্গে কোনো বিশেষ সম্পর্ক
তৈরী করতে যাচ্ছেন না। শুধুমাত্র
যার সাথে এতো কথা বলেছেন,
তাকে একটিবার চোখের
দেখা। মনের মতো যুক্তি পেয়ে
দুর্ভাবনা গুলোকে দূরে সরিয়ে
রাখলেন সুপ্রকাশ সান্যাল।
আজ
রবিবার, সকাল
থেকেই আর তর সইছে না সুপ্রকাশের,
বিকেলের আশায় ঘর-বার
করছেন। আজকে আর অনলাইন ও হন্নি
সকাল থেকে। কাল রাত্রেই শেষ
কথা হয়েছে বর্নালীর সাথে,
দেখা করার ব্যাপারটা
তখনই ফুল এন ফাইনাল সেরে
রেখেছেন। ঠিক বিকেল পাঁচটায়
বর্নালী অপেক্ষা করবে
রবীন্দ্রসরোবরের গেটের সামনে।
দুপুরে
খাওয়ার পর চিরাচরিত ঘুমটাও
হলো না আজ, চাপা
টেনশানে। ঘড়ির কাঁটা চারটে
ছুঁতে না ছুঁতেই তৈরী হয়ে
বেরিয়ে পরলেন বাড়ি থেকে। দমদম
থেকে মেট্রো ধরে রবীন্দ্রসরোবর,
খুব বেশি হলে আধ
ঘন্টা লাগবে যেতে।
কিন্তু
দূর্ভাগ্য! স্টেশনে
পৌছে দেখেন মেট্রোর লাইনে
গোলযোগ, সারাই
চলছে, গাড়ী কিছু
দেরীতে ছাড়বে। অগত্যা স্টেশনেই
অপেক্ষা। মনে চলছে প্রবল
উত্তেজনার ঝড়, হতচ্ছাড়া
ঘড়িটাও আজ রাজধানী এক্সপ্রেসের
সাথে রেস লাগিয়েছে, বর্নালীকে
যদি বলে দেওয়া যেত যে একটু
দেরী হবে, কিন্তু
তারও উপায় নেই, কারণ
নাম্বারটাই যে নেওয়া হয়নি।
ইশ্! কি যে ভুল
করেছেন। মনে মনে নিজেকে ধমকাতে
লাগলেন সুপ্রকাশ।
প্রায়
এক ঘন্টা পরে ছাড়লো মেট্রো,
প্রবল ভিড়ে গুঁতোগুঁতি
করে দাঁড়ানো গেলো কোনোমতে।
বয়সটা সত্যি যেন এখন কম বলে
মনে হচ্ছে! মনে
মনে কৌতূক বোধ করলেন সুপ্রকাশ।
দেখা করতে যাচ্ছেন তার প্রায়
তিনগুন কম বয়সী একটি মেয়ের
সাথে তাও ভূয়ো নামে। আর কিছুক্ষনের
মধ্যেই উন্মোচন হবে তার আসল
পরিচয়।
কৌতূকের
সাথে একটা অপরাধবোধও জাগলো
মনে, তবে সঙ্গে
সঙ্গেই সেটা মন থেকে ঝেড়ে
ফেললেন।
রবীন্দ্রসরোবরের
গেটের কাছে যখন পৌছোলেন সুপ্রকাশ
তখন ঘড়ির কাঁটা ছয়ের ঘর ছুঁইছুঁই
করছে, গেটের কাছে
কাউকে দেখতে না পেয়ে একটু
ঘাবড়ে গেলেন তিনি। দেরী হচ্ছে
দেখে চলে গেলো নাতো? ইশ্!
ফোন নাম্বারটা যদি...
আবার রাগ ধরে গেলো
নিজের ওপর। কি করা যায় এখন?
আচ্ছা পার্কের ভিতরে
নেইতো? তার দেরী
হচ্ছে দেখে হয়তো ভিতরে গিয়ে
বসেছে, সম্ভবতঃ
সেটাই হবে ধরে নিয়ে ভিতরে
ঢুকলেন সুপ্রকাশ। পার্কের
ভিতরটা বেশ ভিড়, কয়েকজন
অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা হইহুল্লোড়
করছে, একদিকে কিছু
বাচ্ছা খেলাধুলা করছে,
কয়েকজন প্রেমিক
যুগল কেও দেখা গেলো নিভৃতে
বসে প্রেম-চারিতায়
মগ্ন। কিন্তু যার সাথে দেখা
করতে এসেছেন সে কোথায়? তাকে
তো দেখা যাচ্ছেনা? অবশ্য
তাকে দেখতে কেমন তাও তো জানেন
না তিনি। এসব ভাবতে ভাবতেই
হাটুঁতে একটা চিনচিন ব্যাথা
অনুভব করলেন সুপ্রকাশ,
মেট্রোয় অনেকক্ষন
দাঁড়িয়ে এসেছেন, এখানেও
অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছেন, তার
ফলেই হয়তো একটু ব্যাথা করছে।
একটু বসে নিলে হতো, কিন্তু
বসবেন কোথায়? বসার
সব জায়গাই যে আগে থেকেই ভর্তি,
এদিক ওদিক তাকিয়ে
একটু কোনের দিকে চন্দ্রমল্লিকা
গাছের তলায় একটি বেঞ্চ দেখতে
পেলেন, একজন বৃদ্ধা
এবং একটি বছর ছয়েকের বাচ্ছা
ছেলে বসে আছে। বাচ্ছাটি ক্রমাগত
বক্বক্ করে যাচ্ছে বৃদ্ধার
সাথে। তাদের পাশে কিছুটা জায়গা
খালি আছে বসার মতো, সেদিকেই
এগিয়ে গেলেন সুপ্রকাশ।
বসে
বসে পার্কের চারপাশের দৃশ্য
দেখতে ভালোই লাগছিলো, বিভিন্ন
বয়সের কত মানুষ এই বিকেলবেলা
পার্কে এসেছেন একটু রিফ্রেশমেন্টের
জন্য। সুপ্রকাশও এক সময় নিয়মিত
বেরোতেন বৈকালিক ভ্রমনে,
কিন্তু এখন এই
ইন্টারনেটের নেশায় পড়ে সেটা
আর হয়ে ওঠেনা। পাশে বসা বাচ্ছাটি
অনেকক্ষন থেকেই বৃদ্ধার
(সম্ভবতঃ তার
ঠাকুমা হবেন) কাছে
বায়না করে যাচ্ছে বাড়ি ফেরার
জন্য, কারণ তার
নাকি টিভিতে কার্টুন দেখার
সময় হয়ে গেছে। সুপ্রকাশের
মনে পড়ে গেল নিজের ছেলেবেলার
কথা। তখন না ছিল টিভি, না
ছিল এই কার্টুন, বিকেলে
মাঠে হইচই করে ফুটবল পেটানো,
তারপর সন্ধে হলে
বাড়িতে ফিরে পড়তে বসে যাওয়া,
এই ছিল তাঁদের রুটিন।
তবে রাত্তিরে খাওয়া-দাওয়ার
পর শুয়ে শুয়ে ঠাকুমার কাছে
গল্প শোনার সময়টা সব থেকে
প্রিয় ছিলো তাঁর।
ছেলেবেলার
স্মৃতিতে অন্যমনস্ক সুপ্রকাশের
খেয়ালই ছিল না, কখন
হালকা সন্ধ্যে নেমে এসেছে
পার্কের ওপর; যখন
খেয়াল হল তখন ঘড়িতে প্রায়
সাতটা বাজতে যায়।
পাশের
বৃদ্ধা এবং তাঁর নাতি উঠে
গেছেন প্রায় মিনিট পনেরো আগে।
যে কাজে এসেছিলেন তা আর হল না।
না হয় কিছুটা দেরীই হয়েছে তার,
তা বলে একটু কি অপেক্ষা
করতে পারতো না বর্নালী?
হতাশ এবং কিছুটা
বিরক্ত সুপ্রকাশ বাড়ি ফিরে
যাওয়াই মনস্থির করলেন, দেখা
করার আর একটা দিন ঠিক করতে হবে
আর এবার অবশ্যই ফোন নাম্বারটা
চেয়ে নিতে হবে, এসব
সাত-পাঁচ ভাবতে
ভাবতেই মেট্রোর দিকে পা বাড়ালেন
সুপ্রকাশ সান্যাল।
বাড়ি
ফিরে লক্ষণকে এক কাপ চা দিতে
বলে শোবার ঘরে চলে এলেন,
এখানেই থাকে তার
কমপিউটার। নেট কানেক্ট করে
প্রথমেই বর্নালীকে একটা ই-মেল
করতে হবে, তার
দেরী হবার কারণ জানানোর সঙ্গে
সঙ্গে কেন একটু অপেক্ষা করলো
না বর্নালী
সেটাও জানতে চাইবেন তিনি,
তার যে কিছুটা রাগ
এবং অভিমান হয়েছে সেটাও বুঝিয়ে
দেবেন ই-মেলে।
চিন্তা করতে করতেই লগ অন্
করলেন অ্যাকাউন্টে।
নিজের
প্রোফাইলে ঢুকেই সবার আগে
যেটা চোখে পড়লো সুপ্রকাশের
সেটা হলো বর্নালীর পাঠানো
একটা ই-মেল,
তার করার আগেই বর্নালী
তাকে ই-মেল পাঠিয়ে
দিয়েছে। সে অনলাইন নেই এখন,
মেল টা করেছে প্রায়
আধ ঘন্টা আগে, পড়তে
শুরু করলেন সুপ্রকাশ।
যথেস্ট
অভিমান নিয়ে মেল টা করেছে
বর্নালী, সঠিক
টাইমেই এসেছিলো সে, কিছুক্ষন
বাইরে অপেক্ষা করার পর ভিতরে
গিয়ে বসেছিলো সে। পার্কের
ভিতরে বামদিকের কোণা করে
জায়গায় যে চন্দ্রমল্লিকা
গাছটি আছে সেখানেই একটি বেঞ্চে
প্রায় সাতটা পর্যন্ত বসে ছিলো
সে। কিন্তু রাহুল আসেনি। যদি
সে নাই আসবে তবে আগে থাকতেই
জানিয়ে দিতে পারতো, এভাবে
তাকে হয়রানি পোহাতে হতোনা।
লেখাগুলি
পড়তে পড়তে সুপ্রকাশের চোখের
সামনে ভেসে উঠছিলো খুব সদ্য
দেখা একটি দৃশ্য, চন্দ্রমল্লিকা
গাছের তলায় এক বৃদ্ধা তার
নাতিকে নিয়ে বসে আছেন কারও
অপেক্ষায়, নাতি
বারবার বাড়ি ফেরার বায়না করলেও
তার মন চাইছেনা উঠতে, মাঝে
মধ্যেই আশেপাশের ভিড়ে খুঁজছিলেন
কাউকে, যাকে
খুঁজছিলেন তাকে দেখতে না পেয়ে
মুখে নেমে আসছে হতাশার ছায়া।
কিছুক্ষন
থম্ মেরে বসে রইলেন সুপ্রকাশ,
লক্ষনের দিয়ে যাওয়া
চা অনেকক্ষন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে,
মাথার ভিতরে তোলপাড়
করছে চিন্তা, অনেককিছুই
এখন পরিস্কার হয়ে উঠেছে তার
কাছে। ধীরে ধীরে ঠোঁটের কোনে
ফুটে উঠলো একচিলতে হাসি,
বেশ হালকা বোধ্
করছেন এখন তিনি, লক্ষনকে
হাঁক পাড়লেন আর এক কাপ চা দিয়ে
যাওয়ার জন্য। সোজা হয়ে বসে
চ্যাটিং-এ মন
দিলেন, বর্নালী
অনলাইন এসে গিয়েছে।
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Nirbachito Kobita
মহাকাব্য
দেবাশিষ
সেন
পূর্ণিমার
চাঁদ আকাশের গায়ে
লিখে
রেখে যায় অন্ধকারের কবিতা।
গৃহস্তের
উঠানে তখন
নৃত্যরত
জোনাকির দল,
অদূর
শ্মশানে পরে থাকা
আধপোড়া
লাশের মুণ্ড নিয়ে
খেলা
করে কিছু শেয়াল শাবক,
মাঝেমধ্যে
হুক্কা-হুয়া রবে
জানান
দেয় তাদের উপস্থিতির কথা।
মৃদু
কান্নার রোল ভেসে আসে
উত্তুরে
হাওয়ার হাত ধরে,
সঙ্গে
বয়ে আনে বারুদের গন্ধ
আকাশ
থেকে খসে পড়ে
একে একে
কবিতারা।
ঘুম ভাঙা
চোখে অতি সন্তর্পণে
দুটি
কচি হাত আশ্রয় দেয় তাদের
সৃষ্টি
হয় এক অদ্ভূত মহাকাব্য,
যে
মহাকাব্যের গা বেয়ে ঝড়তে থাকে
শোণিত
ধারা –
۞۞۞
আগ্নেয়গিরি
সুমনা
ভট্টাচার্য্য
বিগত
প্রতি জন্মের
প্রতি
বসন্তে
জমেছে
অনেক স্মৃতি
যেন
শুকনো পাতা রাশি রাশি
যাকে
সিক্ত করেছে
মাঝরাতের
ঘুমভাঙ্গা অশ্রু
যখন
কাঁদায়
অপমান
লাঞ্ছনা বেদনা
ফাঁকে-ফোঁকরে
আছে মুক্তো
ঝরেছে
যা হাসির সাথে
ভালবাসার
কথা বলেছিল যখন আদম
অথবা
রাম করেছিল হরধনু ভঙ্গ
বা জহর
ব্রতে যেতে হয়নি যেদিন
সন্মান
রক্ষা করেছিলাম ঝাঁসিতে
সহমরনে
যাইনি যেদিন
প্রবেশ
করেছিলাম বেথুন স্কুলে
সব জমা
ছিল
মিতবাক
অন্তরে
বারবার
সয়েছি চাপ
তবু হইনি
পরাজিত
সেই
আগ্নেয়গিরি আজ মুক্ত
গলগল
করে লাভার স্রোত
ছড়িয়ে
যায়
কলম তুলি
বেয়ে
কাগজে
ইজেলে…………
۞۞۞
স্বপ্ন
নিয়ে
অতনু
আচার্য্য
স্বপ্ন
আছে স্বপ্ন নিয়ে,
স্বপ্ন
দেখি স্বপ্ন দিয়ে।
বাঁচে
স্বপ্ন আপনমনে,
স্বপ্ন
থাকে দিনযাপনে।।
স্বপ্ন
আজ দিচ্ছে যে ডাক,
স্বপ্ন
আবার করে নির্বাক।
স্বপ্নকে
আজ আঁকড়ে ধরি,
স্বপ্ন
নিয়ে দিচ্ছি পাড়ি।।
স্বপ্ন
আজ আমায় জাগায়,
স্বপ্ন
লড়তে, বাঁচতে
শেখায়।
স্বপ্ন
সত্যি করতে হলে,
স্বপ্ন
দেখো বাধা ভুলে।।
۞۞۞
কে তুমি
প্রসূন
ঘোষ
কে তুমি,
তুমি কে?
আমার
জটিল চোখের প্রশ্ন,
ভেঙ্গে
চুরমার হয়ে যায় তোমার হাসিতে।
আমি............!!!
আমি নদী।
দুই
তীরের মাঝে একটুখানি অবকাশ
পেলেই,
যাত্রা
শুরু হয় আমার কল-কল
করে।
দুর্বার
গতিতে বয়ে চলে যাই আমি,
পাহাড়
কে আমি সমুদ্রের সঙ্গে জুড়ি।
আমি
ঝর্ণাও হতে পারি।
এক পাথরের
বন্ধনপাশ শীথিল হতেই,
নির্দ্বিধায়
ঝাঁপিয়ে পড়ি নীচে,
ক্ষুধার্ত
পাথরটার বুকে।
ভেঙ্গে
ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যেতে যেতে,
খুশির
রামধনুতে চারিদিক তুলি ভরিয়ে।
অথবা
আমি সাগর হতেও পারি।
যার বুকে
জেগে আছে তীব্র রোশ,
প্রকাণ্ড,
প্রচন্ড আর মহাশক্তিশালী,
আমার
বিশালতায় আকাশও লজ্জা পায়,
মুখ ঢাকে
আমার কোলে।
তবু
উপকূল আমাকেও পোষ মানায়,
নির্দ্বিধায়
আছড়ে
পড়ে ওর বুকে নিজেকে শান্ত করি।
কে আমি
সেটা নিয়ে,
তোমার
বা কারো কিছু যায় আসে না।
এটা একটা
কথার কথা....... আগে
নিজেকে চেনো,
তবেই
আমাকে জানবে যেনো।
۞۞۞
মুহূর্তরা
সৌম্য
চক্রবর্তী
একে একে
নেমে আসে নীচে, বিস্মৃতির
সিঁড়ি ভেঙ্গে
প্রত্যেক
পদক্ষেপে ছলকে ওঠে নৈশব্দ
একেরপর
এক স্মৃতির পলকে জীবাশ্ম হয়ে
ওঠে বিগত মুহূর্ত
আর
বিক্ষিপ্ত অনুভুতিরা,
ঝরে পড়ে
আবেগ আছড়ে পড়ে ছিটকে আসে গাল
বেয়ে
আর পলাতক
কিছু মুখচোরা শব্দেরা
স্নান
করে আত্মাভিমানে
স্থান
বদলের পালা চলে নিরন্তর
তাই আজ
আমি কবিতায় অকবির নামান্তর।
۞۞۞
এ ভাবেও
ভাল থাকা যায়
শ্রাবনী
ঘোষ
ভাল থেকো
পথ চলা
জেগে
দেখা ফুটপাত
ভাল থেকো
ল্যাম্প পোষ্ট
আলো
জ্বলা দিনরাত।
ভাল থেকো
কুয়াশায়
ভোরবেলা
রাস্তায়
ভাল থেকো
ভালবাসা
সময়টা
সস্তা।
ভাল থেকো
একা থাকা
টেবিলের
আলোতে
ভাল থেকো
বেড়েওঠা
সাদা
ছেড়ে কালোতে।
ভাল থেকো
ছাইদানি
মরা
স্মৃতি জ্বলছে
ভালো
থেকো অ্যালবামে
ছবি কথা
বলছে।
ভাল থেকো
নিহাতেই
অজুহাতে
সূত্র।
۞۞۞
এ নীরবতা...
শুভাশীষ
দও
সারাটা
সন্ধ্যা অঝোরে বৃষ্টি হয়ে
গেছে
এখন গভীর
রাত
প্রচুর
শব্দের পর এখন নীরবতা
কিছুতেই
কাঁদব না-এমন শপথ
করে বসেছিলাম
সে কখন
যে পরাজয় স্বীকার করেছে জানি
না
আমার
দুচোখ অঝোর ধারায় ঝরুক
পড়ুক
তোমার চুলে-ঘাড়ে-অন্তরে
বৃষ্টি
যেমন চুঁইয়ে পরে...
তোমার
চুর্ন কুন্তল বেয়ে
মসৃন
গাল কে ছুঁয়ে
চিবুক
এ এসে স্থির- দ্বিধায়
ভাবি
আলগোছে তুলে নিই তর্জনীতে
ভাবনাটা
থেকেই যায়
কখন যে
সে গর্বিত গ্রীবাকে করে দ্রুত
অতিক্রম
তোমার
উদ্ধত উপত্যকায় যায় হারিয়ে।
তুমি
চলে গেছ অনেকক্ষন।
তোমার
চোখে ও কি ছিল জল...?
সারাটা
সন্ধ্যা সেই কি ঝরলো বৃষ্টি
হয়ে...?
জানি
না-ঝাপসা চোখে
সব এলোমেলো
নিজের
চেতনার পথ এতই পিচ্ছিল
পা ফেলছি
নিজেই টিপে টিপে।
অসহ্য
এ নীরবতা...
তাই ঝরুক
বৃষ্টি- ঝরুক
অক্লান্তভাবে
দিন-রাত-বছর
ধরে
যতদিন
না ধুয়ে মুছে সব হয়ে যায় সাফ
যতদিন
না নতুন সূর্য উঁকি দেয় ভোরে।।
۞۞۞
গানের
ওপারে
ফকির
বাদল বাউল
একলা
বিকেল হঠাৎ যখন স্মৃতির
রোমন্থনে,
দুপুর
বেলার দারুন তাপের, সজল
আলিঙ্গনে।
সন্ধ্যেবেলার
আগামী কারন, ফুল
ফোটাবে আমার কানন,
রাতের
অনির্বানে।
যা কিছু
মোর হারিয়ে যাওয়া, যত
দুঃখে সকল সহা,
রাত্রি
খুঁজে পাবে।
একদিন
ঠিক আসবে জেনো, রাতের
অবসানে।
আলোর
টানে তোমার চোখে, যে
কথা আজ বলছে তারা,
দিনের
সফেন নীল আকাশে, আমিই
জেনো ধ্রুবতারা।
এক আকাশে
একইভাবে, থাকবো
আছি ঠিক তেমনই,
ঋতুর
টানে সময় হারা, যতই
কালো হোক যামিনী।
চোখ
খুললেই আকাশ বুকে, আমায়
পাবে ঠিক এমনই।
তোমার
দুচোখ ক্লান্ত কেন, অবিরাম
বাদলধারা।
তোমার
আকাশ নীল, তবু যে
মালতী সন্ধ্যাতারা।
তোমার
পথের দূয়ার দ্বারে, একলা
সাজা আকুল রবে।
দূর হতে
দূর মিলিয়ে দিয়ে, বাউল
পাগলপারা।
তোমার
শরীর বক্র কেন, মাথা
অবনত।
শুনছো
নাকি জীবন গানে, বৃষ্টি
অনাগত।
চোখের
বাদল অশ্রুধারায়, বৃষ্টি
দিতে পারি,
যদি বল
তোমার জন্যে বৃষ্টি হতে পারি।
প্রবল
জেনো সে বরষায়, আমি
হার মানি।
যত দুঃখ
পাবে তুমি, আমার
পবন বেগে,
সরিয়ে
দেবে বাদল সে মেঘ, শুধু
তোমায় ভালোবেসে।
۞۞۞
সোহাগের
ভাইফোঁটা
রিঙ্কি
নস্কর
কপালে
ফোঁটা নিয়ে ভাইয়েরা
যাচ্ছে
সবাই হেসে,
অনাথ
ছেলেটি দু’ নয়নে
অশ্রুতে
গাল ভাসে।
শঙ্খ
রব উলু ধ্বনি
শোনা
যায় পাড়ায় পাড়ায়...
গতবারের
প্রবল বন্যায়
সে
মা-বাবাকে হারায়।
নীরব
হয়ে দিদির মুখে
চেয়ে
থাকে ভাই,
কেমন
করে দিদি দেবে ফোঁটা
ঘরে যে
কিছুই নাই।
চোখের
জলে হাসি মুখে
বলছে
দিদি ভাই।
ফোঁটার
বদলে সোহাগ দিয়ে
ভরিয়ে
দিলাম তাই।
۞۞۞
ছেলেটা
শম্পা
চ্যাটার্জ্জী
ছোট্ট
ছেলেটা... বয়স দশ
বকুনি
খায় মায়ের কাছে
ঘুম না
ভাঙার জন্য...
খুব ভোরে
বেরোতে হয় তাকে
দুই
কিলোমিটার দূরে
তার
কাজের জায়গায়
মা যাবে
বাবুদের বাড়ি
বাবা
যখন ফেলে রেখে গেছিল
তখন সে
সদ্য হাঁটি হাঁটি পা
আজ সে
চাকুরিজীবি.....
মাস গেলে
পাঁচশ
ছোট্ট
হাতে বারুদ মাখে
কাঠিতে
লাগায়
স্ফুলিঙ্গ
তৈরী হবে বলে,
সারি
দিয়ে আগুন বাক্স
দেশলাই
কারখানায়
স্বাধীনতার
৬৪ বছর পরে......
যে হাতে
খাতা পেন্সিল মানাতো ভালো
সেই হাত
আগুন বানায়
বুকের
মাঝে আগুন নিয়ে....
۞۞۞
চার
দেওয়ালের চারটে দাগ
নির্ঝর
কুণ্ডু
চার
দেওয়ালের চারটে দাগ
মাথার
উপর একটা ছাদ
মধ্যিখানে
মায়া।
হাত
বাড়ালেই ছুঁতে পাওয়া
স্বপ্নগুলোর
কাছে যাওয়া
ভুলে
শরম হায়া।
আকাশ
দেখা জানলা দিয়ে
মেঘের
সাথে পাঙ্গা নিয়ে
এমনি
ভেসে চলা।
আকাশ
ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে
ছাদের
উপর স্বপ্ন ফাঁদে
যায়না
তবু ভোলা।
চার
দেওয়ালের চারটে দাগ
মাথার
উপর একটা ছাদ
মধ্যিখানে
মায়া।
ওখানটাতেই
স্বপ্ন দেখা
ওখানটাতেই
ভালবাসা
ওখানটাতেই
ছায়া।
۞۞۞
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
তিলক
মুখার্জী
অসীম
আকাশের নীচে,
নিদ্রামগ্ন
রাতের কলকাতা
অসংখ্য
ঝিলমিল তারারা
করছে
আকাশে তাদের একার রাজত্ব।
চাঁদের
আলো বিচ্ছুরিত হয়
শহরের
আনাচে কানাচে,
রাতের
পাখি হঠাৎ ডেকে ওঠে-
পাড়ার
গলিতে কুকুরেরা করে দাদাগিরি
দিচ্ছে
রাতে নিশ্ছিদ্র পাহারা......
আসর শেষ
হবার পরে
মাতাল
বাড়ি ফেরে,
আবোল-তাবোল
বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে
সবাই
যখন ঘুমিয়ে পড়ে
রাজপথ
শূন্য হয়- ব্যস্ততা
সঙ্গ হয়
তিলোত্তমা
কলকাতায়।
ফুটপাথে
ভিখিরিরা ঘুমোয়
পুলিশ
পেট্রলিং বেরোয় নিয়ম মাফিক
তখনই
চোখের আড়ালে
স্বর্গের
সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালা।
ঘুমন্ত
বালকের চোখে সে
দিয়ে
যায় স্বপ্ন
তার
আকাঙ্খিত প্রেমের।
স্বপ্ন
ছুঁয়ে যায় সেই নারীর মনে
যে অনুভব
করে পাশে শুয়ে তার প্রবাসী
স্বামী।
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালা স্বপ্নের বীজ বপন
করে সেই যুবকের চোখে
চাকরি
পাবার আশা,
জুয়ায়
হেরে দেউলিয়া হয়ে রাস্তায়
ঘুমোয়
ল্যাংড়া বলাই...
স্বপ্নের
দাতা তাকেও করেনা বঞ্চিত
স্বপ্ন
দেখে সে, হয়েছে
মস্ত বড়লোক!!
স্বপ্ন
দেখে সরকারী হাসপাতালে হতদরিদ্র
এক মানুষ,
সেরে
গেছে তার মারণ রোগ,
ফিরবে
কাল সে বাড়ি।
কিছু
পলকের ছবির মতো
ভেসে
ওঠে স্বপন মনে
একটু
পরেই সে আবার
মুছে
যায় মন থেকে।
সকাল
হলেই কাজের ভাবনা
হাজার
হাজার দুশ্চিন্তা
তারই
অবসরে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
চলে যায়
শহর ছেড়ে।
মানুষের
মনে আশা জাগানো প্রতিশ্রুতি,
তার কাজে
সে দেয়না ফাঁকি।
হোক না
বালক, নারী কিংবা
যুবক কি বলাই
সবাই
অপেক্ষা করে থাকে রাতের
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালার জন্য।
মিথ্যে
হলেও ক্ষতি নেই
নির্ভেজাল
প্রতিশ্রুতির
আশা
বাঁধে বুকের মাঝে
ভবিষ্যতের
সুখ...
সহস্র
কোটি ধন্যবাদ
স্বপ্নের
ফেরিওয়ালাকে
আবার
দেখার জন্য নীরব রাত্রে
সেই আশার
প্রতিচ্ছবি।।
۞۞۞
Download and
install Avro Keyboard to view the contents.
Subscribe to:
Posts (Atom)